রতন বিশ্বাস : দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গায় ভৈরব নদ খননের সময় বের হলো প্রায় দেড় থেকে দুই শত বছরের পুরনো জাহাজের ধ্বংসাবশেষ ও মানুষের হাড়। মাঝ রাতে মাটি খননের সময় জাহাজ পাওয়ার খবর কার্পাসডাঙ্গাসহ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় ভোর থেকেই কৌতুহলী লোকজন দেখতে ভিড় করছে ঘটনাস্থলে। স্থানীয় সুত্রে জানাগেছে, দামুড়হুদার সুবুলপুরে গত বছর ১৯ ডিসেম্বরে ভৈরব নদ খননের কাজের উদ্বোধন হয়। এরপর ভৈরব নদ খননের এক পর্যায়ে কার্পাসডাঙ্গা – বাঘাডাঙ্গার নীল কুঠিরের নিচে মাটি কাটা ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাটি খননের সময় ড্রেজার মেশিনের চালক গত বৃহস্পতিবার দিনগত মাঝ রাতে ব্রিটিশদের পণ্যবাহি শত বছরের উপরের পুরোন জাহাজের ধ্বংসাবশেষ ও মানুষের হাড়ের সন্ধান পায়। বিষয়টি ভৈরব নদ খননের ঠিকাদারকে জানালে তিনি উর্ধতণ কর্তৃপক্ষে জানায়। নদী খননের ঠিকাদার বিশ্বজিৎ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, রাতে নদীর মাটি খনন করতে করতে এগুলো যাওয়া গেছে। কৌতুহলী মানুষ দেখতে ভিড় করছে। বিষয়টি আমি উর্ধতণ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এবিষয়ে ড্রেজার চালক নাইম জানান, গত রাতে আমি মাটি খনন করছিলাম। হঠাৎ মাটি খননের মেশিনের প্লেটে লোহা বাঁধে। পরে আরো খনন করতে করতে বড় নৌকার কিছু মালামাল পাই। এলাকাবাসি ধারণা করছে, এটি প্রায় দেড় থেকে দুই শ’ বছর আগে নদীতে ডুবে যাওয়া জাহাজ। মাটি খনন আরো করলে হয়তো মূল্যবান সম্পদ থাকতে পারে বলে স্থানীয়রা ধারনা করছে। এদিকে মাটি খুঁড়ে জাহাজ পাওয়ার সন্ধান আশপাশে ছড়িয়ে পড়ায় কৌতুহলী নারী দেখতে ভিড় করছেন। শুক্রবার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ভৈরব নদে লোকজন দূর-দূরান্ত থেকে জাহাজের ধ্বংসাবশেষ ও মানুষের কিছু হাড় দেখতে ভিড় করছেন। দেখতে আসা লোকজন মোবাইলে ফোনের ক্যামেরায় ছবি তোলে নিচ্ছেন। কার্পাসডাঙ্গা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ হামিদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এই পথে ব্রিটিশদের যাতায়াত ছিল। এখানে নীল কুঠির ছিলো সেই সময়ে ডুবে যাওয়া জাহাজ হতে পারে এটি। কার্পাসডাঙ্গা এলাকার প্রবীণ লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই নদীতে ব্রিটিশদের যাতায়াত ছিল। বাপদের কাছে শুনেছি সেই সময় প্রাকৃতির দুর্যোগ কিংবা কোনো দুর্ঘটনায় জাহাজটি নদীতে ডুবে গেছে। পরে আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এখন মাটি কেটে নদী খনন করায় সেই ডুবে যাওয়া জাহাজের সন্ধান পাওয়া যায়। তাছাড়া মানুষের শরীরের কিছু হাড় পাওয়া গেছে। এই জাহাজে মূল্যবান সম্পদ থাকতে পারে। এসব ধারণা ও আলোচনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় কৌতুহলী মানুষের মধ্যে জাহাজ দেখতে আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। যে কারণে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসছেন। কোমরপুর গ্রামের প্রবীণ কোমরপুর গ্রামের মুফাজ্জেল হোসেন, আমার বাবার কাছে শুনেছি এখানে ঝড়ে একটি সাহেবদের জাহাজ ডুবে গিয়েছিল। আমার দাদা সাহেবদের কর্মচারি ছিলো। এবিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, কার্পাসডাঙ্গা থেকে কলকাতায় নদী পথে বাণিজ্য হতো। এখানে বড় বড় নৌকা ও জাহাজ ভিড়তো। কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্নসাধারন সম্পাদক আব্দুস সালাম জানান, গত রাতে মাটি খননের সময় ব্রিটিশদের জাহাজের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া গেছে। শুনে দেখতে আসলাম। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদুর রহমান মুকুল জানান, খবর পেয়ে এখানে এসেছি। ভৈরব নদের মধ্যে পাওয়া ব্রিটিশদের এই মালামাল প্রত্নতত্ত বিভাগের নজরে আনা জরুরি, গবেষণায় জানা যাবে এটি কী এবং এর রহস্য ও ইতিহাস। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাছলিমা আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সকালে বিষয়টি ফেসবুকে দেখলাম। এবিষয়ে বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সাথে কথা বলছি। তবে যেগুলো পাওয়া গেছে সাবধান ও যত্ন করে রাখতে হবে। পরিষদে রাখার জন্য আমি চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে কথা বলছি।