গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনীর বানিয়াপুকুর গ্রামে সালিসের নামে প্রহসনের ঘটনার প্রধান মোড়লসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মধ্যযুগীয় কায়দায় গ্রাম্যসালিসে ক্ষতিগ্রস্ত ষোলটাকা গ্রামের জুবায়ের হোসেনের দায়ের করা মামলায় মঙ্গলবার দিনগত রাতে তাদেরকে গ্রেফতার করে গাংনী থানা পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে- বানিয়াপুর গ্রামের মোড়ল শরিয়ত হোসেন এবং ঘটনার সাথে জড়িত শহিদুল ইসলাম ও রাশেদুল ইসলাম বিদ্যুত। গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, জুবায়ের হোসেনের দায়ের করা মামলাটি আমলে নিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামিদেরকে বুধবার দুপুরে মেহেরপুর আদালতে প্রেরণ করা হয়। অন্যান্য আসামিদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান ওসি।
এদিকে সোমবার রাতের সেই ঘটনার রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন জুবায়ের হোসেন। তিনি এখনও গাংনী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চুরি চেষ্টার অভিযোগে ব্রিজের পিলারের সাথে বেঁধে তাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে বানিয়াপুকুর গ্রামের কয়েকজন। রাতভর নির্যাতন করেও তারা ক্ষ্যান্ত হয়নি। পরদিন সকালে গ্রাম্য সালিসে জুবায়েরের কাছ থেকে এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেন বানিয়াপুকুর গ্রামের সালিসপতিরা। একতরফা সালিসে জরিমানার টাকা পরিশোধ করে মুক্তি পায় জুবায়ের। তার শারীরিক অবস্থা গুরুতর থাকায় পরিবারের পক্ষ থেকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জুবায়ের হোসেন জানান, তিনি সোমবার রাতে বানিয়াপুকুর গ্রামের পাশে নিজ পুকুর পাড়ে মাছ পাহারা করছিলেন। এ সময় গ্রামের মাহাতাব আলীর ছেলে আলাল, আচেল উদ্দীনের ছেলে রবিউল ও মোজাফের ছেলে আজাম্মেল ওই জুবায়ের হোসেনকে বেধড়ক মারপিট করে। এতে জুবায়ের হোসেনের দুই পা হাত ও পিঠে জখম হয়। পরে তারা জুবায়েরকে প্রাইমারি স্কুলের একটি কক্ষে আটক রাখে।
মঙ্গলবার সকালে সালিস বৈঠকের ডাক দেয়া হয়। সালিসে জুবায়েরকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ৩০০ টাকা মূল্যের নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে মুচলেকা নেয়া হয়। সেই সাথে এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
বানিয়াপুকুর গ্রামের প্রধান মোড়ল শরিয়ত জানান, গ্রামের লোকজন জুবায়েরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরে বিচার সালিস বসায়; তাই সামাজিকভাবে তার বিচার করা হয়েছে। গ্রাম্য বিচারে আদায়কৃত টাকা কী কাজে ব্যবহার করা হবে জানতে চাইলে তিনি সামাজিক উন্নয়ন কাজে ব্যবহার করা হবে বলেও জানান তিনি। সালিসিতে এক লাখ টাকা জরিমানা করতে পারে কি-না? এমন প্রশ্নের জবাব মেলেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় গ্রামের কয়েকজন মোড়লের কাছে। তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল-জুবায়ের যদি অপরাধ করে থাকে তাহলে সামাজিক কিংবা পুলিশের মাধ্যমে ব্যবস্থা হতে পারে। কিন্তু তার ওপর অমানুসিক নির্যাতন করে চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হয়নি। পক্ষান্তরে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জুবায়েরের ওপর চলা এই কর্মকা- অন্যায় কি-না? এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান কয়েকজন মোড়ল। তবে জুবায়েরের দায়েরকৃত মামলায় গ্রামের নিরপরাধ মানুষ যেন ভুক্তভোগী না হয় সেদিকে নজর রাখার দাবি করেন গ্রামের অনেকে। ষোলটাকা গ্রামের সাবেক মেম্বার ময়নাল হক জানান, তিনিসহ ষোলটাকা গ্রামের লোকজন জুবায়েরকে নিতে এসেছিলাম কিন্তু বানিয়াপুকুর গ্রামের সমাজপতিরা জুবায়েরকে না দিয়ে জরিমানা করেছে এবং মুচলেকা লিখে নেয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ থাকার পরও কিভাবে সালিসের নামে প্রহসন করে তা বোধগম্য নয়। সমাজপতিরা যে মোটা টাকা জরিমানা করেছে তা সম্পূর্ণ অবৈধ। এ ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জুবায়ের বাদী হয়ে ৮ জনকে নামীয় ও আরো ১০/১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে গাংনী থানায় মামলা করেন।