গাংনীতে সিটি ব্যাংকের এজেন্ট হত্যার নেপথ্য উন্মোচন – ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যেই খাদেমুলকে হত্যা

গাংনী প্রতিনিধি: টাকা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে সিটি ব্যাংক মুজিবনগর উপজেলার কোমরপুর শাখার এজেন্ট খাদেমুলকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকা-ের মূল পরিকল্পনকারীসহ ছিনতাইকারী সবার বিষয়ে তথ্য রয়েছে পুলিশের কাছে। ছিনতাই ও হত্যাকা-ের বিষয়ে গ্রেফতার সুমন হোসেন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে গাংনী থানায় প্রেস বিফিংয়ে এ বিষয়টি তুলে ধরে পুলিশ। আসামি সুমনের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে গাংনী থানার ওসি বজলুর রহমান সাংবাদিকদের সামনে ছিনতাই ও হত্যাকা-ের বিষয়টি তুলে ধরেন।
তিনি জানান, সিটি ব্যাংক এজেন্ট খাদেমুলের জন্য সকাল ৭টা থেকে কোমরপুর বাজারে অপেক্ষা করছিলো টুঙ্গি গোপালপুর গ্রামের সুমন হোসেন ও তার দুই সঙ্গী। উদ্দেশ্যে খাদেমুলের পিছু নিয়ে তার কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেয়া। সকাল সাড়ে দশটার দিকে খাদেমুল কোমরপুর বাজারে সিটি ব্যাংকের এজেন্ট অফিস (নিজের অফিস) থেকে টাকা নিয়ে বের হন। এসময় একটি মোটর সাইকেলে তার পিছু নেয় সুমন ও তার দুই সঙ্গী। ছিনতাইকারীরা জানতো তার সম্ভাব্য গন্তব্য মেহেরপুর শহর। কিন্তু পথিমধ্যে তিনি আমঝুপি বাজারে গিয়ে এক ব্যক্তির সাথে কাজ সেরে কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। আমঝুপি-গাড়াডোব সড়কের প্রবেশ করলে ছিনতাইকারীরাও তার পিছু নেয়। জনবহুল এলাকা হওয়ায় কোন ভাবেই তাকে থামানোর সুযোগ পাইনি ছিনতাইকারীরা। এক পর্যায়ে খোকসা-গাড়াডোব মাঠের মধ্যে পৌঁছুে সেই সুযোগ সৃষ্টি হয়। এ স্থানটিতে রাস্তার আশেপাশে নেই কোন বাড়িঘর। ফাঁকা মাঠ তাই বেশিরভাগ সময় মানুষ চলাচল খুবই কম থাকে।
ছিনতাইকারীরা ফাঁকা পেয়ে খাদেমুলকে পেছন থেকে থামানোর চেষ্টা করে। তিন জনের মাথায় হেলমেট ছিল এবং তাদেরকে ছিনতাইকারী হিসেবে চিহ্নিত করে হয়তো খাদেমুল মোটর সাইকেলের আরও জোর বাড়িয়ে দেন। গাড়াডোব গ্রামের কাছাকাছি পৌঁছুলে ছিনতাই আর সম্ভব হবে না এমন ভেবে চলন্ত অবস্থায় খাদেমুলকে উদ্দেশ্য করে কয়েকটি গুলি চালায় ছিনতাইকারী সুমন। কোমরের এক পাশে গুলিবিদ্ধ সুমন মোটর সাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে। বুকের দিকে ঝুলানো ব্যাগ নিয়ে মাঠের ভেতরে দৌঁড়ে গিয়ে কর্মরত শ্রমিকদের কাছে সহায়তা চায় রক্তাত্ব খাদেমুল। শ্রমিকরা তখন রাস্তার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে ছিনতাইকারীদের ধরার উদ্দেশ্যে। অপরদিকে রাস্তা উভয় মুখ দিয়ে আরও কয়েকজন পথচারী ঘটনার দিকে আসতে থাকে। এতে অবস্থা বেগতিক দেখে মোটর সাইকেলে চড়ে সুমনসহ তিন ছিনতাইকারী আমঝুপির দিকে সটকে পড়ে। দ্রুত গতিতে মোটর সাইকেল চালাতে গিয়ে আমঝুপি গোরস্থানের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তারা পড়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে তাদের ক্ষত হয়। এরপর মোটর সাইকেলযোগে তিনজন আবারও রওনা দিয়ে জুগিন্দা গ্রামে গিয়ে ওঠে। সেখানে একটি বাড়িতে সুমনকে নামিয়ে দিয়ে অপর দুই ছিনতাইকারী মোটরসাইকেল নিয়ে নিরাপদ গন্তব্যে পাড়ি দেয়। জুগিন্দা গ্রামের ওই বাড়িতে উঠে সুমন পোশাক পরিবর্তন করে শ^শুরবাড়ি কচুইখালি জুগিন্দায় আশ্রয় নেয়। সেখান থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। জুগিন্দা গ্রামের ওই বাড়িতে পোষাক পরিবর্তন করার সময় হত্যাকা-ের মূল পরিকল্পনাকারীর কাছে অস্ত্রটি দিয়ে যায় সুমন।
গাংনী থানার ওসি আরও বলেন, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার সুমন সবকিছুই স্বীকার করে এবং আদালতে জবানবন্দি দেয়। যা বিজ্ঞ আদালত ১৬৪ ধারায় রেকর্ড করেছেন।
ছিনতাইয়ের মূল পরিকল্পনাকারীসহ তারা কয়েকজন মিলে ঘটনার ৭/৮ দিন আগে আমঝুপি এলাকায় গোপন বৈঠক করে। ওখান থেকেই ছিনতাইয়ের চুড়ান্ত পরিকল্পনা করেছিল। তাদের সকলের সম্পর্কে তথ্য নিয়ে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে পুলিশ। ওসি আরও জানান, মূল পরিকল্পনাকারী হচ্ছে গাংনীর জুগিন্দা গ্রামের জামাই যার বাড়ি টুঙ্গি গোপালপুর গ্রামে। যিনি ঘটনার সময় তার সঙ্গীদের নিরাপত্তার জন্য তাদের খানিক পেছনে মোটর সাইকেল নিয়ে অবস্থান করেছিলেন। পুলিশের তদন্তে তার নামটি বেরিয়ে আসার পর তার ব্যবহৃত সেই মোটর সাইকেলটি তার জামাই বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
প্রসঙ্গতঃ গত ২৬ আগস্ট সকালে কোমরপুর সিটি এজেন্ট ব্যাংকের ম্যানেজার খাদেমুল ইসলাম ৪৬ লাখ টাকা নিয়ে গাংনী আসার পথে গাড়াডোব রাস্তার ছিন্তাইকারীরা গুলি করে টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নেবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। গুলিবিদ্ধ খাদেমুল ইসলামকে প্রথমে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ও পরে কুষ্টিয়া মেডিকেলে নেয়ার পথে তার মৃত্যু ঘটে। এ ঘটনায় খাদেমুলের ভাই আরফান আলী বাদী হয়ে গাংনী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

 

Comments (0)
Add Comment