স্টাফ রিপোর্টার: করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রথম ধাক্কা যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল, একইভাবে এবারও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে জনগণের সহযোগিতা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য অবেহলা না করে সবাইকে ঠিকঠাকমতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মাস্ক পরিধান, গরম পানির ভাপ নেয়া এবং সম্ভব হলে নাকে একটু সরষের তেল দেয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে বিয়েশাদির অনুষ্ঠান, পর্যটনে ঘুরতে যাওয়া এবং অযথা বাইরে ঘোরাঘুরি পরিহারের অনুরোধ জানান। গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদে শোকপ্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি দেশবাসীর প্রতি এই আহ্বান জানান।
এর আগে বেলা ১১টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে চলতি একাদশ সংসদের দ্বাদশ অধিবেশন শুরু হয়। করোনার প্রকোপ বাড়তে শুরু করলেও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এই অধিবেশন ডেকেছেন। সংসদ সদস্যরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে অধিবেশনে যোগ দেন। সরকারদলীয় সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর (সিলেট-৩) মৃত্যুতে ওই শোকপ্রস্তাব আনা হয়। পাশাপাশি দেশের অন্য বিশিষ্টজনদের মৃত্যুতেও সংসদ শোক জানায়। রেওয়াজ অনুযায়ী, চলমান সংসদের কোনো সদস্যের মৃত্যু হলে তার জন্য আনা শোকপ্রস্তাবের ওপর আলোচনা করা হয়। আলোচনা ও শোকপ্রস্তাব গ্রহণ শেষে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্পিকার অধিবেশন মুলতবি করেন।
শোকপ্রস্তাবের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানাটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। হিসাব করে দেখেছি, যতগুলো বড় বিয়ের অনুষ্ঠান, যারা বিয়েবাড়িতে গেছেন, ফিরে এসে অনেকেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। যারা বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে চলে গেছেন, পর্যটন এলাকা কক্সবাজারসহ একই জায়গায় অনেক লোক, সেখান থেকে যারা এসেছেন, তাদের কিন্তু বেশি হয়েছে। এই দাওয়াত-পানি খাওয়া, দোকানপাটে বেশি যাওয়া, ঘোরাঘুরি-এগুলো যেন অতিরিক্ত বেড়ে গিয়েছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন শুধু বাংলাদেশে নয়, অনেক দেশেই নতুন করে সংক্রমণ বাড়ছে। আমি এজন্য সবাইকে বলবো, প্রথমে করোনা ভাইরাস যখন দেখা দিলো, তখন সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেছিলাম। সেইভাবেই আবার আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কিছু নির্দেশনা আমরা দিয়েছি। ধীরে ধীরে চেষ্টা করে যাচ্ছি এটাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে। কিন্তু সেই ক্ষেত্রে জনগণের সহযোগিতা দরকার। আজ কতোজন মানুষকে হারালাম? করোনা ভাইরাস সম্পর্কে যদি একটু সচেতন থাকতেন, তাহলে আর এটা হতো না।’
তিনি বলেন, ‘সবাইকে অনুরোধ করব ঘরের বাইরে মাস্ক পরে থাকতে। এটা নাক থেকে সাইনাসে আক্রমণ করে। নাকেই এটা যায়। নাক থেকেই এটা টেস্ট করা হয়। সেক্ষেত্রে সবাইকে মাস্ক পরে থাকতে হবে।’ সংসদে বক্তব্য রাখার সময় নিজের মাস্ক খুলে রাখার বিষয়ে নিজেই বললেন, ‘আমার মাস্ক আছে। বক্তৃতা দেয়ার জন্য খুলে রেখেছি। আশপাশে কেউ নেই। কেউ যেন মনে না করে মাস্ক না পরেই বলছি। মাস্ক কিন্তু আমার সঙ্গে আছে। মাস্ক পরে কথা বলতে গেলে কথাগুলো পরিষ্কার হয় না। সবাইকে অনুরোধ করবো, সবাই মাস্ক পরে থাকবেন। আর নাকে ভাপ নেয়া। যখনই কেউ একটু বেশি মানুষের সঙ্গে মিশবেন, দোকানে যাবেন বা অফিসে যাবেন বা মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন, ঘরেফিরে একটু যদি গরম পানির ভাপটা নেয়া যায়। এটা খুব কঠিন কাজ না। যে কোনো একটা পাত্র বা জগে বা ছোট একটা বালতিতে ভাপ ওঠা গরম পানির ওপর মুখটা রেখে, দরকার হলে কাপড় দিয়ে মাথাটা ঢেকে ভাপটা নিঃশ্বাসে নিলে পরে ওটা নাকের ভেতরে সাইনাস পর্যন্ত পৌঁছায়। আমি নিজেও আগে সাইনাসের সমস্যায় ভুগেছি বলে ভাপ নেয়ার অভ্যাসটা আমার ছিল।’
প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে আরো বলেন, ‘ভাপটা নিলে পরে জীবাণু নাকের যেখান থেকে পরীক্ষা করার জন্য বের করা হয়, ওই জায়গাটায় পৌঁছুবে। ওটাকে দুর্বল করে ফেলবে অথবা শেষ করে ফেলবে।’ তিনি বলেন, ‘আরেকটা কাজ আমি নিজে করি। সেটাও করতে পারেন। আমি আসার আগে নাকে একটু সরষের তেল দেয়া, যে কোনো একটা তেল লাগানো। আমি জানি খুব গ্রাম্য একটা ব্যাপার মনে হবে। ছোটবেলায় যখন আমরা পুকুরে গোসল করতে যেতাম, আমার দাদি সব সময় নাকে, কানে আর নাভিতে সরষের তেল দিয়ে দিতেন। নাকে-কানে পানি ঢুকবে না। করোনা ভাইরাসের পর থেকে আমি নিয়মিত যখনই বাইরে আসি, নাকে একটু সরিষার তেল একেবারে ভেতরে না, নাকের পাশে একটু দিয়ে রাখি। এটাও সবাই দিতে পারেন। ভাপ নেয়া খুব কাজে লাগে।’
দেশে সংক্রমণ আবার বাড়তে থাকার বিষয়টি তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এবারের করোনা ভাইরাস হঠাৎ করে খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশেও ২৯, ৩০ এবং ৩১ মার্চ এমন দ্রুত বেড়ে গেছে, যেটা চিন্তাও করা যায় না। আসলে ভ্যাকসিন দেয়া শুরু করেছি বলে মানুষের মধ্যে একটা বিশ্বাস জেগে গেছে, যার ফলে ভাবছিলো যে কিছুই হবে না। আমি বারবার বলছিলাম, ভ্যাকসিন নিলেও সাবধানে থাকতে হবে। জনসমাগম যাতে না হয়, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখার জন্য আমি অনুরোধ জানাচ্ছি। মনে হচ্ছিল সবকিছু যেন ঠিক হয়ে গেছে। আমরা সবকিছু নিয়ন্ত্রণে এনেছিলাম। অর্থনৈতিক কাজগুলোও চলছিল। এখন অফিস-আদালতে বলে দিয়েছি, সীমিত লোক নিয়ে কাজ করতে হবে।’