কুষ্টিয়ায় আ.লীগ নেতা হত্যায় অস্ত্রধারী রনিকে খুঁজছে পুলিশ

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ায় আ.লীগ নেতা হত্যা মামলায় কেন্দ্রীয় জাসদ নেতাসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ অভিযুক্ত অস্ত্রধারী রনি নামের এক ব্যক্তির খোঁজে জোরেশোরে অভিযান শুরু করেছে। এ হত্যাকান্ডের পর ওই এলাকায় এখনও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পুলিশ জানিয়েছে, অস্ত্রধারী রনির বাড়িও চাঁদগ্রামে। তার বাবার নাম নজরুল ইসলাম। তিনি এক সময় দেশের বাইরে থাকলেও বছর খানেক আগে ফিরে আসেন। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। রনির চাচাতো ভাই রকিবুলকে কয়েকদিন আগে সিদ্দিকুর রহমানের এক ভাই শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়েও রনির গোষ্ঠীর সঙ্গে সিদ্দিকুরদের বিরোধ চলছিলো।
জানা গেছে, গত শুক্রবার সকালে আ.লীগ নেতা সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক ও তার ভাইয়েরা একসঙ্গে বাড়ির পাশের চাঁদগ্রাম চরের মাঠে যান। সেখানে তারা নিজেদের জমিতে কাজ করছিলেন। আশপাশের জমিতেও অনেকে ছিলেন। হঠাৎ করেই অস্ত্রহাতে কয়েকজন মাঠের দিকে ছুটে আসে। তাদের বেশিরভাগের হাতে ছিলো দেশীয় অস্ত্র। শুধু রনি নামের একজনের হাতে ছিলো শটগান। তিনি সিদ্দিকুর ও তার ভাইদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। মুহূর্তেই তারা গুলিবিদ্ধ হন। ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথেই মারা যান সিদ্দিকুর রহমান। তিনি ভেড়ামারার চাঁদগ্রাম ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। গুলিবিদ্ধ সিদ্দিকুরের তিন ভাই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় জাসদ নেতাসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। অস্ত্রধারী রনিকে খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সেদিন মাঠে থাকা কয়েকজন জানান, অস্ত্রধারী রনি সামনের দিকে ছিলেন। তার হাতে থাকা শর্টগান দিয়ে গুলি ছুড়েছিলো সেদিন। জাসদ কর্মী রনি চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হাফিজের অনুগত। সার্বক্ষণিক তার সঙ্গেই ওঠাবসা করে। সিদ্দিকুরের ছেলে মুজাহিদ হত্যাকা-ের সময় মাঠেই ছিলো। সেও অস্ত্র হাতে রনিকে দেখেছে বলে পুলিশকে জানিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, চাঁদগ্রামে বেশ কয়েকটি সামাজিক গোষ্ঠী রয়েছে। এর মধ্যে মালিথা ও ম-ল গোষ্ঠী অন্যতম। মালিথারা একসময় আওয়ামী লীগের আর ম-লরা বিএনপির রাজনীতি করতো। ম-লরা আওয়ামী লীগের রাজনীতি শুরু করলে মালিথারা ক্ষোভে জাসদে যোগ দেয়। এরপর গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তাদের মধ্যে কমপক্ষে ১৫টি সংঘর্ষ হয়েছে। এসব ঘটনায় তিনজন নিহতও হয়েছেন। সিদ্দিকুর হত্যার পর এখনও ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, বিএনপি ছেড়ে আসার পর সিদ্দিকুর আওয়ামী লীগে পদ পান। সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তার চাচাতো ভাই মেম্বার নির্বাচিত হন। ভোটের আগে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাসদ নেতা তপনের সঙ্গে সিদ্দিকুর ও তার ভাইয়ের বিরোধ দেখা দেয়। সর্বশেষ কয়েকদিন আগে তপনের পক্ষের কর্মী রকিবুল ইসলামকে মারধর করেন সিদ্দিকুরের ভাই ইউসুফ ম-ল। তিনিও গুলিবিদ্ধ হন। এসব নিয়ে জাসদ সমর্থক মালিথারা ক্ষুব্ধ ছিলো। প্রতিশোধ নিতে তারাই পরিকল্পিতভাবে শুক্রবার হামলা করে বলে অভিযোগ করেছেন সিদ্দিকুরের ভাইয়েরা।
ভেড়ামারা থানার ওসি মজিবুর রহমান বলেন, অস্ত্রধারী রনিকে গ্রেফকার করা গেলে অনেক তথ্য জানা যাবে। জড়িত অন্যদের ধরতে পুলিশ কাজ করছে।
এদিকে, সিদ্দিকুর রহমানকে হত্যার ঘটনায় কেন্দ্রীয় জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম স্বপন এবং তার ছোট ভাই চাঁদগ্রাম ইউনিয়ন জাসদের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাফিজ তপনসহ ২০ জনের নামে অভিযোগ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে ভেড়ামারা মডেল থানায় নিহতের চাচাতো ভাই এনামুল হক ম-ল মেম্বার বাদী হয়ে অভিযোগটি করেন।
এনামুল হক ম-ল মেম্বার দাবি করেন, আমার ভাইকে জাসদের সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করেছে। আমরা হত্যাকারী স্বপন, তপনসহ সব আসামিকে অতি দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
ভেড়ামারা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইয়াছির আরাফাত জানান, ২০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগটি করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আশা করেন, শিগগির সব আসামিকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

 

Comments (0)
Add Comment