স্টাফ রিপোর্টার: স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে একক প্রার্থী দেবে বিএনপি। এ নির্বাচনে জোট ও ফ্রন্টের মার্কাও হচ্ছে ধানের শীষ। ধানের শীষের এই প্রার্থীদের পক্ষে সক্রিয়ভাবে কাজ করবেন ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। শরিক দলের বেশিরভাগ নেতা ইতিমধ্যেই তাদের সমর্থন ঘোষণা করেছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতিও শুরু করেছে বিএনপি। তবে এবার দলীয় প্রার্থী নির্বাচনে তৃণমূলের মতামতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের নীতিমালা প্রণয়নও শেষ করেছে দলটি। সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারেও খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। ফলে করোনাভাইরাসের এই চলমান প্রকোপের মধ্যেও চাঙ্গা হয়ে উঠছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। গ্রামাঞ্চলে শুরু হয়ে গেছে নির্বাচনী বাতাস। দল ও জোটের শীর্ষস্থানীয় নেতারা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী ডিসেম্বরে দেশের দুই শতাধিক পৌরসভায় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিএনপিও ইতিমধ্যে স্থানীয় সরকারসহ সব নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এতে বিএনপির তৃণমূলে ব্যাপক চাঙ্গাভাব দেখা দিয়েছে। সম্ভাব্য প্রাার্থীদের অনেকেই মাঠে নেমে পড়েছেন। করোনা মহামারী উপেক্ষা করেই দলীয় নেতা-কর্মীসহ স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ও শুভেচ্ছা বিনিময় শুরু করেছেন তারা। বিশেষ করে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রচার-প্রচারণা তুঙ্গে উঠেছে। কেউ কেউ কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে লবিং-তদ্বিরও শুরু করে দিয়েছেন। জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনের মতো একই পদ্ধতিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতেও দলীয়ভাবে প্রার্থী চূড়ান্ত করবে বিএনপি। এক্ষেত্রে আলাদাভাবে ২০-দলীয় জোট কিংবা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো মতামত নেওয়া হবে না। তবে এলাকায় জনপ্রিয়তার ওপর ভিত্তি করে বিশেষ বিবেচনায় দু-চারটা এলাকায় জোট বা ফ্রন্টের প্রার্থীকে ছাড় দেয়া হতে পারে বলে জানা যায়। প্রার্থী থাক বা না থাক ভোটের মাঠে ধানের শীষের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ ২০-দলীয় জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। জোট ও ফ্রন্টের নেতারাই এ তথ্য জানিয়েছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি বলেন, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের কোনো আস্থা নেই। কারণ নির্বাচন প্রক্রিয়াটাকে এই নির্বাচন কমিশন একেবারেই নষ্ট করে দিয়েছে। ফলে তাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তারপরও আমরা নির্বাচনে গিয়েছি এ জন্য যে সমগ্র জাতি আবারও দেখুক এই ইসি কী ধরনের নির্বাচন করে! দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচন যে কী রকমের হবে সেটা দেশের প্রত্যেকটা মানুষ ভালো করেই জানেন। তারপরও আমরা এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি প্রধানত দুটি কারণে। এক. দেশবাসীর সামনে সরকার ও ইসির চরিত্র তুলে ধরার জন্য। দুই. এই প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও সারা দেশে তৃণমূলে নেতা-কর্মীদের মধ্যে কিছুটা হলেও চাঙ্গাভাব তৈরি হবে। জানা গেছে, ২০-দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টের নেতারাও এবার স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে খুব বেশি আগ্রহী নন। এর কারণ হচ্ছে, তৃণমূল পর্যায়ে বেশিরভাগ স্থানেই তাদের জোট বা ফ্রন্টের যোগ্য প্রার্থী নেই। তাই জোটের প্রধান শরিক বিএনপি এককভাবে প্রার্থী দিলেও তাতে শরিকদের সমর্থন থাকবে। এ সম্পর্কে জোটের শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি দলীয়ভাবে প্রার্থী ঘোষণা করলেও ভোটের মাঠে আমরা জোটগতভাবেই থাকব এবং ধানের শীষের প্রার্থীকেই বিজয়ী করতে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাব। প্রসঙ্গত, পৌরসভা নির্বাচন ছাড়াও আগামী মার্চ মাসের শেষ বা এপ্রিল মাসের প্রথম থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু করতে পারে নির্বাচন কমিশন।