স্টাফ রিপোর্টার: সাইক্লোনে রূপ নেয়া ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ আজ আঘাত হানছে। সকাল ৯টা থেকে অন্তত ১২ ঘণ্টা ধরে এটি তা-ব চালাতে পারে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের উপকূলে। শনিবার ঘূর্ণিঝড় লাইভ ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট জুুম ডট আর্থ এবং উইন্ডি ডটকম এ তথ্য জানিয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নি সেন্টারের বরাত দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছেন কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ। শনিবার রাত পৌনে ১১টায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, শনিবার রাত ৯টার দিকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা সুপার সাইক্লোনে রূপ নেয়। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ২৪০ কিলোমিটার। অন্যদিকে উইন্ডি ডটকমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ সময় রাত ৮টার দিকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা সুপার সাইক্লোনে রূপ নেয়। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটারের মধ্যে হলে সেটি প্রবল ঘূর্ণিঝড়, বাতাসের গতিবেগ ১১৮ থেকে ২২০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে তাকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এছাড়া বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটারের বেশি হলে তাকে সুপার সাইক্লোন বলা হয়। এদিকে জুম ডট আর্থের দেয়া হিসাব অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ উপকূল থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিলো। নাফ নদীর মোহনা দিয়ে স্থলভাগে উঠতে পারে বলে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন আবহাওয়া পূর্বাভাসকারী সংস্থার মডেলে দেখা যাচ্ছে। মূল আঘাতের সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকতে পারে ২০০ কিলোমিটার। ফলে বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন, শাহপরী, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও সন্দ্বীপসহ কক্সবাজার-চট্টগ্রামের দ্বীপগুলো লন্ডভন্ড করে দিতে পারে মোখা। ঝড়ের বড় ধাক্কা লাগতে পারে ভোলাসহ আশপাশের দ্বীপেও। আতঙ্ক দেখা দিয়েছে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন নিয়ে। দুপুরের দিকে এটির ওপর দিয়েই ঝড়ের মূল কেন্দ্র অতিক্রম করতে পারে। এ সময় কেবল ঝড়ের তা-বই নয়, ১৫ থেকে ২০ ফুটের জলোচ্ছ্বাসে পানির নিচে তলিয়ে চলে যেতে পারে এই দ্বীপ। এতে প্রাণহানি ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও রয়েছে।
যদিও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে ‘অতি প্রবল’ ঘূর্ণিঝড় হিসাবে এটি আসছে। কিন্তু আকার ও আক্রমণের গতি অনেকটা ২০০৭ সালের সিডর কাছাকাছি বা ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ের চেয়ে বেশি হবে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। ২০১৭ সাল থেকে বঙ্গোপসাগরে যত ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে সবগুলোই উপকূলের কাছাকাছি এসে শক্তি হারিয়েছে। কিন্তু মোখার ক্ষেত্রে ঘটছে উলটো। সন্ধ্যা ৭টার দিকে এর বাতাসের গতি ছিল ১০২ কিলোমিটার আর রাত ১০টায় ১০৬ কিলোমিটার। রোববার দুপুরের দিকে সেন্টমার্টিন অতিক্রমকালে এর বাতাসের গতি থাকতে পারে ১৬৯ কিলোমিটার। সাধারণত ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগ স্পর্শ করলে বাতাসের দাপট কমতে থাকে। কিন্তু মোখার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে। তখন এর ডানদিক এবং পেছনের অংশে ঝড়ো হাওয়ার গতি আরও বেড়ে যেতে পারে। এটিই এই ঝড়ের সবচেয়ে বিধ্বংসী দিক। ২০০৭ সালের সিডরের গতি ছিল ঘণ্টায় ২৬০ কিমি। আর ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের গতি ছিল সর্বোচ্চ ১৮০ কিলোমিটার। এটির আকার ছিল ৬শ কিলোমিটারজুড়ে। আর মোখার আকার সাড়ে ৫শ কিলোমিটার।
শনিবার আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, প্রত্যেকটা ঘূর্ণিঝড়ের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য থাকে। তাই সিডরের মতো না বলে প্রায় সিডরের সমান গতিবেগ নিয়ে ধেয়ে আসছে বলা যায়। সিডরের সঙ্গে মোখার তুলনা হচ্ছে শক্তি সঞ্চয়ের প্রকৃতিতে। এটি যতক্ষণ সাগরে আছে ততক্ষণই শক্তি বাড়াচ্ছে, যা সিডর করেছিল। আবার গত দুদিন যেভাবে এটি দমকা বাতাসের সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া প্রবাহিত করেছে, সেটিরও সিডরের সঙ্গে মিল আছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকার বিভিন্ন রকম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। গত দুদিন ধরে অন্তত ৫ লাখ নাগরিককে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে বলে সরকারি তরফে বলা হচ্ছে। সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজারের সব হোটেল-মোটেলকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে নিয়মিত আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও একই উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হবে। একইভাবে উপকূলীয় অন্যান্য জেলায়ও আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, মোখার অবস্থান, গতিপথ ও গতি বিবেচনা করে কক্সবাজার বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। আর চট্টগ্রাম ও পায়রা বন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ ও মোংলায় ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত থাকবে। শনিবার বেলা আড়াইটা থেকেই এটি কার্যকর হয়েছে। সেন্টমার্টিনের সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হলেও চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের শতভাগ নেওয়া সম্ভব হয়নি। তিনি আরও জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ও নির্দেশনায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয় দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করছে। উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতার লক্ষ্যে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের নেতৃত্বে সেনা, নৌ ও কোস্ট গার্ড কাজ করছে। এছাড়া পুলিশ বাহিনীও কাজ করছে। বিজিবি আলাদা নিয়ন্ত্রণ খুলেছে। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। যথাযথ আইনি ও নীতিগত কাঠামো, উপযুক্ত পরিকল্পনা, প্রশিক্ষিত এবং প্রস্তুত জনবল, যথেষ্ট মানবিক সহায়তা, নিবেদিতপ্রাণ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর পাশাপাশি আগাম সতর্কতার কারণে বিগত সময়ের মতো আমরা এই ঘূর্ণিঝড়টিও সফলভাবে মোকাবিলায় আত্মবিশ্বাসী।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের (বিএমডি) যুগ্ম-পরিচালক আসাদুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড়টির আকার প্রায় সাড়ে ৫শ কিলোমিটার। এটি ২০০৭ সালের ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় সিডরের মতোই শক্তিশালী। তবে সিডর দেশের মাঝ বরাবর দিয়ে গিয়েছিল। আর মোখা পাশ দিয়ে যেতে পারে। এই ঝড়টির বৈশিষ্ট্য গত কয়েক বছরের ঝড়ের চেয়ে আলাদা। উপকূলে পৌঁছানোর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত গতি ও শক্তি সঞ্চয় করতে থাকবে। বিশেষ করে তীর থেকে ৪শ কিলোমিটারের মধ্যে এলে এর গতি থাকবে ১৬০-১৭৫ কিলোমিটার। এমনকি এর বেশিও গতি সঞ্চার করতে পারে। আর বর্তমানে যে গতিতে মোখা এগোচ্ছে তাতে সকাল ১০টা থেকে ঝড়ো হাওয়ার দাপট বাড়তে পারে। কক্সবাজারের পর সবচেয়ে বেশি তা-বলীলার শিকার হতে পারে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, পটুয়াখালী ও চাঁদপুর। এ ছাড়া কক্সবাজার ও চট্টগ্রামসহ বরিশাল-চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার নিম্নাঞ্চল এবং সংলগ্ন দ্বীপ এবং চরগুলোতে ৮ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা আছে।
এদিকে মোখা যতই উপকূলের দিকে যাচ্ছে ততই আবহাওয়ার পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এ কারণে শনিবার সকাল থেকেই কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন-অবতরণ বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে এবং সিলেট ও ঢাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধসের সতর্কতা জারি করেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি)। আগেই সাগরে থাকা মাছ ধরার সব ট্রলার ও নৌকাগুলোকে উপকূলে ফিরে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। ফলে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলার অন্তত ১০ হাজার ট্রলার ফিরেছে বলে জানা গেছে। আগামী ২০ মে পর্যন্ত সাগরে নামতে বারণ করা হয়েছে। দুর্গতদের জন্য এক সপ্তাহের মতো খাবারও মজুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া পুনর্বাসনের জন্য টিনসহ আর্থিক সহায়তার প্রস্তুতিও আছে বলে জানায়।
বৈরী পরিস্থিতির কারণে উপকূলীয় জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের ৬ শিক্ষা বোর্ডের চলমান এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। বোর্ডগুলো হচ্ছে-চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বরিশাল, যশোর, মাদরাসা এবং কারিগরি। এসব বোর্ডের আজ ও কালকের পরীক্ষা হবে না। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর নিজস্ব সর্বোচ্চ অ্যালার্ট-৪ জারি করেছে। একই সঙ্গে বন্দরের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নতুন করে কোনো জাহাজ থেকে পণ্য খালাস হবে না।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখা বাংলাদেশের স্থলভাগে প্রথম আঘাত করবে সেন্টমার্টিন দ্বীপে। দুপুরের দিকে ১৬৯ কিলোমিটার ঝড়ো হাওয়াসহ আঘাত হানতে পারে। এ সময় প্রায় এক ঘণ্টা তা-ব চালাতে পারে সেখানে। পাশাপাশি প্রায় ২০ থেকে ২২ ফুট পানির নিচে চলে যেতে পারে দ্বীপটি। এর সমতল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড়ে ৩ দশমিক ৬ মিটার ওপরে।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমেরিকার পূর্বাভাস মডেলের নির্দেশনা অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রটি পুরো কক্সবাজারের ওপর দিয়ে অতিক্রম করার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। সেন্টমার্টিন, কুতুবদিয়া ও মহেশখালী দ্বীপের মানুষ সবচেয়ে বিপন্ন। রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে বন্যা, ভূমিধস ও প্রাণহানির আশঙ্কা আছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের বড় একটি অংশ সমুদ্রে বিলীন হয়ে যেতে পারে। ওই দ্বীপে কমপক্ষে দোতলার ওপরে জনগণকে আশ্রয় দেওয়ার ব্যবস্থা করা জরুরি। অথবা সরিয়ে নিতে হবে। নইলে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে।
সার্চ ইঞ্জিন গুগলে দেখা গেছে, কক্সবাজার-চট্টগ্রামের ওপর দিয়ে এখন পর্যন্ত যত ঘূর্ণিঝড় গেছে তার বেশিরভাগের বাতাসের গতি ছিল দেড়শ কিলোমিটারের ওপরে। ১৯৯৪ ও ১৯৯৫ সালে কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করে দুটি ঘূর্ণিঝড়। উভয়টির গতি ছিল ঘণ্টায় ২১০ কিমি। মারা গেছে যথাক্রমে ৪০০ ও ৬৫০ জন। ১৯৯৭ সালে মে মাসে ঝড়ের গতি ছিল ২২৫ কিমি। একই বছর ২৭ সেপ্টেম্বর ১৫০ কিমি গতির আরেকটি ঝড় কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূল পার হয়। এ যাবতকালে কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানা সবচেয়ে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়টি ওঠে ১৯৬৫ সালে। সেটির বাতাসের গতি ছিল ২১০ কিমি। এদিকে শনিবার রাত ৯টার দিকে আবহাওয়ার ১৬ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিএমডি। এতে সংস্থাটি জানায়, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও ঘনীভূত হচ্ছে। সন্ধ্যা ৬টায় এটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে রোববার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কক্সবাজার ও মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। শনিবার মধ্যরাত থেকে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে। এতে আরও উল্লেখ করা হয়, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ১৮০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২০০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উপকূলীয় জেলা কক্সবাজারের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোয় ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে হবে। ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। আর চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।