স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগতদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত, করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় আইসোলেশন বেড প্রস্তুত, চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পিপিই-মাস্ক বিতরণ, করোনা আক্রান্ত রোগী পরিবহন, চিকিৎসা ও নমুনা সংগ্রহের জন্য অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া মানবিক সহায়তা হিসেবে বরাদ্দপ্রাপ্ত ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন কর্তৃক করোনা সহায়তা তহবিল গঠন, জনসমাবেশ বন্ধকরণ, বাজার মনিটরিং এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার লক্ষ্যে নিয়মিত মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে।
গতকাল সোমবার চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে নিয়ে জানানো হয়েছে, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় চুয়াডাঙ্গা জেলায় বিদেশ প্রত্যাগত এবং বিভিন্ন জেলা হতে আগত ব্যক্তিদের ১৪দিন করে হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হচ্ছে। বর্তমানে ভাইরাস সংক্রমিত অন্যান্য জেলা বিশেষ করে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ হতে এ জেলায় আগত ৩০৭ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে, সাতজন হোম আইসোলেশনে, একজন হাসপাতাল আইসোলেশনে এবং আটজন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে।
কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য সরকারিভাবে ১৯৫টি আইসোলেশন শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তারমধ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ৮০ শয্যা তৈরি করে দেয়া হয়েছে। এ জেলার ডাক্তারসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় রেখে ৩ হাজার ১০৪টি ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) এবং ১ হাজার ২৬১টি মাস্ক মজুদ রাখা হয়েছে। অদ্যাবধি ডাক্তারসহ স্বাস্থ্য কর্মীদের মাঝে ৩ হাজার ৮৪১টি পিপিই এবং ৫ হাজার ৭৮৪টি মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে। করোনা আক্রান্ত রোগী পরিবহণ, জরুরি চিকিৎসায় স্থানান্তর এবং স্যাম্পল কালেকশনের জন্য চারটি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
করোনা ভাইরাসজনিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় মানবিক সহায়তা হিসেবে বরাদ্দপ্রাপ্ত ত্রাণ সহায়তার মধ্যে এ পর্যন্ত জিআর (চাল) ১ হাজার ৩৮৩ মেট্রিক টন এবং জিআর (ক্যাশ) ৪৭ লাখ ৪৯ হাজার ৫শ’ টাকা এবং শিশু খাদ্য ক্রয় বাবদ ১৫ লাখ টাকা বিশেষ বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ওই বরাদ্দ হতে ৩ মে পর্যন্ত ৯৪ হাজার ৫০০ পরিবারের মাঝে ৯৪৫ মেট্রিক টন চাল ও ৩২ লাখ ৬৫ হাজার ৯শ’ টাকার ত্রাণ সামগ্রী এবং ২ হাজার ৯৪৪ পরিবারের মাঝে ৭ লাখ ৬২ হাজার ২৫০ টাকার শিশু খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে।
উপজেলাসহ জেলা ত্রাণ ভান্ডারে বর্তমানে ৪৩৮ মেট্রিক টন জিআর (চাল), ১৪ লাখ ৮৩ হাজার ৬শ’ জিআর (ক্যাশ) এবং শিশু খাদ্য ক্রয় বাবদ ৭ লাখ ৩৭ হাজার ৭৫০ টাকা মজুদ রয়েছে। তাছাড়া জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের মোবাইলেফোন কল, ম্যাসেজ এবং ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে নিম্নবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্তের নিকট হতে গত ২ এপ্রিল থেকে ৩ মে পর্যন্ত প্রাপ্ত ২ হাজার ২১০টি তথ্যের ভিত্তিতে ১ হাজার ৮৫০ পরিবারকে বাড়িতে গিয়ে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও জেলা, উপজেলা এবং পৌরসভায় মনিটরিং টিম গঠন করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ত্রাণ/খাদ্য সামগ্রী/শিশু খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম মনিটরিং করা হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন কর্তৃক এ জেলায় করোনা সহায়তা তহবিল খোলা হয়েছে। ইতোমধ্যে করোনা সহায়তা তহবিলে তারাদেবী ফাউন্ডেশন ৫ লাখ টাকা, আত্মবিশ্বাস এনজিও একলাখ টাকা, রহিদুল ইসলাম নামে এক সবজি বিক্রেতা ৭ হাজার টাকা, ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতি বড় বাজার ৫ হাজার টাকা, ভূমি অফিসার্স কল্যাণ সমিতি ২০ হাজার টাকা, মো. হারুনর রশিদ নামের এক ব্যক্তি ১০ হাজার টাকা, মো. আব্দুস সামাদ ওরফে শাহীন মাস্টার নামে এক ব্যক্তি ১০ হাজার টাকা এবং মো. শফিকুল ইসলাম, উপ-সহকারী প্রকৌশলী, গণপূর্ত বিভাগ, চুয়াডাঙ্গা ১০ হাজার টাকা জমা প্রদান করেছেন। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের করোনা সহায়তা তহবিলে জাপান টোবাকো বাংলাদেশ ৪শ’ প্যাকেট, বাংলাদেশ এক্সটেনশন এডুকেশন সার্ভিসেস (বিজ) ২শ’ প্যাকেট, মাইটিভি ৫০ প্যাকেট, দেশ ট্রেড লিংক ৪০ প্যাকেট ত্রাণ সামগ্রী প্রদান করেছেন। এ সকল ত্রাণ সামগ্রী জেলা প্রশাসনের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে বিতরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলায় করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে জনসমাবেশ বন্ধকরণ, বাজার মনিটরিং এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ১ এপ্রিল থেকে ৪ মে পর্যন্ত পরিচালিত মোবাইলকোর্টে ১ হাজার ৫১টি মামলায় আরোপিত অর্থদ-ের ১০ লাখ ১৬ হাজার ৩৫০ টাকা আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করা হয়েছে।
সার্বিক পরিস্থিতির ওপর তীক্ষè নজর রাখা হয়েছে এবং জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, সেনাবাহিনী, জেলা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি-বেসরকারি বিভাগ জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে বলেও প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।