স্টাফ রিপোর্টার: করোনার কারণে প্রায় দুই বছর পরিকল্পনা অনুযায়ী দল গোছানোর কাজ করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। সোমবার করোনা রোধে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় নতুন করে সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়াচ্ছে দলটি। জাতীয় সম্মেলন ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আজ থেকেই পুরোদমে শুরু হচ্ছে বিভিন্ন কার্যক্রম। এর মধ্যে রয়েছে-নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়ন, প্রার্থী বাছাই ও প্রশিক্ষিত এজেন্ট তৈরি।
এছাড়া জাতীয় সম্মেলনের জন্য দলের জেলা ইউনিটেরও কাউন্সিলর তালিকা লাগবে। সে লক্ষ্যে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা শাখায় সম্মেলন করে জেলা ইউনিটের কমিটিও করতে হবে। দীর্ঘদিন টানা ক্ষমতায় থাকা দলটির তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ মেটানো বড় চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি বিরোধীদের মাঠ দখলের সুযোগ না দিয়ে ‘অপপ্রচারের’ বিরুদ্ধেও সজাগ থাকবে আওয়ামী লীগ। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে কাজের বড় তালিকা ক্ষমতাসীন দলের হাতে।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে উল্লিখিত সব তথ্য। আরও জানা গেছে, নির্বাচন ও সম্মেলনকে সামনে রেখে এসব কাজ আর ঝুলিয়ে রাখতে চাচ্ছেন না দলটির নীতিনির্ধারকরা। ইতোমধ্যে দলকে নির্বাচনমুখী করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। শুরু হয়েছে ইশতেহার তৈরির প্রাথমিক কাজও। করোনা সংক্রমণ কমায় সীমিত পরিসরে মাঠেও নেমেছেন সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। করোনার কারণে দল গোছানো কাজে এমনিতেই অনেক সময়ক্ষেপণ হয়েছে। এখন আর বসে থাকা যায় না। জাতীয় সম্মেলন ও নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগকে তারা আরও গতিশীল ও বেগবান করতে চান। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আব্দুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, করোনার সময়ও কিন্তু আমরা বসে ছিলাম না। তখন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যতটা করা যায় সাংগঠনিক কাজও এগিয়ে নিয়েছি। এখন করোনার প্রকোপ কমতে শুরু করেছে। এটা হলে সবার জন্যই ভালো। করোনা পরিস্থিতি ভালো থাকলে আমরা আমাদের সাংগঠনিক তৎপরতা আরও জোরদার করব। আমাদের যে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো রয়েছে, সম্মেলনের মাধ্যমে সেগুলো ঢেলে সাজাব। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের সংগঠনকে আরও গতিশীল, বেগবান করব।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াতের সব অপপ্রচারকে প্রতিহত করতে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ। তাদের সব গুজব আমাদের প্রতিহত করতে হবে। এর সঙ্গে তাদের ষড়যন্ত্রের রাজনীতিকে প্রতিহত করতে আমাদের কাজ করতে হবে। আমরা আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম বৃদ্ধি করব।
প্রসঙ্গত, গত ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সর্বশেষ সভাপতিম-লীর সভায় দলকে নির্বাচনমুখী করার নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২১ ফেব্রুয়ারি করোনার বিধিনিষেধ শিথিল হলে বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমগুলোকে মাঠে নামার নির্দেশও দিয়েছিলেন তিনি। তার নির্দেশনার পর এ বিষয়ে কাজও শুরু করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। খুলনা বিভাগীয় টিম ইতোমধ্যে দুই দফা বৈঠকও করেছেন। বৈঠকে সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় মার্চ মাসের মধ্যে ওই বিভাগের মাগুরা, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ-এই চার জেলার সম্মেলন শেষ করার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া সম্মেলন হওয়া সাত জেলার যে উপজেলা বাকি আছে সেগুলো রমজানের আগে ও পরে সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়।
এদিকে পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী, জেলা-উপজেলাগুলোর সম্মেলনও শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। ১৯ ফেব্রুয়ারি পাবনা এবং ২০ ফেব্রুয়ারি নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। দল গোছানোর কাজে রাজশাহী বিভাগ সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। এই বিভাগের প্রায় ৫০টির মতো উপজেলা সম্মেলন শেষ হয়েছে। ২৮ তারিখে সিরাজগঞ্জ জেলা সম্মেলন হলে বাকি থাকবে শুধু নওগাঁ জেলা। জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ৩১ মার্চ নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করছি মার্চের মধ্যে ৮০ ভাগ উপজেলা এবং সব জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষ করতে পারব।