গাংনী প্রতিনিধি: লিচু বাগানের মালিকানা দখল নিয়ে সৃষ্ট রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার কাজিপুর গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন কাজিপুর গ্রামের খবির উদ্দীনের ছেলে ডাবলু ওরফে ডাবু (৪০) ও প্রতিবেশি সাহেবনগর গ্রামের ছানারুল ইসলাম (৩৮)। ডাবু’র পিতা খবির উদ্দীনকে গুরুতর আহত অবস্থায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় ও পুলিশসূত্রে জানা গেছে, কাজিপুর ও সাহেবনগর গ্রামের সীমান্ত এলাকায় ৯০ শতক জমির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে আদালত থেকে রায় পেয়েছেন নিহত ডাবলু হোসেনের পক্ষ। তবে অপর পক্ষ একই গ্রামের আশরাফুন নামের এক নারী সাহেবনগর গ্রামের হাবিবুর রহমান ও লাল্টু ওরফে লাল্টু কানার লোকজনকে ভাড়া করে মাঝে মাঝে বিরোধ সৃষ্টি করে। গতকাল সন্ধ্যার আগে ডাবলু ও তার পিতা খবির উদ্দীন বাগান পরিচর্যা করার সময় হাবিব মেম্বার ও লাল্টুর লোকজন অতর্কিত হামলা চালায়। এতেই ঘটে খুনোখুনির ঘটনা।
খবির উদ্দীনের পরিবারের অভিযোগ, খবির উদ্দীন ও তার ছেলে ডাবলু সন্ধ্যার আগে লিচু বাগানে স্প্রে করছিলেন। এসময় হাবিব মেম্বার ও লাল্টুর নেতৃত্বে কয়েকজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। পিতাপুত্রকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। এক পর্যায়ে ছেলের মৃত্যু হয়। গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে খবির উদ্দীনকে হাসপাতালে নেয়া হয়।
স্থানীয় ও পুলিশর্সত্রে জানা গেছে, হামলা থেকে বাঁচতে গিয়ে পিতাপুত্র প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছেন। এতে হামলাকারী পক্ষের ছানারুলের মামায় আঘাত লাগতে পারে। এ আঘাতে হয়তো তার মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরে হামলার তেমন কোনো চিহ্ন নেই বলে জানায় পুলিশ।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগীসূত্রে জানা গেছে, কাজিপুর গ্রামের আশরাফুন নামের এক নারীর কাছ থেকে একই গ্রামের খবির উদ্দীন ১৯৯০ সালে ৪৫ শতক জমি ক্রয় করেন। একই স্থানের আরও ৪৫ শতক জমি কিছুদিন পরে ক্রয় করেন খবির উদ্দীন। একই জমি খবির উদ্দীনকে রেজিস্ট্রি দিলেও নিজের মেয়ের নামে রেজিস্ট্রি দেয় আশরাফুন। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধ ও মামলা গড়ায় আদালত পর্যন্ত। মাস তিনেক আগে খবির উদ্দীনের পক্ষে রায় দেন আদালত। তবে ক্ষান্ত হয়নি আশরাফুন পক্ষের লোকজন। তারা লাল্টুর লোকজনকে ভাড়া করে এ হামলা চালিয়ে বলে অভিযোগ করেন খবির উদ্দীনের লোকজন।
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন মেহেরপুর পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলিসহ পুলিশের একাধিক দল। তিনি বলেন, আশরাফুন কাছ থেকে খবির উদ্দীন জমি কেনার পর থেকেই আদালতে মামলা চলছিলো। এ জমি দখলে ছিলো খবির উদ্দীনের। সেখানে তিনি লিচু ও আমের বাগান করেছেন। তবে আশরাফুন লোকজন ভাড়া করে বারবার জমি দখলে নেয়ার অপচেষ্টা করছিলো বলে আমরা প্রাথমিকভাবে শুনেছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আর কোন মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওবাইদুর রহমান জানান, হামলাকারী লাল্টু ও তার বাহিনীর লোকজন আত্মগোপন করেছে বলে জানা গেছে। পিতাপুত্রের উপর হাবিব ও লাল্টু বাহিনীর লোকজন অতর্কিত হামলা চালিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে ঘটনাস্থল লোকলয় থেকে দূরে তাই কোন প্রত্যক্ষদর্শী এখনো পাওয়া যায়নি। তাই তদন্ত ও হামলাকারীদের গ্রেফতারে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।