আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার এসএসসি পরীক্ষার্থী জুয়েল রানা তমালের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল ৯টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের কাটাইখানা এলাকার সমবায় মার্কেটের সামনে থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তমালের মৃত্যু হয়। এদিকে স্কুলছাত্র তমালের মৃত্যুর ঘটনায় ধোয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ বলছে, সমবায় মার্কেট ভবন থেকে লাফিয়ে তমাল আত্মহত্যা করেছে। তবে পরিবারের দাবি, তাকে কৌশলে কুষ্টিয়ায় ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আত্মহত্যা করার মতো তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাছাড়া এর আগে তমাল একা কখনো কুষ্টিয়ায়ও যায়নি। ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যার কথা বলা হলেও তার দেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। এই মৃত্যুর রহস্য উন্মোচনে কাজ করছে পুলিশ ছাড়াও পিবিআই ও সিআইডি।
এদিকে, জুয়েল রানা তমালের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খুস্তার জামিল। তিনি এক শোকবার্তায় শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতিগভীর সমাবেদনা জানিয়ে মৃত্যুর রহস্য উন্মোচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান।
পরিবারসূত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল ৮টার দিকে তমাল বাড়ি থেকে তড়িঘড়ি করে বের হয়ে যায়। নাস্তাও করেনি। কাউকে কিছু না বলে তড়িঘড়ি করে বাড়ি থেকে বের হয়। অনেকের ধারণা পরিচিত কারও সাথে দেখা করার জন্য তমাল দ্রুত বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু পরে আর ফিরে আসেনি। ঠিক সোয়া এক ঘন্টা পর কুষ্টিয়া শহরের কাটাইখানা এলাকায় তমালকে মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়। দুপুরে কুষ্টিয়া থানা পুলিশ মোবাইলফোনে রিং করে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কথা তমালের পরিবারকে জানায়।
হাসপাতাল ও কুষ্টিয়া থানা পুলিশসূত্র জানিয়েছে, সকাল ৯টার দিকে তমালকে মুমূর্ষু অবস্থায় কুষ্টিয়ার কাটাইখানার মোড় এলাকা থেকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
কাটাইখানা এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, সকাল সোয়া ৯টার দিকে শব্দ হলে অনেকে শব্দের কারণ ও উৎস জানতে বাইরে বের হন। সে সময় সমবায় মার্কেটের সামনে রাস্তার ওপর মুমূর্ষু অবস্থায় এক কিশোরকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। অজ্ঞান ওই কিশোরের চোখ বাঁধা ছিল মাস্ক দিয়ে। নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। বাম হাতের কনুই এর নিকট দুটি দাগ ছিল। তাদের ধারণা সমবায় মার্কেটের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে ওই কিশোর আত্মহত্যা করেছে।
তমালের বাবা মাসুদ রানা তুহিন জানান, সকাল ৮টার দিকে তমাল প্রাইভেট পড়তে যাচ্ছে বলে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। দুপুরে পুলিশ তাকে ফোন করে জানায় যে তমাল মারা গেছে। লাশ মর্গে রাখা হয়েছে। ইতঃপূর্বে সে কখনও একা কুষ্টিয়া শহরে যায়নি। আমার ছেলেকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি আইনের আশ্রয় নেবো। আমার ছেলে অত্যন্ত নিরীহ ও ভদ্র। তাকে পরিকল্পিতভাবে মেরে ফেলা হয়েছে। আত্মহত্যার মতো কোন কারণ ঘটেনি।
গতকাল রাতে লাশ গোসল করানোর সাথে সম্পৃক্ত কয়েক জনের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, তমালের রাম হাতের কনুই এর নিকট দুটি দাগ ছাড়া সারা শরীরে আর কোন ক্ষত বা চিহ্ন ছিলো না। শুধু নাক-মুখের ভেতর রক্ত দেখা গেছে। কুষ্টিয়া থানা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যে ভবন থেকে তমাল লাফ দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে কোন ধরনের আলামত পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসলেই আসল রহস্য জানা যাবে।
এদিকে এ রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় কুষ্টিয়া থানা পুলিশ ও আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। কুষ্টিয়া গোয়েন্দা পুলিশের ওসি নাসির উদ্দীন বলেন, কারা তমালকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য খোঁজ করা হচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা হচ্ছে।
আলমডাঙ্গা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম জানান, আমরাও বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছি। শহরের বিভিন্ন সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করছি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তমালের দুজন বন্ধুকে থানা হেফাজতে নিয়েছি। ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যায় লাশ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এ সময় পাড়াজুড়ে শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। একমাত্র ছেলের অকাল মৃত্যুতে বাবা-মাসহ নিকট আত্মীয়দের বুকফাঁটা আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে।
জানাজা শেষে রাত ১০টার দিকে লাশ আলমডাঙ্গা দারুস সালাম প্রাঙ্গণে দাফন করা হয়েছে। জানাজায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান, আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম, আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী মাস্টার, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, সম্পাদক মতিয়ার রহমান ফারুক, চুয়াডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন হেলা, চুয়াডাঙ্গা জজ কোর্টের পিপি বিল্লাল, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. সালমুন আহমেদ ডন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ লিয়াকত আলী লিপু মোল্লা, পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সাইফুর রহমান পিন্টু, অ্যাড. মোখলেছুর রহমান, পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম অপু মোল্লা, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি আশরাফুল হক। এছাড়াও আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, সাংবাদিকবৃন্দ তমালের মৃত্যুতে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।