স্টাফ রিপোর্টার: বিদ্যুত ও জ্বালানি সাশ্রয়ে আজ সোমবার রাত ৮টার পর সারাদেশে দোকানপাট শপিংমল মার্কেট বিপণিবিতান ও কাঁচাবাজার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সরকারি এই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে জরুরি মেডিক্যাল সেবা এবং মানুষের জানমাল রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ এমনসব দোকানপাট খোলা রাখা যাবে। তরিতরকারি-মাছ-মাংসের বাজার খোলা রাখা গেলেও বন্ধ থাকবে মুদিপণ্যের দোকান। এ ব্যাপারেও বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ১১৪ ধারা অনুসরণ করার কথা জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনে মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করা হবে।
গতকাল রোববার বিকেলে সচিবালয়ের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন, এফবিসিসিআই, এমসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি, ঢাকা চেম্বারসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী মালিক সংগঠন এবং শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং বাণিজ্য, বিদ্যুত, শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী জানান, রাত ৮টার পর আর দোকানপাট, মার্কেট, বিপণি বিতান ও শপিংমল খোলা যাবে না। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুশাসন। এ কারণে প্রত্যেকে যে যার অবস্থান থেকে পুরো বিষয়টি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবেন এটাই প্রত্যাশা করছি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে বসে আমরা সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছি, প্রধানমন্ত্রী যে অনুশাসন, নির্দেশনা দিয়েছেন, এটা আমাদের আইনেও আছে। এটার প্রতিপালন আগামীকাল সোমবার থেকেই শুরু হবে।
তিনি বলেন, এ অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য নতুন নয়। মহামারী করোনার সময় রাত ৮টায় সব জরুরী সেবা ছাড়া সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যেত। আর এখন বিদ্যুত ও জ্বালানি সাশ্রয়ে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, সারাবিশ্বে এখন এক ধরনের সঙ্কট চলছে। বিশেষ করে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদেরও বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে সর্বক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হওয়া এবং অপচয় কমিয়ে আনতে হবে। পরিস্থিতি আবার যদি স্বাভাবিক হয়ে আসে তখন হয়ত এসব সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের বিষয়ে ভাবা যেতে পারে। কিন্তু এখন সরকারি এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। বৈঠকে আগামী কোরবানি ঈদ সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা ১ থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত দুঘণ্টা বাড়িয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত দোকানপাট ও শপিংমলসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার অনুরোধ করেন। তবে ব্যবসায়ীদের এই দাবি একেবারে প্রত্যাখ্যান না করে প্রতিমন্ত্রী জানান, এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা চাওয়া হবে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের দাবিটি সামারি আকারে শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হবে। পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর। তিনি আরও জানান, রাত ৮টার পর দোকানপাট ও মার্কেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে সারাদেশে সংশ্লিষ্টদের কাছে সরকারি নির্দেশনা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এছাড়া পুরো বিষয়টি মনিটরিং করতে প্রতিদিন ২৩টি জেলা কার্যালয় থেকে তথ্য সংগ্রহ করবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। তবে বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ অনুযায়ী কোন কোন প্রতিষ্ঠান এই নির্দেশনার বাইরে থাকবে তা তুলে ধরেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. এহছানে এলাহী। রাত ৮টার পরও যেসব প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাবে সেগুলো হচ্ছে-ডক, জেটি, স্টেশন অথবা বিমানবন্দর এবং পরিবহন সার্ভিস টার্মিনাল অফিস, তরি-তরকারি, মাংস, মাছ, দুগ্ধজাতীয় সামগ্রী, রুটি, পেস্ট্রি, মিষ্টি এবং ফুল বিক্রির দোকান, ওষুধ, অপারেশন সরঞ্জাম, ব্যান্ডেজ অথবা চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান, দাফন ও অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রির দোকান, তামাক, সিগারেট, পান-বিড়ি, বরফ, খবরের কাগজ, সাময়িকী বিক্রির দোকান এবং দোকানে বসে খাওয়ার (হালকা) নাস্তা বিক্রির খুচরা দোকান, খুচরা পেট্রোল বিক্রির জন্য পেট্রোল পাম্প এবং মেরামত কারখানা নয় এমন মোটর গাড়ির সার্ভিস স্টেশন, নাপিত এবং কেশ প্রসাধনীর দোকান, যেকোন ময়লা নিষ্কাশন অথবা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, যেকোন শিল্প, ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠান যা জনগণকে শক্তি আলো-অথবা পানি সরবরাহ করে, ক্লাব, হোটেল, রেস্তরাঁ, খাবার দোকান, সিনেমা অথবা থিয়েটার।
মুদি দোকানের ক্ষেত্রে কী হবে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে সচিব মো. এহছানে এলাহী বলেন, আইনে যেসব প্রতিষ্ঠান নির্দেশনার বাইরে থাকবে বলা হয়েছে। তার বাইরে সব ধরনের দোকান বন্ধ থাকবে। সেক্ষেত্রে মুদি দোকানও রাত ৮টার পর বন্ধ থাকবে। উল্লেখ্য, এর আগে গত ১৬ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকের সই করা চিঠিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী জ্বালানির অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধিজনিত বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিদ্যুত ও জ্বালানি সাশ্রয়ের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী সানুগ্রহ নির্দেশনা দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ১১৪ ধারার বিধান কঠোরভাবে প্রতিপালনপূর্বক সারাদেশে রাত আটটার পর দোকান, শপিংমল, মার্কেট, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার ইত্যাদি খোলা না রাখার বিষয়টি যথাযথভাবে নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।