মা দিবসে জেলা প্রশাসক জগতের সকল মায়ের প্রতি জানালেন সশ্রদ্ধ সালাম
স্টাফ রিপোর্টার: আন্তর্জাতিক মা দিবসে চুয়াডাঙ্গার ৪ জন ‘স্বপ্নজয়ী মা’ বিশেষ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। গতকাল রোববার বেলা ১২টায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকেবর সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনাসভা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান জেলার ৪ জন গুণি মায়ের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন। এ সময় তিনি বলেন, জগতের সকল মা’ই স্বপ্নজয়ী। এদের মধ্যে বিশেষ বিবেচনায় যে ৪ জন মাকে আজ সম্মানিত করা হচ্ছে এ মায়েরা অবশ্যই অনূকরনীয়। অনুকরনীয় মাসহ সকল মাকেই মা দিবসে সশ্রদ্ধ সালাম। প্রাণঢালা ভালবাসা।
রোববার ৮ মে ছিলো আন্তর্জাতিক মা’ দিবস। এ দিবসে দেশের প্রতিটি জেলায় আলোচনাসভা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। চুয়াডাঙ্গার যে ৪ জন মাকে স্বপ্নজয়ী মা হিসেবে নির্বাচিত করে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে এদের মধ্যে, চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের পুরাতন হাসপাতালপাড়ার সাহানারা বেগম। তিনি সুলতান আহম্মেদের স্ত্রী। এ দম্পতির ৩ কন্যার মধ্যে দুজন চিকিৎসক। একজন অডিট অফিসার। তিন জামাতার মধ্যে দুজন ডাক্তার। একজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। স্বপ্নজয়ী মা চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গার মমতাজ বেগম। তিনি মো. আলতাফ হোসেনের স্ত্রী। এ দম্পতির ৮সন্তানের মধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত ৭ জন। এদের একজন অস্ট্রেলিয়া সরকারের বৃত্তিপ্রাপ্ত, তিনি রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে সহযোগি অধ্যাপক, একজন জনতা ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার, একজন রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিকেলের চিফ ইনস্ট্রাক্টর, একজন খুলনা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের প্রভাষক, একজন দামুহুদা মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যারয়ের সহকারী শিক্ষক, একজন কুতুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার হাসপাতালপাড়ার নাজমা বেগমকে স্বপ্নজয়ী মা হিসেবে সম্মানিত করা হয়েছে। তিনি নূরুল ইসলামের স্ত্রী। এ দম্পতির এক ছেলে এক মেয়ে। দুজনই সুপ্রতিষ্ঠিত। ছেলে জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় থেকে ইসলামিক ইতিহাস পড়ে জার্মানীতে পিএসডি করছেন। মেয়ে ঢাকা বদরুন্নেছা কলেজে বাংলায় অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। অপরজন স্বপ্ন জয়ী মা ঝর্ণা রাণী বিশ^াস। তিনি আলমডাঙ্গা থানাপাড়ার কুমারেশ বিশ^াসের স্ত্রী। এ দম্পতির এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে প্রতাপ চন্দ্র বিশ^াস বর্তমানে খাগড়াছড়ি জেলার জেলা প্রশাসক। মেয়ে লাবনী বিশ^াস নাটোরে কালেক্টরেট স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষক।
সম্মাননা গ্রহণ অনুষ্ঠানে অনুভূতি ব্যাক্ত করে বক্তব্য রাখেন ঝর্ণা রাণী বিশ^াসের পক্ষে তার মেয়ে লাবনী বিশ^াস। তিনি বলেন চরম প্রতিকূলতার সাথে যুদ্ধ করে আমাদের মা আমাদের দু ভাই বোনকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছে। মায়ের যে সংগ্রাম ছিলো তা বর্ণনা করাও কঠিন। স্বপ্নজয়ী মায়েদের মধ্যে বক্ততব্য রাখেন সাহানারা বেগম ও মোছা. মমতাজ বেগম। দুজনই অভিন্নভাষায় বলেন, সন্তানদের বড় করে তুলতে হলে সত্যিই সংগ্রাম করতে হয়। ওদের সাথে সাথে নিজেদেরও অনেক কিছুই করতে হয়। পিতা অর্থের যোগান দিলেও মাকেই দিন রাত সমানে সন্তানদের বড় করে তুলতে অবর্ণনীয় পরিশ্রম করতে হয়। সন্তানকেও হতে হয়, মায়ের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সচেষ্ট।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের যৌথ উদ্যোগে মা দিবসের আলোচনা এ সভা ও সম্মাননা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাজিয়া আফরিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( প্রশাসন) আবু তারেক, সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান, সরকারি মহিলা কলেজের অবসর প্রাপ্ত অধ্যক্ষ এসএম ই¯্রাফিল, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের চুয়াডাঙ্গা কর্মকর্তা। উপস্থাপন করেন প্রশিক্ষক। বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি সরদার আল আমিন, জেলা মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুন্নাহার কাকলী, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার প্যানেল মেয়র রত্মা বেগম, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান সাহাজাদী মিলি প্রমুখ। শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত করেন আছিয়া বেগম।
প্রসঙ্গত: চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের পুরাতন হাসপাতালপাড়ার স্বপ্ন জয়ী মা সাহানারা বেগমের বড় মেয়ে সোনিয়া আহম্মেদ মেহেরপুর সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার। জামাতা ডা. আব্দুর রশিদ একই হাসপাতালের মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত। দ্বিতীয় মেয় তানিয়া আহম্মেদ অডিটর। জামাতা জাহিদ হাসান সিদ্দীক সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে কর্মরত। ছো মেয়ে সোহানা আহম্মেদ দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কম্পেলেক্সের মেডিকেল অফিসার। জামাতা ডা. শরিফুল ইসলাম আলমডাঙ্গার হারদী হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার। দামড়হুদা উপজেলার স্বপ্নজয়ী মা কার্পাসডাঙ্গার মমতাজ বেগম তার প্রতিকূলতা শর্তেও ছেলে মেয়েদের সু প্রতিষ্ঠিত করেছেন কীভাবে তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনায় বলেছেন, স্বামী মরহুম আলতাফ হোসেন ছিলেন কেরু এ্যান্ড কোম্পানির একজন ফুডশপ ইনচার্জ। তার ইন্তেকালের পর ছেলে মেয়েদের নিয়ে অথৈয় সাগরে পড়েন। কারণ, স্বামী যখন মারা যান তখন ৮ সন্তানের সকলেই ছিলো স্কুল কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত। মমতাজ বেগমের ৮ সন্তানের মধ্যে যে ৭ সন্তান সুপ্রতিষ্ঠিত বলে বর্ণনা দেয়া হয়েছে তার মধ্যে ছেলে আব্দুল আলীম বাবু রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক, ছেলে আব্দুল হাকিম জনতা ব্যাংক লিমিটেডের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (আইটি০। রাজশাহী বিভাগীয় অফিসে কর্মরত। মেয়ে রোখসানা খাতুন রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিকেটর চিফ ইনস্ট্রাক্টর ইলেকট্রনিক্স বিভাগে। মেয়ে রোমানা বিশ^াস খুলনা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক। মোহসিনা বিশ^াস চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার। হাসিনা খাতুন দামুড়গহুদা মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক, অপর মেয়ে হাবিবা খাতুন কুতুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।