স্টাফ রিপোর্টার: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মদিন আজ। ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এই মহীয়সী নারী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে নিষ্ঠুর, বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়ে তিনি শাহাদত বরণ করেন। সে সময় তার বয়স ছিলো মাত্র ৪৫ বছর। বাল্যকাল থেকে যে মানুষটিকে জীবনসঙ্গী করে আমৃত্যু সাহচর্যের পণ করেছিলেন তিনি বিদায়ও নিলেন তার সঙ্গে। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাড়াও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে জাতীয়ভাবে দিবসটি উদযাপন করবে। এবার এ দিবসে প্রথমবারের মতো বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা পদক দেবে সরকার। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে আজ রোববার দেশের ৫ বিশিষ্ট নারীকে এ পদক দেয়া হবে। আমৃত্যু মানবিক ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ডাকনাম ছিল রেনু। সারাজীবন চলেছেন সাধাসিধেভাবে। নিজের চেয়ে পরিবারের কথা ভেবেছেন বেশি। বঙ্গবন্ধুর জীবনসঙ্গী হিসেবে সংগঠনের কথাও ভাবতে হয়েছে তাকে। ছোটবেলায় বাবা-মাকে হারিয়ে স্বজনদের সঙ্গে বেড়ে ওঠেন তিনি। মাত্র ৩ বছর বয়সে বাবা শেখ জহুরুল হক ও ৫ বছর বয়সে মা হোসনে আরা বেগম পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে পড়ার সময় দাদা শেখ কাসেম চাচাতো ভাই শেখ লুৎফর রহমানের ছেলে শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ফজিলাতুন্নেছার বিয়ে দেন। বিয়ের পর সামাজিক রীতিনীতির কারণে স্কুলের বদলে গৃহশিক্ষকের কাছে লেখাপড়া করেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই গৃহী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পরিবারের সদস্যদের প্রতি সব সময় দায়িত্বশীল ছিলেন। জীবদ্দশায় স্বামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নানা পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়ে লড়াই-সংগ্রামের প্রেরণা জুগিয়েছেন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ তৎকালীন সব সংগ্রামে তিনি গণমানুষের পক্ষে অবস্থান নিয়ে সব কষ্ট সহ্য করেছেন। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামময় জীবনে তিনি যেমন পরিবারের হাল ধরেছিলেন পরম মমতায়, তেমনি সাংগঠনিক দায়িত্বও পালন করেছেন যথেষ্ট সাহসিকতার সঙ্গে। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে মহীয়সী ফজিলাতুন্নেছা মুজিব দিকনির্দেশনা দিয়ে দলীয় নেতাকর্মী ও অনুসারীদের সাহস জোগাতেন। কারাবন্দি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ ও নির্দেশনা নেতাকর্মীদের জানাতেন। ১৫ আগস্ট বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েও বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে হত্যাকারীদের এই জঘন্য কর্মকান্ডের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিপুল বিক্রমে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বঙ্গবন্ধুর সব সাহসী পদযাত্রায় বেগম মুজিব ছিলেন সক্রিয় সহযাত্রী। আগরতলা মামলায় বঙ্গবন্ধু কারারুদ্ধ হওয়ার পর তার প্যারোলে মুক্তির জন্য সক্রিয় গ্রুপটি সফল হতে পারেনি বঙ্গমাতার জন্য। বাঙালির স্বাধীনতা ও মুক্তির চূড়ান্ত মাহেন্দ্রক্ষণে বঙ্গমাতাই তার জীবনসঙ্গী বঙ্গবন্ধুকে সঠিক পথ বাতলে দিয়েছিলেন। বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রসঙ্গে তার কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে অনেকে অনেক রকম পরামর্শ দিয়ছেন বঙ্গবন্ধুকে। কিন্তু আমার মা তাকে বলেছিলেন, তোমার যা মনে আসে তাই বলো।’ বঙ্গবন্ধুর অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে উৎসারিত ১৯ মিনিটের সে ভাষণটি শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার অনানুষ্ঠানিক ঘোষণাই ছিল না, পৃথিবীর ইতিহাসের একটি বহুল প্রচারিত ও সেরা ভাষণ হিসেবে বিবেচিত হয়। বঙ্গমাতার জন্মদিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আজ সকাল ৯টায় বনানী কবরস্থানে তার সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। একই স্থানে কোরআনখানি ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ, অঙ্গ-সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতীম ও সমমনা সংগঠনগুলোসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্মসূচি পালনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও মহীয়সী নারী বঙ্গমাতার জন্মদিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সব স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ই-পোস্টার এদিকে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারের জন্য দুটি ই-পোস্টার প্রকাশ করা হয়েছে। শনিবার কমিটির প্রধান মিডিয়া কর্মকর্তা নাসরীন জাহান লিপি স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।