স্টাফ রিপোর্টার: ঘন কুয়াশার কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ১২ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। দীর্ঘ সময় ফেরি বন্ধ থাকায় যানবাহন পারাপার কমে যাওয়ায় রাজস্বও কমে গেছে। এছাড়া পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় সাড়ে ১১ ঘণ্টা, বাংলাবাজার-শিমুলিয়া সাড়ে নয় ও শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে নয় ঘণ্টা ফেরি বন্ধ ছিলো। এতে এসব ঘাটে আটকা পড়ে হাজারও যানবাহন। দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রী, পরিবহন চালক ও শ্রমিকদের। রাজবাড়ী : ঘন কুয়াশার কারণে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ১২ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রী ও চালকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এক সপ্তাহ ধরে কুয়াশার কারণে রাতের বেশিরভাগ সময় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকলেও যাত্রী দুর্ভোগ কমাতে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ।
শনিবার রাত ১০টা থেকে কুয়াশার কারণে নৌরুটের মার্কিং বাতি অস্পষ্ট হয়ে গেলে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এতে করে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া প্রান্তে আটকা পড়ে সাত শতাধিক যানবাহন। গতকাল সকাল ১০টায় কুয়াশার ঘনত্ব কমে গেলে পুনরায় ফেরি চলাচল শুরু করে। দীর্ঘ সময় ফেরি বন্ধ থাকায় রাজবাড়ী গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় চার শতাধিক যানবাহন এবং দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় তিন শতাধিক ঢাকামুখী যানবাহন আটকা পড়ে। আটকে পড়া যাত্রী ও যানবাহনকে ২০ ঘণ্টা অপেক্ষা করে ফেরি নাগাল পেতে হয়। তবে অপচনশীল দ্রব্যের ট্রাকগুলোকে আরও দুইদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করে ফেরির নাগাল পেতে হবে। গোয়ালন্দ মোড় আটকে পড়া ট্রাকচালক আব্দুর রব জানান, কুয়াশার কারণে রাতের বেশিরভাগ সময় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। চলাচল শুরু হলেও প্রথমে অ্যাম্বুলেন্স, যাত্রীবাহী বাস, পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার করে ঘাট কর্তৃপক্ষ। ফলে আমাদের সিরিয়াল পেতে তিন দিন পর্যন্ত লেগে যায়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত ১০ দিন ধরে দুর্ভোগ হলেও এ রুটে কোনো ফেরি বৃদ্ধি করা হয়নি। যে কারণে ভোগান্তি কমেনি। ট্রাফিক ইন্সপেক্টর তাজ বলেন, ফেরির বিষয়টি বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ দেখভাল করেন। কুয়াশায় আটকে পড়া যানবাহন যেনো মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি না করে সেই বিষয়টি দেখার জন্য রাজবাড়ী ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছে। বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের ব্যবস্থাাপক আবু আবদুল্লাহ রনি বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে বর্তমানে সর্বোচ্চ সংখ্যক ফেরি চলাচল করছে। বর্তমানে এ রুটে আর বৃদ্ধির কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই।
মানিকগঞ্জ : ঘন কুয়াশার কারণে পাটুরিয়া দৌলতদিয়া নৌরুটে শনিবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয় ঘাট কর্তৃপক্ষ। এ সময় যাত্রী ও পরিবহন নিয়ে মাঝ নদীতে আটকা পড়ে পাঁচটি ফেরি। এই দীর্ঘ সময় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় পাটুরিয়া প্রান্তে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা। কুয়াশা কেটে গেলে গতকাল সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে ফেরি চলাচল শুরু হয়। বিআইডব্লিউটিসির পাটুরিয়ার অঞ্চলের (বাণিজ্য শাখার) সহকারী মহা-ব্যবস্থাাপক জিল্লুর রহমান জানান, শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে কুয়াশার তীব্রতা বেড়ে গেলে দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। এ সময় ঘন কুয়াশায় মাঝ নদীতে পাঁচটি ফেরি আটকে পড়ে। সাড়ে ১১ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় পাটুরিয়া প্রান্তে শত শত যানবাহন পারের অপেক্ষায় আটকা পড়ে। সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে কুয়াশা কেটে গেলে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়। এই নৌরুটে বর্তমানে ১৬টি ফেরি রয়েছে।
মাদারীপুর : ঘন কুয়াশার কারণে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে প্রায় সাড়ে ৯ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ফেরিসহ সব নৌযান চলাচল স্বাভাবিক হয়। কুয়াশা কেটে গেলে গতকাল সকাল ১০টা থেকে ফেরি, লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল শুরু করে। এর আগে অতিরিক্ত কুয়াশার কারণে শনিবার দিবাগত রাত দেড়টা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ ছিলো। এ ছাড়াও সকাল থেকে লঞ্চ ও স্পিডবোটও বন্ধ রেখেছিল কর্তৃপক্ষ।
বিআইডব্লিউটিসি’র বাংলাবাজার ঘাট সূত্রে জানা গেছে, ঘন কুয়াশার পরিমাণ বাড়তে থাকলে শনিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বন্ধ রাখা হয় ফেরি চলাচল। এ সময় চলাচলরত কয়েকটি ফেরি মাঝ পদ্মায় নোঙর করে রাখা হয়। গতকাল সকাল ১০টার দিকে কুয়াশা কিছুটা কমে এলে ফেরি চলাচল শুরু করে। এ ছাড়াও লঞ্চ ও স্পিডবোটেও যাত্রী পারাপার শুরু হয়। মাঝ পদ্মায় আটকে থাকা ফেরিগুলোও গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।
এদিকে দীর্ঘসময় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় বাংলাবাজার ঘাট এলাকায় আটকে পড়ে দুই শতাধিক পরিবহন। এছাড়াও লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ থাকায় ঘাট এলাকায় যাত্রীদের চাপ বৃদ্ধি পায়।