রহমান মুকুল: ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিতে পাঠকের বাড়ি বাড়ি চাহিদামাফিক বই পৌঁছে দিচ্ছে আলমডাঙ্গার স্বয়ম্ভর লাইব্রেরি। স্বয়ম্ভর লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষের এমন সময়োপযোগী পদক্ষেপ সচেতনমহলে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। এমনিতেই আমাদের সমাজে বই পড়ার প্রচলন সাংঘাতিকভাবে হ্রাস পেয়েছে। সত্যিকার অর্থে জ্ঞানার্জন কিংবা সাহিত্য-রস আহরণের জন্য এখন আর তেমন কেউ বই পড়ে না বললেই চলে। সমকালে ফেসবুক, ইউটিউবের অপব্যবহার তরুণ প্রজন্মকে বই বিমুখ করেছে। উপরন্তু, ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতির কারণে গত মার্চ মাস থেকে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। পড়ালেখার চাপ নেই। প্রায় সকল অভিভাবকের একই অভিযোগ, সন্তান বাড়িতে মোটেও পড়ছে না। এমন দুঃসময়ে শিক্ষার্থীদের বইমুখি করা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে।
এ সময়েও কেউ কেউ প্রকৃত জ্ঞানার্জন কিংবা সাহিত্যচর্চার তাগিদে লাইব্রেরিতে যাওয়া আসা করেন। আশার কথা হলো-এ শ্রেণির মানুষের সংখ্যা নেহায়েত কম না। প্রকৃত জ্ঞান ও সাহিত্য পিপাসু মানসিকতা সৃষ্টিতে সকল সময়ে লাইব্রেরি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। জ্ঞানের ক্ষুধা মেটানোর একমাত্র স্থান হলো লাইব্রেরি। সেকারণে লাইব্রেরিকে সকল জ্ঞানের মিথ বলা হয়ে থাকে। বেশ কয়েক বছর ধরে আলমডাঙ্গা পাবলিক লাইব্রেরি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। মাঝে মধ্যে নামমাত্র খোলা হলেও সেখানে পাঠের মানসিকতা নিয়ে যাতায়াত করতে তেমন কাউকে দেখা যায় না। তাছাড়া এখন এ বিষম করোনাকালে ঐতিহ্যবাহী পাবলিক লাইব্রেরির দরজা স্থায়ীভাবে রুদ্ধ। ফলে, নিয়মিত পাঠকরা বই পড়া থেকে বঞ্চিত হওয়ার ফলে দীর্ঘদিনের গড়ে ওঠা পাঠাভ্যাস নষ্ট হচ্ছে। এমতাবস্থায়, শিক্ষার্থীদের অসামাজিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাতদিন ইউটিউব আর ফেসবুকের অপব্যবহার বেড়েছে। এমনকি শিক্ষার্থীদের আচরণেও নেতিবাচক হয়ে ওঠার সাংঘাতিক অভিযোগ তুলছেন অনেক অভিভাবক। অথচ, এ সাংঘাতিক সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেনি প্রশাসন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা রাজনৈতিক কোনো পদক্ষেপ। তবে ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও এ দুঃসময়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে আলমডাঙ্গার স্বয়ম্ভর লাইব্রেরি। করোনা পরিস্থিতিতে পাঠকের পক্ষে এই লাইব্রেরিতে উপস্থিত হয়ে বই পড়া সম্ভব হচ্ছে না। অনেকেই বাড়ি থেকে সাধারণত বের হচ্ছেন না। এ পরিস্থিতিতে লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ পাঠকের চাহিদামাফিক বই বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
স্বয়ম্ভর লাইব্রেরির লাইব্রেরিয়ান বাবুল হোসেন জানান, ‘আমাদের লাইব্রেরির নিজেস্ব ওয়েবসাইট আছে। সেই ওয়েবসাইটে গিয়ে বইয়ের তালিকা থেকে ইচ্ছেমতো বই পছন্দ করলেই পাঠকের বই বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। অনেক পাঠক যারা লেখাপড়ার জন্য শহরে বসবাস করতেন কিন্তু করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারা গ্রামে নিজের পরিবারে ফিরে গেছেন। তাদেরকেও গ্রামে গ্রামে গিয়ে বই পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।’
আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের সমাজ-বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাপস রশীদ বলেন, বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। কবে খুলবে এমনকি এ বছরে আদৌ পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে কিনা সে সম্পর্কিত কোনো তথ্য কারও কাছে নেই। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের বই বিমুখ হওয়া খুব স্বাভাবিক। এ প্রজন্মের কিশোর-যুবকদের মধ্যে নৈতিকতা, মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করতে হলে তাদেরকে লাইব্রেরিমুখী করা প্রয়োজন। যেভাবেই হোক শিক্ষার্থীদের পাঠ্যাভাস ধরে রাখতে হবে।
শুদ্ধ সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র বাংলাদেশের সভাপতি আতিকুর রহমান ফরায়েজী বলেন, আমরা যারা সাহিত্য চর্চার সাথে জড়িত, তাদের নিয়মিত পড়াশোনার জন্য ঋদ্ধ লাইব্রেরি অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। কিন্তু করোনাকালে লাইব্রেরি গিয়ে পাঠ সম্ভবপর না। এ ক্ষেত্রে স্বয়ম্ভর লাইব্রেরির বাড়ি বাড়ি গ্রন্থ পৌঁছে দেয়ার কর্মসূচি বেশ উপকারে এসেছে। স্বয়ম্ভর লাইব্রেরির এ কর্মসূচি দেশের সকল লাইব্রেরির জন্য অনুস্মরনীয় হতে পারে।