স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় পুলিশের বাধায় কেন্দ্র ঘোষিত গণমিছিল কর্মসূচি পালন করতে পারেনি বিএনপি। গতকাল শনিবার বেলা ৩টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মিছিলটি বের হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু মিছিল শুরুর আগে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. শরীফুজ্জামান শরীফসহ বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ৮ নেতাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এতে নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে প্রেসক্লাব থেকে সাহিত্য পরিষদ পর্যন্ত পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ। গ্রেফতার নেতারা হলেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. শরীফুজ্জামান শরীফ, সদস্য আবু বকর সিদ্দিক, আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক রোকন, আইলহাস ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. আবু হানিফ, জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রাজিব খান, জেলা ছাত্রদলের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ইমরান হোসেন, পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক কৌশিক আহমেদ ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আরমান খান।
এদিকে দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে তীব্র নিন্দ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবুসহ উপজেলা ও পৌর বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও চুয়াডাঙ্গার ডিঙ্গেদহে ইউনিয়ন বিএনপি ও লোকনাথপুরে দর্শনা পৌর বিএনপি উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এ সময় গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়।
চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ৪ ডিসেম্বর সদর থানা-পুলিশের করা নাশকতা মামলায় ৭জন এবং নিবারণমূলক মামলায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের সন্ধ্যায় ৭ জনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে গণমিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এ সময় কোনো কারণ ছাড়াই পুলিশ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিবসহ ৮জনকে গ্রেফতার করে।
দলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান ওরফে বাবু খান। তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে আসছি। পুলিশের এই হটকারী সিদ্ধান্ত শান্তিপূর্ণ রাজনীতির অন্তরায়।’ তিনি জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. শরীফুজ্জামান শরীফসহ সকল রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তি ও গণগ্রেফতার অনতিবিলম্বে বন্ধের দাবি করে বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপিড়নে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। নিশ্চয় এটা দীর্ঘস্থায়ী কোনো শাসন ব্যবস্থা হতে পারে না। এর আগে ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গা সদর থানার এসআই শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ৩৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১০০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এ মামলায় বিএনপি, ছাত্রদলসহ সহযোগী সংগঠনের ১১ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। তারা বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে।
এদিকে, উপজেলা ও পৌর বিএনপির পক্ষ থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান লিপ্টন, চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপির সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম মনি, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক পল্টু, আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আব্দুল জব্বার বাবলু, আলমডাঙ্গা পৌর বিএনপির সভাপতি মো. আজিজুর রহমান পিন্টু, সাধারণ সম্পাদক মো. জিল্লুর রহমান ওল্টু, দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান মনির ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল হাসান তনু। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানিয়েছেন জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি এম জেনারেল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সাবু তরফদার, জেলা মহিলা দলের সভাপতি রউফুন নাহার রিনা, সাধারণ সম্পাদক জাহানারা বেগম, জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক মোকাররম হোসেন, সদস্য সচিব তবারক হোসেন চেয়ারম্যান, জেলা মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক আবু বকর সিদ্দিক বকুল, সিনিয়র যুগ্মআহ্বায়ক কামরুজ্জামান বাবলু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সফিকুল ইসলাম পিটু, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রশীদ ঝন্টু, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো. শাহাজাহান খাঁন, সাধারণ সম্পাদক মোমিন মালিতা, জেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক সেলিমুল হাবিব সেলিম ও জেলা ওলামা দলের সদস্য সচিব মো. আনোয়ার হোসেন।
এদিকে, নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে দর্শনা পৌর বিএনপি, শংকরচন্দ্র ও কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল। দর্শনা পৌর বিএনপি গতকাল শনিবার বিকেলে লোকনাথপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে মিছিলটি বের হয়ে হাইরোডে প্রদক্ষিণ করে। মিছিলে নেতৃত্ব দেন জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য হাবিবুর রহমান বুলেট, পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাহারুল ইসলাম মাস্টার ও পৌর বিএনপি নেতা মো. মশিউর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পৌর বিএনপির সমন্বয় টিমের সদস্য রেজাউল ইসলাম, লুৎফর রহমান, থানা যুবদলের আহবায়ক লিটন, পৌর যুবদলের আহবায়ক ফারুক হোসেন ও কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব পলাশ আহমেদ।
অপরদিকে, অবৈধ গ্রেফতারের প্রতিবাদে শংকরচন্দ্র ও কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীরা ডিঙ্গেদহ হাইওয়ে তেলপাম্পের সামনে থেকে মিছিল বের করে। মিছিলে নেতৃত্ব দেন শংকরচন্দ্র ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি লিটন শেখ টিটন মেম্বার ও কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. রবিউল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন শংকরচন্দ্র ইউনিয়ন সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস পচা, যুবদল নেতা টোকন, আশরাফুল, কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্মসম্পাদক আলাউদ্দিন আলী আলা, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আব্দুর রহিম ও যুবদল নেতা হাসিবুল ইসলাম। বিক্ষোভ মিছিলে বিএনপি নেতা শরীফসহ নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে সেø¬াগান দেন।
দলীয় একাধিক সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. শরীফুজ্জামানসহ জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বেলা আড়াইটা থেকে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের আশপাশে জড়ো হতে থাকেন। পৌনে তিনটার দিকে সদর থানার ওসি মাহাব্বুর রহমানের নেতৃত্বে সদর থানা-পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা প্রেসক্লাবের সামনে পৌঁছান। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বিএনপির নেতাদের বলা হয় সড়কে না উঠে বরাবরের মতো সাহিত্য পরিষদ চত্বরে কর্মসূচি পালন করতে। কিন্তু বিএনপির নেতারা পুলিশের কথা উপেক্ষা করে ঘোষণা দেন, সড়কে গণমিছিল করবেন। এরপর পুলিশ প্রেসক্লাবের সামনে ও আশপাশ এলাকা থেকে ৬জন ও চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের সামনে থেকে আরও দুজনকে গ্রেফতার করে। পুলিশ ৮জনকে গ্রেফতারের পর গণমিছিলে যোগ দিতে আসা নেতা-কর্মীরা ছোটাছুটি করে পালাতে থাকেন। এরপর পুরো এলাকা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। গভীর রাত পর্যন্ত শহরে পুলিশের টহল অহব্যাহত রয়েছে।