স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকায় ১০ ডিসেম্বরের বিভাগীয় সমাবেশ বানচাল করতে সরকার বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ঢাকার সমাবেশকে বানচাল করতে মুন্সীগঞ্জে আমাদের নিরীহ লোকজনের ওপর হামলা চালিয়ে শহীদুল ইসলাম শাওনকে হত্যা করে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজানো হয়েছে। সেই মামলায় কেন্দ্রীয় সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মুন্সীগঞ্জ জেলার সদস্যসচিব কামরুজ্জামান রতনকে আটক করে রাখা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি রফিক হাওলাদার, যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি আলী আকবর চুন্নুসহ ৫০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।
গতকাল সোনারগাঁয়ের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সেখানে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে ৫০ জন নেতাকর্মীকে আহত করেছে। এগুলো হচ্ছে খ-িত চিত্র। সামগ্রিকভাবে এমন একটা আবহাওয়া তৈরি করছে ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে যেন মনে হচ্ছে ১০ তারিখে ঢাকায় একটা যুদ্ধ হবে। এটা তারা তৈরি করছে?
ফখরুল বলেন, আমরা একটা কঠিন সময়, ক্রান্তি লগ্নে উপস্থিত হয়েছি। এখানে আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন, অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে শত বাধা-বিপত্তি, আক্রমণ, নির্যাতন সহ্য করেও কিন্তু আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এগোচ্ছি, শান্তিপূর্ণ পথে এগোচ্ছি। এই অবৈধ সরকার অত্যন্ত অর্বাচীনের মতো এই দেশকে একটা স্থিতিহীনতার দিকে, অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং তারা একটা উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে আবার সেভাবে নিয়ে যেতে চাচ্ছে।
১০ ডিসেম্বর চূড়ান্ত আন্দোলন নয় জানিয়ে মির্জা ফখরুল স্পষ্ট করে বলেন, ঢাকার সমাবেশটা হচ্ছে আমাদের একটা বিভাগীয় সমাবেশ। আমরা যে ১০ বিভাগকে কেন্দ্র করে বিভাগীয় শহরে সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছিলাম, সেই সমাবেশগুলোর লাস্ট সমাবেশটা হচ্ছে ঢাকায়। ঢাকার এই সমাবেশ থেকে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি, পরবর্তী দাবিদাওয়াগুলো নিয়ে আরো বৃহত্তর আন্দোলন নিয়ে আমরা সামনে আসব। এটা তো চূড়ান্ত সমাবেশ নয়, চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচি নয়। এটা হচ্ছে আমাদের স্বাভাবিক বিভাগীয় গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের নেতা-মন্ত্রীরা প্রমাদ বকছে। গণভিত্তি না থাকলে যেটা হয়, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে যেটা হয় আর কি। প্রতি মুহূর্তে এরা নাইট মেয়ার দেখে, দুঃস্বপ্ন দেখে। এই মুহূর্তে বুঝি গেল গেল, আমার সব গেল। এই ভয়ে-আতঙ্কে তারা এখন রাষ্ট্রের সমস্ত যন্ত্রকে ব্যবহার করে হুমকি দিচ্ছে আবার। ছেড়ে দেওয়া হবে না, করতে দেওয়া হবে না, দেখে নেওয়া হবে।
ফখরুল বলেন, আরে তোমরা কি গু-াবাহিনীর সর্দার? তোমরা কি মাফিয়ার সর্দার? তাহলে ঘোষণা করো আমরা তাই। তাহলে আমরা তোমাদের রাজনৈতিক দলের মধ্যে রাখব না, গণতান্ত্রিক দলের মধ্যে চিন্তা করব না। গত ১৫টা বছর রাষ্ট্রযন্ত্রকে তারা সেইভাবে ব্যবহার করে এ দেশের মানুষের অধিকারগুলোকে হরণ করেছে।
‘হেফাজতের পরিণতি হবে বিএনপির’ -ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের এ রকম বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, সেই অবস্থা এখন আর নেই। আমি খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, হেফাজতের সময়ে তারা যেটা করেছে এখন জনগণের সঙ্গে সেটা তারা করতে পারবে না। কারণ জনগণ তাদের জায়গায় দাঁড়িয়ে গেছে এবং জনগণ যেকোনো মূল্যে এবার তাদের দাবি আদায় করে ছাড়বে। এইটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি, আমরা এমন কোনো কর্মসূচি নেব না যে কর্মসূচিতে জনগণের কষ্ট হবে। আমরা জনগণকে নিয়ে জনগণের দাবিগুলো বাস্তবায়নে আন্দোলন করে যাব।
সংবাদ সম্মেলনে গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম, ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ, ২২ অক্টোবর খুলনা, ৫ নভেম্বর বরিশাল, ১২ নভেম্বর ফরিদপুরে বিভাগীয় সমাবেশে বাধা প্রদান, নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন-অত্যাচার, গ্রেপ্তার, মামলা-হামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।