বেগমপুর/গড়াইটুপি প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর বলেছেন, গ্রামের একজন পিতা অভাব অনটনে মেয়েকে পড়াশোনা বাদ দিয়ে বাল্যবিয়ে দিতে বাধ্য হতো। শিশুদের অর্ধেক মজুরি নিয়ে সংসার চালাতে হতো। তারা রাস্তা চাইনি বিদ্যুৎ চাইনি চেয়েছে চাল। দু’বেলা দু’মুঠো ভাত খেতে। মেয়েদের সুশিক্ষিত শিক্ষিত করতে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে। মেয়েকে শিক্ষিত করলে সন্তান পাবে শিক্ষিত মা। শিক্ষিত মা জাতি গঠনে ভূমিকা রাখে। জাতির জনক দেশ স্বাধীন করার পর প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করে। তার কন্যা ২৬ হাজার মাধ্যমিক স্কুলকে জাতীয়করণ করেছে। গরিব মানুষকে জমি ও ঘর দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের ৩শ টাকা থেকে এখন ২০ হাজার টাকা ভাতা দিচ্ছেন। তিনি গতকাল বুধবার চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার হিজলগাড়ী, খাড়াগোদা, বেগমপুর-যদুপুর ও কোটালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দরিদ্র মেধাবী ছাত্রীদের মাঝে বিনামূল্যে বাইসাইকেল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনিমূলক বই বিতরণকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে নারীদের এগিয়ে নিতে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত নানান সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করেছে সরকার। দূর-দূরান্ত থেকে মেয়েরা যাতে বিদ্যালয়ে আসতে পারে; তার জন্যই আজকের এ বাইসাইকেল বিতরণ। যদিও প্রয়োজনের তুলনায় কম। আগামীতে যেন আরও বেশি করে বাইসাইকেল বিতরণ করতে পারি তার ব্যবস্থা করবো। বাইসাইকেলের পাশাপাশি জাতির জনকের যে অসমাপ্ত আত্মজীবনি বইটি দিয়েছি; সেটি তোমরাসহ পরিবারের সবাইকে পড়তে বলবে। তাহলেই জানতে পারবা বঙ্গবন্ধু কী ছিলেন। এমপি টগর আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লালিত স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়তে তার অসমাপ্ত কাজ তারই যোগ্য উত্তরসূরী জননেত্রী শেখ হাসিনা রাত-দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ নামক ভূ-খ-ের উত্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান অনস্বীকার্য। দেশ স্বাধীন না হলে আমি এমপি হতাম না; আপনাদের সন্তান আজ ডিসি এসপি হতে পারতো না। পরাধীনতার শিকলে বদ্ধ থাকতাম। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনে ২৩ বছরের মধ্যে ১৪ বছর কারাগারে কাটিয়েছেন লাল সবুজের এই পতাকার জন্য। কুচক্রীমহল ১৯৭৫ সালে স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। সাড়ে ১৩ বছর আগে এলাকার সব জায়গায় ঘুরেছি। মানুষের কষ্ট লাঘব করতে কাজ করেছি। জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে জাদুর কাঠি আছে; এজন্যই দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে। বঙ্গবন্ধু যদি আর ১৫/২০ বছর বেঁচে থাকতেন; তাহলে এ দেশ অনেক আগেই মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুর হয়ে যেতো। তিনি বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করে জামায়াত-বিএনপি। ২০০৮ সালে নেত্রীর কথামতো কারো গায়ে হাত দিইনি। কুকুর মানুষকে কামড়ে; কিন্তু মানুষ কামড়ায় না। আজ মেয়েদের বাইসাইকেল বিতরণ করা হলো আগামীতে ৩০টি সাইকেল দেবো; যার মধ্যে ছেলেরা পাবে ১০টি। এজন্য ভালো করে পড়াশোনা করতে হবে। মেয়েরা বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে গেলে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে। তাদের বিচরণক্ষেত্র অনেক বড় হয়। জানার পরিধিও বেড়ে যায়। এটাই নারীর ক্ষমতায়নের প্রথম ধাপ। এখন বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাওয়ার মধ্যে মেয়েদের লজ্জা বা ভয়ের কিছু নেই। আগামীতে তাদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল হোক। বুধবার সকাল ১০টার দিকে হিজলগাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি সাইফুল আজম মিন্টু। হিজলগাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আলী হোসেনের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার শামীম ভূইয়া, প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন স্বপন, নেহালপুর ইউনিয়ন আ.লীগের আহবায়ক মোবারক আলী, যুগ্মআহবায়ক হামিদুল্লাহ ও দোস্ত বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।
এদিকে, দুপুর ১টার দিকে খাড়াগোদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি খালেকুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম ভূইয়া। স্বাগত বক্তব্য রাখেন খাড়াগোদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাহারুল ইসলাম, আন্দুলবাড়ীয়া গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফাতরুজ্জামান মাস্টার, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম,আবুল কাশেম, আওলাদ বিশ্বাস, ওয়াজেদ আলী, লাল মোহাম্মদ, ফজলু, গড়াইটুপি ইউপির চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান রাজু, গড়াইটুপি ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি (একাংশ) আব্দুল মতিন খোকন, সাধারণ সম্পাদক সাইদ, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রাশেদুজ্জামান পলাশ, সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন চাঁন, তিতুদহ ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি আসাদুল ইসলাম রোকন, তিতুদহ ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি বসন্ত সরকার প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক হারুন অর রশিদ। প্রধান অতিথি সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর ৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে ছাত্রীদের মধ্যে ১১৬টি বাইসাইকেল বিতরণ করেন। বাইসাইকেল পাওয়া গহেরপুর গ্রামের শরিফুল ইসলামের মেয়ে সায়মুম সায়ান লয়, ছানোয়ার হোসেনের মেয়ে স্বর্ণা ও সড়াবাড়ীয়া স্কুলের আনিকাসহ সকল শিক্ষার্থীরা নতুন বাইসাইকেল পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে বলে আমরা দূর থেকে স্কুলে আসি। অটো ও পাখিভ্যানযোগে আসতে হয়। এতে করে আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতি হতো। মাঝে মধ্যে স্কুল আসতে দেরি হয়। আজ বাইসাইকেল পেলাম এখন আর ক্লাসে দেরি হবে না। টাকাও লাগবে না। আমাদের অনেক উপকার হবে।