স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় পুলিশ সদস্যসহ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তিনজন। মেহেরপুরে আক্রান্ত হয়েছেন এক ব্যবসায়ী। ঝিনাইদহে নতুন করে আরও ৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাব থেকে পাঠানো রিপোর্টে এ তথ্য পাওয়া গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলার সিভিল সার্জন।
চুয়াডাঙ্গায় নতুন করে পুলিশসদস্যসহ ৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১৪৭ জনে। ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৮৯ জন এবং মারা গেছেন একজন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টায় সিভিল সার্জন কার্যালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেন। সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব থেকে গত ৪৮ ঘণ্টায় ৬৫ জনের নমুনার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৩ জনের করোনা পজেটিভ এসেছে। আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে আলমডাঙ্গা উপজেলার ১ জন, দামুড়হুদা উপজেলার ১ জন পুলিশ সদস্য ও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার একজন। নতুন আক্রান্তদের হোম আইসোলেশন ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। জেলায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত সদর উপজেলায়। যেখানে ৫১ জনের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৪১ জনই সুস্থ হয়েছেন আর মারা গেছে একজন। আলমডাঙ্গায় আক্রান্ত ৪৩ জনের মধ্যে সুস্থ ২৭ জন, দামুড়হুদায় ৪১ জন আক্রান্তে ইতোমধ্যেই ১৮ জন সুস্থ হয়েছেন। আর জীবননগর উপজেলায় করোনার শিকার ১২ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৩ জন। গত ১৯ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন আলমডাঙ্গা উপজেলার ইতালি ফেরত এক যুবক। সিভিল সার্জন এএসএম মারুফ হাসান বলেন, করোনা মোকাবিলায় ঘর থেকে বের না হওয়ায় সব থেকে উত্তম। এরপরও জরুরি প্রয়োজনে বের হলে অবশ্যই মুখে মাস্ক পরে বের হতে হবে এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
মেহেরপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুরে এক ব্যবসায়ী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। মঙ্গলবার রাত ১০টায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন ডা. মো. নাসির উদ্দীন। আক্রান্ত ওই ব্যক্তির বাড়ি সদর উপজেলার গভীপুর গ্রামে। সিভিল সার্জন ডা. মো. নাসির উদ্দীন জানান, ২০ জনের নমুনা কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হলে সেখান থেকে একজনের করোনা পজেটিভ বলে নিশ্চিত করে। তিনি আরো বলেন, করোনা আক্রান্ত ব্যাক্তর বাড়িসহ পার্শবর্তী কয়েকটি বাড়ি লকডাউন করা হবে। তিনি সকলকে মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান। এ পর্যন্ত মেহেরপুর জেলায় একহাজার ৪শ’ ২৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলে ৩৫ জনের করোনায় শনাক্ত হয়। এর মধ্যে দুজনের মৃত্যু ও ১০ জন সুস্থ হয়েছেন। বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা ২৩ জন।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহ জেলায় বাড়ি এ পর্যন্ত এমন চার জন ব্যক্তি করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন। এর মধ্যে আপন দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয় ঢাকায়। তাদের বাড়ি হরিণাকুন্ডু উপজেলার হরিশপুর গ্রামে। এই গ্রামের মহিউদ্দীন মোল্লার ছেলে বাংলাদেশ বিমানের জুনিয়র টেকনিশিয়ান জয়নুল আবেদীন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করার পর গত ৬ জুন হরিশপুর গ্রামে তার দাফন করা হয়। ১০ দিন পর তার আরেক ভাই ঢাকা মহানগরীর গুলশান উদয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির ঢাকা মহানগরের সভাপতি খয়বর আলী করোনা আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার ভোরে ইন্তেকাল করেন। গত ৭ জুন মারা যান শৈলকুপার কবিরপুর গ্রামের গোপাল কৃষ্ণ সাহা। মৃত্যুর ৫ দিন পর তার করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। সর্বশেষ মৃত্যুর ৩ দিন পর ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণকারী ব্যাংকার ফয়েজ উদ্দিনের করোনা পজেটিভ এসেছে। কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. সুলতান আহমেদ জানান, গত ১৩ জুন করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যান ফয়েজ উদ্দীন। মৃত্যুর একদিন আগে তার নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। এরপর তার বাড়িটি লকডাউন ঘোষণা করে উপজেলা প্রশাসন। এছাড়া তার পরিবার ও দাফন কাজে অংশ নেয়া সদস্যদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। ওই ব্যাংক কর্মকর্তা কালীগঞ্জ উপজেলার কুল্যাপাড়া গ্রামের হেদায়েত মোল্লার ছেলে। মারা যাওয়ার তিন দিন আগে ঢাকা থেকে সর্দি, কাশি ও শ^াসকষ্ট নিয়ে বাড়িতে আসেন। এরপর গত শুক্রবার গভীর রাতে তিনি মারা যান। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করতেন। এদিকে ঝিনাইদহে নতুন করে আরও ৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম। তিনি জানান, ঝিনাইদহে মঙ্গলবার নতুন ৪৭টি নমুনার রিপোর্ট এসেছে। যার মধ্যে ৫টি নমুনার রিপোর্ট পজেটিভ। আক্রান্তদের মধ্যে কালীগঞ্জের ৪ ও মহেশপুরের ১ জন রয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট ১৩৬৭ টি নমুনার রিপোর্টে ১০৪ জন করোনায় আক্রান্ত হলেন। যার মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৪৩ জন। এই জেলার বাসিন্দা হিসেবে ৪ জনের মধ্যে দুইজন ঢাকায় ও দুইজন ঝিনাইদহে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলো।