স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশ হত্যা মামলায় গ্রেফতার বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরার জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। পাঁচ দিনের রিমা- শেষে গতকাল বুধবার তাকে আদালতে হাজির করা হলে আদালত এ রায় দেন। এদিকে পাঁচ দিনের রিমা-ে ফারদিন হত্যাকা-ের বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য দেননি বুশরা। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রয়োজন হলে আবার তাকে রিমা-ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করা হবে।
এদিকে ঘটনার ১২দিন অতিবাহিত হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সংস্থায় হত্যাকা-ের নির্দিষ্ট ক্লু উদঘাটন করতে পারছে না। সম্ভাব্য ক্লুুর রেশ ধরে ইতোমধ্যে কয়েকজনকে আটক করার খবর পাওয়া গেলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তা স্বীকার করছে না কেউ।
নিহতের সহপাঠীরা বলছেন, ফারদিন লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও সম্প্রতি কিছু কর্মকা-ে অনেকের নজরে আসে। তারা বলছে, ছাত্রলীগের হাতে বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন এই ফারদিন। আবরার হত্যার প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিগুলোতে অন্যতম ভূমিকা রেখেছেন তিনি। এছাড়া বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির বন্ধ আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীদের একজন ছিলেন ফারদিন। এ ঘটনাগুলোর পর থেকেই সরকারদলীয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের নজরে আসেন ফারদিন। তারা বলেন, এ ঘটনার সাথে ডেমরার স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শাহীন ওরফে সিটি শাহীন বা অন্য যারাই জড়িত থাক তদন্ত করে বিষয়টি পরিষ্কার করতে হবে। তা না হলে বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থীদের একের পর এক হত্যার শিকার হতে হবে।
এদিকে পাঁচ দিনের রিমা- শেষে বুশরাকে গতকাল আদালতে হাজির করে পুলিশ। মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন আইও ডিবির পরিদর্শক মজিবুর রহমান। অন্যদিকে আসামির জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবী। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ আসামির জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সিএমএম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) হেমায়েত উদ্দিন খান হীরন এসব তথ্য জানান। এর আগে ১০ নভেম্বর বুশরাকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে রামপুরা থানা পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ৪ তারিখ থেকে বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ নিখোঁজ ছিলেন। ৫ তারিখ রাজধানীর রামপুরা থানায় এ বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার বাবা কাজী নূর উদ্দিন। নিখোঁজের দুই দিন পর গত ৭ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের লাশ উদ্ধার করে নৌপুলিশ। তার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। এরপরই তার দুই বন্ধু বুশরা ও শীর্ষ সংশপ্তককে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এরপর বুধবার রাতে একটি হত্যা মামলা দায়েরের পর বৃহস্পতিবার সকালে রামপুরার বাসা থেকে বুশরাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই দিনই ফারদিন হত্যা মামলায় তাকে পাঁচদিনের রিমা-ে পাঠান আদালত।
ফারদিনের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা উপজেলার নয়ামাটিতে হলেও তারা রাজধানীর ডেমরা এলাকার ভাড়া বাসায় থাকতেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে ফারদিন ছিলেন সবার বড়। তার মেজো ভাই আব্দুল্লাহ নূর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। ছোট ভাই তামিম নূর এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন।