আলমডাঙ্গা থেকে পালিয়ে গিয়ে আশুলিয়ায় সংসার : একই রশিতে দুজনের ঝুলন্ত লাশ 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গা নানা বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার এক মাস ১৮ দিন পর ঢাকার আশুলিয়ার ভাড়া বাসা থেকে প্রেমিক-প্রেমিকার একই রশিতে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার বিকেল ৫টায় আশুলিয়া থানা পুলিশ তাদের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। তবে স্থানীয় পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে আত্মহত্যার ঘটনা বললেও তা অনেকের কাছে রহস্যজনক হিসেবে দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গার হাউসপুর থেকে মারিয়া খাতুন বন্যা নামের ১৫ বছরের মেয়ে তার বিবাহিত প্রেমিক টুটুলের (৩০) সাথে গত ২২ জুন নানার বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পরদিন বন্যার পিতা বাদল আলী বাদি হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় একটি অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের পর থেকে পুলিশ তাদের খোঁজ করছিলো।
অভিযোগে জানা যায়, কুষ্টিয়ার কুমারখালীর মনোহরপুর গ্রামের হাতেম আলীর বিবাহিত ছেলে রাজমিস্ত্রি টুটুল চার মাস আগে ইবি থানার চরপাড়া-রাধারনগর গ্রামের বাদল আলীর বাড়িতে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে আসেন। ওই সময় বাদল আলীর নবম শ্রেণিতে পড়–য়া মেয়ে বন্যার সাথে রাজমিস্ত্রি টুটুল প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। প্রেমের এক পর্যায়ে তারা দু’জন রাতে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার পথে ঝিনাইদহের হরিণাকু-ু শহরের নৈশপ্রহরীর হাতে ধরা পড়েন। তারা নিজেদের স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিলেও সন্দেহ হওয়ায় ওই নৈশপ্রহরী তাদেরকে হরিণাকু-ু থানায় হস্তান্তর করে। পরদিন হরিণাকু-ু থানা পুলিশ উভয়পক্ষের অভিভাবকদের থানায় ডেকে জিম্মায় যার যার বাড়িতে দুজনকে পাঠিয়ে দেয়।
এ ঘটনার পর বাদল তার বাড়িতে না রেখে বন্যাকে আলমডাঙ্গার আনন্দধামের খালাতো দুলাভাই মোশাররফের বাড়িতে রেখে যান। মাস খানেক রাখার পর বন্যাকে আলমডাঙ্গার হাউসপুরে তার নানা ইসতার আলীর বাড়িতে রাখা হয়। এরপর থেকে বন্যা নানা ইসতার বাড়িতেই ছিলো। এর মধ্যে বন্যা কারো মোবাইল ফোন নিয়ে গোপনে প্রেমিক টুটুলের সাথে যোগাযোগ করে। গত ২২ জুন সন্ধ্যার পর টুটুল এসে বন্যাকে নিয়ে দ্বিতীয়বার পালিয়ে যান। তারা পালিয়ে গিয়ে প্রথমে চট্টগ্রামে গিয়ে ওঠেন। সেখানে মাসখানেক থাকার পর তারা আশুলিয়ার নবীনগরের পল্লী বিদ্যুতের ডেন্ডাবর এলাকার ফজর আলীর বাসার একটি ছোট কক্ষ ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। টুটুল নবীনগরে শ্রমিকের কাজ করে দু‘জনের সংসার চালিয়ে আসছিলো।
আশুলিয়া থানার এসআই সফিউল্লাহ জানান, স্থানীয়রা বিকেলে ঘটনা জানানোর পর দু’জনের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে আত্মহত্যার ঘটনা বলে মনে হয়েছে। তবে তদন্ত করে মৃত্যুর প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। তিনি জানান, গত ২২ জুন তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে আসে। গত ১৯ জুলাই আশুলিয়ার ওই এলাকায় টুটুলের চাচাতো বোনের কাছে আসে। পরে ডেন্ডাবর এলাকার ফজর আলীর বাড়ির একটি কক্ষ স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন।
বিকালে তাদের কক্ষে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখে থানায় খবর দেয় প্রতিবেশীরা। খবর পেয়ে ঘরের দরজা ভেঙে তাদের দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রতিবেশীরা পুলিশকে জানিয়েছে তারা সম্প্রতি বিয়ে করেছে।
তিনি আরও জানান, আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি টুটুল ও মারিয়া তাদের এলাকা থেকে পালিয়ে এসেছে। প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে তারা আত্মহত্যা করেছে। তবে কেনো আত্মহত্যা করেছে তা জানা যায়নি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের নিকট মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।

Comments (0)
Add Comment