স্টাফ রিপোর্টার: দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পক্ষ মত দিয়েছে করোনা-সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। করোনার সংক্রমণ নিম্নমুখী হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কমিটির এই মত এলো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়ে মতামত ঠিক করতে বৃহস্পতিবার রাতে বৈঠকে বসে পরামর্শক কমিটি। বৈঠক শেষে রাত পৌনে ১২টায় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, করোনার পজিটিভ হার কমে এসেছে। তা ছাড়া ধীরে ধীরে করোনার টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত হচ্ছে। এ জন্য সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং জনস্বাস্থ্যবিষয়ক বেশ কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া সাপেক্ষে এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া যায়। আনুষ্ঠানিকভাবে এই সিদ্ধান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেয়া হবে বলে জানা গেছে। এর আগে গত ২৬ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সভায় পরিকল্পনা নেয়া হয়, টিকা দেয়া সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আগামী ১৫ অক্টোবরের পর থেকে খুলতে পারবে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, ১৫ অক্টোবরের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, সেটি আলোচনা সাপেক্ষে পরিবর্তনও হতে পারে। অর্থাৎ সময় এগিয়েও আসতে পারে। অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষা বিষয়ে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেয়। উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত করোনা সংক্রমণের হার ৫ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যায় কি না, সে বিষয়ে করোনা–সংক্রান্ত কারিগরি পরামর্শক কমিটির পরামর্শ চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয় ওই সভায়। সেই সিদ্ধান্ত চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রাতে বৈঠকে বসে কারিগরি কমিটি। সেখানেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পক্ষে মত উঠে আসে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আগামী রোববার আন্তমন্ত্রণালয় সভা ডাকা হয়েছে। এই সভাতেই বিস্তারিত আলোচনা করে খোলার সিদ্ধান্ত হতে পারে। করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছুটি চলছে। জাতিসংঘ শিশু তহবিল বা ইউনিসেফের গত ২৪ আগস্ট প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড-১৯ এর কারণে স্কুল বন্ধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম দেশ। দীর্ঘ বন্ধের কারণে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা স্তর পর্যন্ত চার কোটির বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় সবকিছু খুলে দেওয়ার পর এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। ১৮ আগস্ট সচিব সভায় করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি ও টিকা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবারও প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বলেছেন, খুব তাড়াতাড়ি স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলমান ছুটি শেষ হবে ১১ সেপ্টেম্বর। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, এরপর আর ছুটি নাও বাড়ানো হতে পারে। হয়তো ১২ সেপ্টেম্বর থেকেই ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত আসতে পারে। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বৃহস্পতিবার রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের এক অনুষ্ঠানে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন।