স্টাফ রিপোর্টার: স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে ‘কৌশলী’ অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে সব নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও ভোটের মাঠে থাকবে দলটি। এসব নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে অংশ না নিলেও স্বতন্ত্রভাবে নেতারা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে কাউকে দল থেকে শোকজ বা বহিষ্কার করা হবে না। কেন্দ্রের এমন মনোভাব জানার পর আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি), পৌরসভা ও উপজেলার নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য অনেক প্রার্থীই স্বতন্ত্র নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
যদিও নির্বাচনে অংশ নেয়া-না নেয়া নিয়ে বিএনপি নেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। দলটির একটি অংশ মনে করেন, শুধু শুধু নির্বাচনে গিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মামলা, হয়রানি, জেল-জুলুম, সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয় করার কোনো মানে নেই।
এসব নির্বাচনের মধ্যদিয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশন ভোটারদের আস্থা-বিশ্বাস সম্পূর্ণ নষ্ট করছে। তাই আগামীতে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তই সঠিক। আবার আরেকটি অংশ মনে করছেন, স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সক্রিয় করার একটা সুযোগ তৈরি হয়। এতে করে সাংগঠনিকভাবে দল আরও শক্তিশালী হয়।
বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানান, এ সরকার এবং নির্বাচন কমিশন দেশের ভোটিং সিস্টেমটাই ভেঙে ফেলেছে। তাদের অধীনে এ দেশে আর অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও সংসদের উপনির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে কেউ স্বতন্ত্রভাবে ভোট করতে চাইলে বাধাও দেওয়া হবে না।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার ও তাদের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের অধীনে দলীয়ভাবে আর কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত এখনও আছে। বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলেই এর আগে চরম প্রতিকূল অবস্থায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু সে নির্বাচনগুলোতে প্রমাণিত হয়েছে যে, এ নির্বাচন কমিশন কোনো নির্বাচনই নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার যোগ্যতা নেই। বর্তমান অনির্বাচিত সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই এ নির্বাচন কমিশনের কাজ।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, নির্বাচনে অংশ নিলেও বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিযোগিতাটা হচ্ছে না। বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা হচ্ছে একটা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সিভিল অফিসারদের একটি অংশের সঙ্গে। রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় জনগণের ট্যাক্সের টাকায় সংগঠিত একটি বাহিনী যদি দিনের পর দিন স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, সেখানে গিয়ে লোক ক্ষয় করে লাভ কি? বরং এদের সরানোর প্রচেষ্টা আরও জোরদার করা উচিত।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা নির্বাচনে অংশ নিলে সক্রিয় হতে পারত এটা যেমন ঠিক, আবার সেই সক্রিয় নেতাকর্মীদের ওপর যখন রাষ্ট্রীয় শক্তির আঘাত আসে তখন আবার একটা ভয়ের সঞ্চার হয়- এটাও ঠিক। আমরা সব কিছু বিবেচনা করে খুব শিগগিরই হয়তো আবার বসব। সেখানে আলাপ-আলোচনা করে সর্বশেষ পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত পুনর্মূল্যায়ন করা হবে।
সর্বশেষ গত বছরের ১২ নভেম্বর জাতীয় সংসদের ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। এরপর আর জাতীয় সংসদের কোনো উপনির্বাচন ও স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে তারা অংশ নেয়নি। মার্চে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দলটি।