স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় গতকাল সোমবার দ্বিতীয় দিনের মতো ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ধর্মঘট চলেছে। চুয়াডাঙ্গা অটোবাইক মালিক-শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটি চার দফা দাবি আদায়ে গত রোববার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ ধর্মঘট পালিত হচ্ছে। তবে বিকেলে থেকে শহরে কিছু অটো চলাচল করতে দেখা গেছে। দাবিগুলোর মধ্যে আছে চুয়াডাঙ্গা শহরের প্রবেশমুখগুলো থেকে বাস-মালিক সমিতির লাঠিয়াল বাহিনী সরিয়ে নেয়া, শহরের মধ্য থেকে বাসস্ট্যান্ড সরিয়ে আন্তজেলা বাস-টার্মিনাল থেকে বাস ছাড়া, পৌর এলাকায় চলাচলকারী অটোরিকশার নম্বর দেয়া এবং জেলা ট্রাফিক পুলিশের অটো বাইকের প্রতি জরিমানা আদায় বন্ধ করা। ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে গতকাল সোমবার চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকায় রিকশা ও ভ্যান চলাচল আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে। তবে অটোরিকশা বন্ধের সুযোগে এসব বাহনে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে মানুষ বাধ্য হয়েই বাড়তি ভাড়ায় চলাচল করছেন। আবার সময় ও চাহিদামতো বাহন না পেয়ে কেউ কেউ হেঁটেই গন্তব্যে ছুটছেন। বিশেষ করে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অভিভাবকেরা।
আলমডাঙ্গা উপজেলার আসমানখালী এলাকা থেকে আদালতে আসা আজিবর রহমান বলেন, আসমানখালী থেকে আসা বাসযাত্রীদের শহরতলি দৌলাতদিয়াড় এলাকায় নামিয়ে দেয়া হয়। সেখান থেকে অটোরিকশায় আদালতে যেতে জনপ্রতি ১০ টাকা নেয়া হলেও আজ ভ্যানগুলোতে জনপ্রতি ২০ টাকা দাবি করা হচ্ছে। রিকশাওয়ালারা ২০ টাকার ভাড়া ৩০ টাকা করে নিচ্ছেন।
শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শহরের বিভিন্ন এলাকায় যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইজিবাইক একদম শূন্য। ফলে শহরের প্রাণকেন্দ্র শহীদ হাসান চত্বরের চেহারাও ছিল পুরোপুরি ভিন্ন। কোথাও নেই কোন যানজট। নেই ইজিবাইকের পার্কিং কিংবা যেখানে সেখানে যাত্রী নামানো-ওঠানোর দৃশ্য। তবে শহরের অভ্যন্তরীণ পথে যাতায়তকারী লোকজন পড়েছেন খানিক ভোগান্তিতে। অনেকেই ইজিবাইকের পরিবর্তে ভ্যান ব্যবহার করছেন। এতে গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। আবার অনেকেই জানিয়েছেন, ইজিবাইক না থাকায় শহর শান্তিপূর্ণ যানজটমুক্ত।
এক পথচারী ইয়াছমিন আক্তার জানান, ইজিবাইক না থাকায় কিছুটা ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। তবে শহরে একদমই যানজট ছিলো না। তাই হেঁটেই কাজ সারতে পেরেছি। আর এদিকে ভাড়া বেশি নিচ্ছে পাখি ভ্যানগুলো। এরা সুযোগে সৎ ব্যবহার করে নিচ্ছে। এতে যাত্রীরা খুব বিপদে আছে।
চুয়াডাঙ্গা বড় বাজারে আসা সাইদুর রহমান বলেন, সড়কে ইজিবাইক নেই। তাই বাধ্য হয়েই খোলা ভ্যানে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এজন্য হাসপাতাল থেকে কোর্টমোড় পর্যন্ত ৪০ টাকা ভাড়া গুণতে হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে।
বেশি ভাড়ার নেয়ার কথা শিকার করে এক পাখিভ্যান চালক রনি আহাম্মেদ বলেন, শহরে কোনো ইজিবাইক চলছে না। তাই আমরা ডাবল ভাড়া নিচ্ছে। যাত্রীদের কাছ থেকে ১০ টাকার জায়গায় ২০ টাকা ভাড়া নিচ্ছে। কারণ সড়কে কোনো ইজিবাইক চলছে না বলে আমরা ভাড়া বেশি নিচ্ছি। তবে শহরের রিকশা চালকরা বলছে, আমাদের পূর্বে থেকে যা ভাড়া তাই নিচ্ছি। আর ইজিবাইক চলছে না এতে শহরে যানযট কম। আবার পাখি ভ্যান চালকরা ভাড়া বেশি নিচ্ছে। এতে যাত্রীরা পড়েছে মহা ভোগান্তিতে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রিপন ম-ল বলেন, পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে শহরের প্রবেশ মুখগুলোতে বাইরের জেলা অর্থাৎ, বহিরাগত অটোরিকশা প্রবেশ ঠেকাতে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পৌর এলাকার অটোরিকশাগুলো পৌরসভার মধ্যে চলাচল করুক, সেটাই দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন। অথচ তারা উল্টো বুঝে কথিত আন্দোলনের নামে মানুষকে দুর্ভোগে ফেলছেন।
অটোবাইক মালিক-শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক সাজু মিয়া বলেন, অটোরিকশার সঙ্গে এখন হাজার হাজার পরিবারের জীবন-জীবিকা জড়িত। করোনাকালে চাকরিচ্যুত মানুষ, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী এবং শিক্ষিত বেকারদের একটি বড় অংশ এক প্রকার বাধ্য হয়েই অটোরিকশা চালানোকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরাও চাই একটি সুষ্ঠু নীতিমালার মধ্যদিয়ে চলাচল করতে। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি কোনো পর্যায় থেকেই সেভাবে সহযোগিতা পাচ্ছি না।’