গ্যাং লিডার আকাশের আত্মসমর্পণ : ১০ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা

চুয়াডাঙ্গায় বিদায় অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে এসএসসি পরীক্ষার্থী তপু হত্যাকাণ্ড

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় এসএসসি পরীক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান তন্ময় ওরফে তপু হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ইমদাদুল হক আকাশ আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মানিক দাসের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। আত্মসমর্পণের পর আকাশের পক্ষে আইনজীবী ইকবাল মাহমুদ জামিন প্রার্থনা করেন। চাঞ্চল্যকার হত্যাকা-ের ঘটনায় পুলিশের ব্যাপক অভিযানের মুখে ঘটনার পর থেকেই আত্মগোপনে ছিলেন আকাশ। পুলিশি অভিযানের মধ্যেও গ্রেফতার এড়িয়ে আদালতে আকাশের আত্মসমর্পণ করার ঘটনায় হতবাক হয়েছেন অনেকেই। প্রধান আসামি না হলেও হত্যার নেতৃত্বদানকারী আকাশের কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তির অপেক্ষায় অভিভাবক মহলসহ স্থানীয়রা।
অপরদিকে, পুলিশের পক্ষে আকাশের ১০ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মেফাউল হাসান। বিচারক উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনার পর ১৬ নভেম্বর মঙ্গলবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন এবং আসামি আকাশকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ইমদাদুল হক আকাশ (২৩) চুয়াডাঙ্গা শহরের শান্তিপাড়ার ইউসুফ আলীর ছেলে। তিনি চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৪ নম্বর আসামি। মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, যে কয়জন ৭ নভেম্বর মাহবুবুরকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেন, তাদের দলনেতা এই আকাশ।
পুলিশ জানায়, চুয়াডাঙ্গা শহরের কেদারগঞ্জ এলাকার ব্যবসায়ী গোলাম হোসেন হত্যা মামলার প্রধান আসামি আকাশ। তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা মামলাসহ অন্তত ছয়টি মামলা রয়েছে। আকাশের নেতৃত্বে গঠিত কিশোর গ্যাং চুয়াডাঙ্গা শহরে বেপরোয়াভাবে একের পর এক অপরাধ করে চললেও ভয়ে অনেকেই মামলা করতে সাহস পান না। এই গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে অসংখ্য অপরাধের তথ্যপ্রমাণ প্রতিদিন পুলিশের হাতে আসছে। ৭ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গা শহরের গুলশানপাড়ায় আল হেলাল মাধ্যমিক ইসলামী একাডেমিতে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান চলছিলো। সেখানে হামলা চালিয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান তপুকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে এই গ্যাং। মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পরপরই মারা যায় তপু। শতাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সামনে প্রকাশ্যে দিনের আলোয় এই খুনের ঘটনা ঘটিয়ে নিরাপদে এলাকা ছাড়ে হামলাকারীরা। শিক্ষার্থীদের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে এই হত্যাকা-ের নেতৃত্বেও ছিলো আকাশ।
এসএসসি পরীক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান তন্ময় ওরফে তপু হত্যার ঘটনায় নিহতের ভাই শহরের নুরনগর-কলোনিপাড়ার মাসুদুর রহমান বাদী হয়ে সাতজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৩ জনকে আসামি করে ৮ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। আসামিরা হলেন শহরের দক্ষিণ গোরস্তানপাড়ার সিহাব আলী, ফার্মপাড়ার ইমন হোসেন, শান্তিপাড়ার রূপক হোসেন, ইমদাদুল হক আকাশ ও সুমন হোসেন, ফার্মপাড়ার সাদিক ও শান্তিপাড়ার নাবিল। পুলিশ ৮ নভেম্বর এজাহারভুক্ত আসামি সুমন হোসেনকে গ্রেফতার করে আদালতে তুললে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। ওই মামলায় গতকাল বৃহস্পতিবার ইমদাদুল হক আকাশ আত্মসমর্পণ করেন।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ইমদাদুল হক আকাশ ও সুমন হোসেনের বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন অপরাধে মোট মামলার সংখ্যা ১৬। তপু হত্যাকা-ে দায়েরকৃত মামলার এজাহারে হত্যার পেছনে কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
তবে স্থানীয় লোকজন জানান, সম্প্রতি নূরনগর-কলোনি এলাকার রাস্তায় দ্রুতগতিতে আঁকাবাঁকা করে মোটরসাইকেল চালানোকে কেন্দ্র করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের সঙ্গে তপুর তর্কাতর্কি হয়। একপর্যায়ে স্থানীয়রা এসে ধারালো অস্ত্রসহ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য সিহাবকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। ওই ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে এই খুনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে নূরনগর এলাকার অনেকেরই ধারণা। তবে পুলিশের তদন্ত এগোচ্ছে একটি কিশোর প্রেমকে ঘিরে।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহসীন বলেন, আলোচিত এই হত্যা মামলার বাকি আসামিদের ধরতে একাধিক টিম কাজ করছে। তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গা থেকে কিশোর গ্যাং নির্মূল করতে যা যা করার সবই করা হবে।

Comments (0)
Add Comment