দর্শনা অফিস: কেরুজ চিনিকলের চলতি মরসুমে আখ মাড়াই বন্ধ হলো আজ। আজ শুক্রবার ভোরে আখের অভাবে চলতি মরসুমে আখ মাড়াই কার্যক্রম ঘোষণা করা হয়। এবারের মরসুমে কোন প্রকার লক্ষমাত্রা অর্জন হয়নি। যে কারণে লোকসানের বোঝা কতটা ভারী হবে তা নিয়ে কর্তাবাবুদের কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে। তথ্য দিতে কর্মকর্তাদের গরিমশি। ৮৫ বছর বয়সি কেরুজ চিনিকলের ২০২২-২৩ আখ মাড়াই মরসুমের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছিলো গত ২৩ ডিসেম্বর। লোকসান কমাতে অনেকটাই সাদা-মাটা পরিবেশে আলোচনাসভা ও দোয়া পরিচালনার মধ্যদিয়ে আখ মাড়াই কার্যক্রম শুরু হয়। বিগত কয়েক মরসুমের মতোই গত মরসুমেও লোকসান গুনতে হয় চিনি কারখানায়। ফলে গত মরসুমের প্রায় ৬৪ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে ২০২২-২৩ আখ মাড়াই মরসুমে যাত্রা শুরু করলেও মূল লক্ষ্য মুনাফা অর্জন ছিলো। বরং লোকসান কমানোর লক্ষ্য নিয়ে মিল কর্তৃপক্ষ নানামুখি কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত সে গুড়েও যেন পড়লো বালি। গত মরসুমের তুলনায় এবার মাত্র ৯ মাড়াই দিবস বাড়ানো হয়েছিলো। এ মরসুমে মাড়াই দিবস নির্ধারণ করা হয়েছিলো ৫৩, তবে সে পর্যন্ত হাটতে পারেনি, অনেকটাই শেষের দিকে খেতে হলো হোচট। আখের অভাবে নির্ধারিত ৫৩ দিনের পরিবর্তে ৪২ দিনের মাথায় বন্ধ হলো আখ মাড়াই। আখের পরিমান তুলনামূলক বেড়েছে বহুগুণ। কৃষকদের আখের ফলন ভালো না হলেও মিলের নিজস্ব জমিতে আখের ফলন ছিলো বেশ ভালো। তবে তাতেও হয়নি সুফল। ৫৩ দিনে ৬২ হাজার মেট্রিকটন আখ মাড়াইয়ের লক্ষমাত্রা বেধে দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন থেকে। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের দেয়া লক্ষমাত্রা অনুযায়ী ২০২২-২৩ আখ মাড়াই মরসুমে কেরুজ চিনিকলে ৬২ হাজার মেট্রিকটন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করতে হবে ৩৮৪০ মেট্রিকটন। আখ মাড়াইয়ের গড়হার প্রতি মাড়াই দিবসে ১১৫০ মেট্রিকটন এবং চিনি আহরণের গড়হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ দশমিক ২০ শতাংশ। ৪২৩০ একর জমিতে আখ দ-ায়মান ছিলো। যার মধ্যে কেরুজ নিজস্ব জমির পরিমান ১০৫০ একর। বাকি ৩১৮০ একর কৃষকদের জমিতে আখ চাষ করা হয়েছিলো। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিলো আখ মাড়াইয়ের ৪২ দিবস। গড় আখ মাড়াই ঠিক থাকলেও চিনি আহরণের হার ছিলো খুবই কম। হিসাব মতে চিনি আহরণের গড়হার ছিলো ৫ দশমিক। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৪২ দিবসে আখ মাড়াই করেছে ৪৬ হাজার মেট্রিকটন আখ। গভীর রাত পর্যন্ত আখ মাড়াই হতে পারে। তবে সব মিলিয়ে এবার ৪৭ হাজার মেট্রিকটন আখ মাড়াই হবে। চিনি উৎপাদনের সঠিক হিসাব যেমন দিতে পারেননি মহাব্যবস্থাপক (কারখানা) সুমন সাহা। তিনি তথ্য দিতে করেন গড়িমশি। মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশারফ হোসেন আখের ফলন বৃদ্ধি, সঠিক পরিচর্যা ও রোপন বাড়াতে অবিরাম ছুটেছেন। শেষ পর্যন্ত একার পক্ষে পেরে উঠেননি। তবে আগামী মরসুমের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বেশ জোরেসোরেই। তবে এবার ৪২ আখ মাড়াই দিবসে কোন প্রকার যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনা ঘটেনি। মাঝপথে মটর জনিত সমস্যার কারণে শুধুমাত্র আড়াই ঘণ্টা মাড়াই বন্ধ রাখতে হয়েছে। কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের ভাষ্যমতে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঠিক দিক-নির্দেশনা ও দেখভালের কারণে কোন প্রকার বড় ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে পড়তে হয়নি ৮৫ বছর বয়সি এ মিলটিকে।