বিশেষ প্রতিনিধি: দামুড়হুদা উপজেলার পাটাচোরা-বাঘাডাঙ্গা গ্রামের খেয়াঘাটে ভৈরব নদের ওপর নির্মাণ হবে আরও একটি স্বপ্নের সেতু। ইতোমধ্যে মাটি পরীক্ষাসহ সেতু নির্মাণের নির্ধারিত স্থান চুড়ান্ত হয়েছে এবং সেতু নির্মাণের জন্য প্রকল্প পরিচালকের সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প পরিচালকের সদর দফতরে সেতুটি এখন নকশা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে পাল্টে যাবে এ জনপদের খেয়া পারাপারের দুর্বিসহ জীবন।
জানা গেছে, ভারতের গঙ্গার শাখা নদী জলাঙ্গি থেকে ভৈরর নদ উৎপত্তি হয়ে মেহেরপুরের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার সুবলপুর নামক স্থানে এসে মাথাভাঙ্গা নদীর সাথে মিশেছে। মাথাভাঙ্গা নদীর সাথে মিশে যাওয়ার আগে এ নদটি দামুড়হুদা সদরের পাটাচোরা গ্রামকে মুড়িয়ে আসে। তাতে পাটাচোরা গ্রামের সাথে পাশ্ববর্তী গ্রামের সড়ক পথের যাতায়াত ও যোগাযোগ বিছিন্ন হয়। গ্রামটির আরেকদিকে বইছে মাথাভাঙ্গা নদী। বাধ্য হয়ে যোগাযোগ সচল রাখতে পাটাচোরা-বাঘাডাঙ্গা নামক স্থানে নদটি পারাপারের জন্য খেয়া পারাপারের ব্যবস্থা করে কোনো একসময় পাটাচোরা গ্রামবাসী। তদুপরি পাটাচোরা-বাঘাডাঙ্গা নামেই পরিচিতি লাভ করে এ খেয়াঘাটটি। এক সময়ের তীব্র খোর¯্রােতা এ ভৈরব নদের বুকে ছিলো উত্তাল টেউ। সেসময় এই খেয়াঘাটে নৌকায় পারাপার হতে এলাকার মানুষের বুক কেঁপে উঠতো। এখন সেই ভৈরব নদের বুকে শুস্ক মরসুমে পানি গিয়ে দাড়ায় মরা খালে। তবে বর্ষা মরসুমে নদটি ফুলে উঠে। বর্তমানের এই খেয়াঘাটে গত তিন বছর ধরে জহর মাঝি নদের এপার ওপার দড়ি টানা বেঁধে নৌকায় করে মানুষজন পারাপার করে চলেছেন। কিন্তু শুস্ক মরসুমে এই স্থানে মানুষজন পারাপার হন ছোট বাঁশের মাচার ওপর পায়ে হেঁটে হেঁটে। সব মরসুমেই নিরাপদে দ্রুত পথ চলতে এলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে এখানেই নির্মাণ হবে স্বপ্নের সেতু।
পাটাচোরা গ্রামের মো. হুরমত আলী বলেন, একসময় এ নদের বুকে উত্তাল ঢেউ ছিলো। মাঝি মাল্লারা পাল তোলা নৌকা নিয়ে চলাচল করতো। সেসময় পাটাচোরার খেয়াঘাট দিয়ে নৌকায় পার হতে বুক কেঁপে উঠতো। শুস্ক মরসুমে সেই নদের আজ করুণ অবস্থা! নদের ওপারে আমাদের রয়েছে বেশকিছু জমাজমি। এই খেয়াঘাটে ওপারের মুখে সেতু করতে নিজেদের দেড় বিঘার আমবাগান কেটে দিয়ে সেতুর তৈরীর রাস্তার জন্য ছেড়ে দিয়েছি। এই খেয়াঘাটে সেতু নির্মাণের দীর্ঘদিনের দাবী ছিলো এলাকাবাসীর। কাঙ্খিত সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে পাল্টে যাবে এ জনপদের চিত্র। দুর হবে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের খেয়াপারের যন্ত্রনা।
গ্রামের অপর মুরব্বী আবু তাহের ও শহিদুল ইসলাম বলেন, বর্ষা মরসুমে এই খেয়াঘাটে সেতুর অভাবে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয় এলাকার মানুষ। বর্ষাকাল এলেই বেড়ে যায় তাদের দুর্ভোগ। বিশেষ করে মহিলা ও স্কুলগামী শিশু শিক্ষার্থীরা বেশি বিপাকে পড়ে। বর্ষার সময় ঘাট বেঘাট হয়ে পানির স্্েরাতে খেয়া পারাপার ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তাতে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী, মুমুর্ষরোগী ও বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের নদটি পার হতে দুর্ভোগে পড়তে হয়। এই খেয়াঘাটে একটা সেতুর জন্য এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের হাহাকার লেগে ছিলো। বছরের পর বছর অপেক্ষায় ছিলাম সেতুর জন্য। অপেক্ষার পালা শেষ, আশা করছি, শিগগিরই বাস্তবায়ন হবে আমাদের স্বপ্নের সেতু।
দামুড়হুদা উপজেলা প্রকৌশলী মো. মাহবুব-উল হক বলেন, উপজেলার পাটাচোরা-বাঘাডাঙ্গা খেযাঘাটের নদের ওপর সেতু নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থানে মাটি পরীক্ষা ও মাফ জোপের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নদের ওপর ৯৬ মিটার লম্বা ও ৫ দশমিক ৫ মিটার চওড়া সেতু নির্মাণের জন্য প্রকল্প পরিচালকের সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে। এখন সেতুটির ডিজাইনের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ডিজাইনের কাজ শেষ হলে টেন্ডার পর্ব। তারপর সেতুর কাজ শুরু হবে।