রহমান মুকুল: চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গায় কফি চাষ? শুনলে অবাক হতে হয় বৈকি। অথচ কয়েক বছর ধরে এটাই ধীরে ধীরে সম্ভাবনাময় ফসল হয়ে উঠছে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ উত্তরবঙ্গে। চা বাগানের সাথেই কফি চাষ হচ্ছে এ সব এলাকায়। অবশ্য দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে চুয়াডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়ায় প্রথম চাষ হচ্ছে কফির। অচিরেই হয়তো দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশের কফি উড়াল দেবে বিশ্বের নানা দেশে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংয়ে রাখবে বিশেষ ভূমিকা।
চায়ের মতো না হলেও কফি এখন আর অতোটা অপরিচিত নয়। কিন্তু সবাই এটা জানি, এই কফি আসে দেশের বাইরে থেকে। তবে এখন দিনবদলের হাওয়া লেগেছে। তাই তো নিজ আঙিনায় এখন বেড়ে উঠছে কফি গাছ।
আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালিয়া বাজারের বুক চিরে বহমান মাথাভাঙ্গা নদী। এই নদীর পয়স্তীর ঊর্বর জমিতে শখ করেই কফির বাগান করেছেন নূরুল হুদা ডিউক। পেশাগত কারণে তিনি ঢাকায় বসবাস করেন। কিন্তু নিজ জন্মস্থানের প্রতি রয়েছে দুর্মর মমত্ববোধ। এ কফিগাছের চারাগুলোর বয়স এখনও এক বছর হয়নি। অথচ এরই মধ্যে এক একটি গাঢ় সবুজ গাছের চারা নব কিশোলয় কুঞ্জ হয়ে বেড়ে উঠছে। সারি সারি লাগানো কফি গাছগুলো আশ্বিনের বেপরোয়া বাতাসে দোল খেতে দেখা যায়। আহা নবীন কফিগাছগুলোর মাথাভর্তি ঝাঁকড়া সবুজ পাতার ফাঁকে ডালে ডালে কবে যে ধরা শুরু হবে স্বপ্নের কফি ফল! ডিউক হুদার কফি বাগানে এসে বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কবিতাটির কথা মনে পড়ে গেল-’ চেনা আছে ভোরগুলো, অপরাহ্ন, গোধূলির ক্ষণ/কফির চামচে পরিমাপ আমি করেছি জীবন। ’
আলমডাঙ্গা কৃষি অফিসসূত্রে জানা যায়, চা চাষের জন্য মাটির পিএইচ ৪ দশমিক ৫ থেকে ৫ দরকার। কফিও এ রকম অ¤্রমাত্রার মাটিতেই চাষের উপযোগী। তবে চায়ের সঙ্গে চাষের ধরণ, শ্রম ও পরিচর্যার ক্ষেত্রে পার্থক্য কিছুটা আছে। কফিগাছ চা-গাছের মতো ছাঁটাই করতে হয় না। শুধু গাছের নিচের দিকের পাতা একটু ছেটে দিতে হয়। এ ছাড়া চা-গাছে সেচ লাগে, কফিগাছে সেচ দিতে হয় না। চা-গাছে ছায়াবৃক্ষের দরকার পড়ে, কফিগাছে তা লাগে না। চা-গাছের মতো কফিগাছে রোগবালাইয়ের আক্রমণ নেই।
মুঠোফোনে কথা হয় কফি বাগানের মালিক ডিউক হুদার সাথে। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে চা বাগানের সাথে কফি গাছ সফলভাবে চাষ হচ্ছে দেখে আমিও নিজ এলাকায় কিছু জমিতে শখের বশে কফি বাগান করেছি। আমার ধারণা, অদূর ভবিষ্যতে আমাদের দেশ কফি উৎপাদনে দৃষ্টান্ত হবে। আমার কফি চাষ দেখে এলাকার বেকার যুবকেরা উদ্বুদ্ধ হবে। এমন ভাবনা থেকেই কফি চাষ করছি।
সম্প্রতি আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসার হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীসহ কয়েকজন কৃষিবিদ। তারা কফি বাগানের তত্ত্বাবধায়ককে নানা পরামশদন। এবং কফি চাষের ক্ষেত্রে সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। উপজেলা কৃষি অফিসার হোসেন শহীদ সরোওয়ার্দী বলেন, ‘ চা’র মত কফি এখন গ্রামের মানুষের কাছেও পরিচিত ও জনপ্রিয়। নতুন প্রজন্মের নিকট কফি বেশি পছন্দের পানীয়। এই এলাকায় কফি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। কফি চাষ সম্পর্কে বলতে গিয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সোহেল রানা জানালেন, চা-চাষের পাশাপাশি আরও কিছু নতুন কোন ফসল ফলানো যায়, সেই ভাবনা থেকে কফি চাষের কথা ভাবা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কফি চাষে চায়ের চেয়ে খরচ কম হবে। বছরে একবার ফসল হয়। চা-গাছের মতো ছাঁটাই, সেচ লাগে না। রোগবালাই কম।