আফজালুল হক: মিঠু ও আনন্দ দুই বন্ধু এক মোটরসাইকেলযোগে দ্রুতগতিতে হেলেদুলে মহাসড়কে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। এই ঘোরাঘুরিই যে কাল হবে কে জানতো? যাত্রীবাহী বাস ওভারটেক করার পর দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। একটি মোটরসাইকেল পাশের ইজিবাইকে ধাক্কা লাগে। এতে দুই মোটরসাইকেলে থাকা ৪ জনসহ ইজিবাইক চালক আহত হয়। স্থানীয়দের সহযোগিতায় চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা আহত পাঁচজনকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক দুই বন্ধুকে মৃত ঘোষণা করেন। এর দুই ঘন্টা পর অপর মোটরসাইকেলের এক আরোহী চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যান। নিহতরা হলেন চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার নূরনগর কলোনিপাড়ার সিরাজুল ইসলামের ছেলে টুনু হোসেন ওরফে আনন্দ (২২), ফার্মপাড়ার রিকাত আলীর ছেলে মিঠু হোসেন (৩০) এবং সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার মনোরঞ্জন হালদারের ছেলে মুক্তা হালদার (২৮)। আহত নাম রনি বিশ্বাস (৩৫) রাজশাহীর বাগমারা থানার মোহনপুর গ্রামের আলাউদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে। নিহত মুক্তা ও আহত রনি এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যালের কর্মরত ছিলেন। আহত একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনাটি গতকাল শনিবার দুপুর ১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ মহাসড়কে জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সামনে ঘটে। দুই বন্ধুসহ তিনজনের মৃত্যুর খবরে সদর হাসপাতাল চত্বরে নেমে আসে শোকের ছায়া।
পরিবার ও স্থানীয়রা জানায়, গতকাল দুপুরে আনন্দের ভাই জনির মোটরসাইকেল নিয়ে আনন্দ ও তার বন্ধু মিঠু ঘুরতে বের হয়। মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন আনন্দে। জাফরপুর থেকে চুয়াডাঙ্গা দিকে আসছিল তারা। এ সময় মোটরসাইকেলটি দ্রুতগতিতে হেলেদুলে চালিয়ে আসছিলেন তারা। যাত্রীবাহী বাস ওভারটেক করার পর জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের নিকট পৌঁছুলে বিপরীত দিক থেকে আসা এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিনিধি মুক্তা হালদার ও রনি বিশ্বাসের মোটরসাইকেলের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে আনন্দের মোটরসাইকেলটি ছিটকে চলন্ত ইজিবাইকে ধাক্কা লাগে। এতে দুই মোটরসাইকেলের থাকা চারজনসহ ইজিবাইক চালক আহত হয়। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা তাদেরকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে আনন্দ ও মিঠুকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বিকেল ৩টার দিকে মুক্তা হালদার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড কমিশনার শেফালী খাতুন বলেন, আনন্দ ও মিঠু ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। মর্মান্তিক ঘটনায় দুজনেই চলে গেলো। বড় ভাইয়ের মোটরসাইকেল নিয়ে আনন্দ তার বন্ধুকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছিলো। বাড়ি ফেরা হলো না আর। লাশ হয়ে ফিরলো। বাবার চায়ের দোকান দেখাশোনার কাজ করতো আনন্দ। এখনো বিয়ে হয়নি। বাদ এশা জানাজা শেষে জান্নাতুল মওলা কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
অপরদিকে মিঠুর বছর দুই আগে বিয়ে হয়। স্ত্রী ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আর ২/৩ মাস পরই অনাগত সন্তানের মুখ দেখতেন তিনি। তার আগেই পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিলো। মিঠুও তার বাবার ফার্নিচার ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। গতকাল রাত ১১টার দিকে জানাজা শেষে জান্নাতুল মওলা কবরস্থানে মিঠুর মরদেহ দাফন সম্পন্ন করা হয়।
সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দুপুরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা পাঁচজন আহতকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তাৎক্ষণিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আনন্দ ও মিঠুকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ইজিবাইক চালককে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয়। মুক্তা হালদার ও রনি বিশ্বাসকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো পরামর্শ দেয়া হয়েছিলো। ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতিকালে মুক্তা হালদার চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যায়। সন্ধ্যার আগে রনিকে নিয়ে ঢাকা উদ্দেশে রওনা দিয়েছে পরিবারের সদস্যরা।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সোহরাব হোসেন বলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দুজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। হাসপাতালে আসার আগেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এর দুই ঘন্টা পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যু হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে। আহত দুজনের মধ্যে একজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয় এবং অপরজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় রেফার করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি মাহবুবুর রহমান বলেন, দ্রুতগতিতে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষের পর ইজিবাইকে ধাক্কা লাগে। এতে তিনজন নিহত হয়েছেন। দুইপক্ষের পরিবারের কোন অভিযোগ না থাকায় মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
Very sad news