স্টাফ রিপোর্টার: লকডাউনের কথা শুনেই হতাশা প্রকাশ করেছেন খেটে খাওয়া মানুষ। কাজ না-করলে খাবেন কী, কীভাবে সংসার চালাবেন-এ চিন্তায় ঘুম হারাম তাদের। করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আজ সকাল ৬টা থেকে ১১ এপ্রিল রাত ১১টা পর্যন্ত চলাচল ও কাজে নিষেধাজ্ঞা (লকডাউন) দিয়েছে সরকার। এ সময় শুধু জরুরি সেবা ছাড়া প্রায় সবকিছু বন্ধ থাকবে। রোববার সরকারের এক প্রজ্ঞাপনে এ কথা জানানো হয়েছে। রমজান ও ঈদের আগে এমন ঘোষণায় রুটিরুজি নিয়ে চিন্তিত দরিদ্র মানুষ।
ছোট একটি খাবারের হোটেলের কর্মচারী মামুন মিয়া বলেন, মাসে যা টাকা কামাই, কোনোমতে চলে। এর মধ্যে যদি লকডাউন হয়, তাহলে পরিবার নিয়ে কীভাবে চলব, তা ভেবে পাই না। সরকারি সাহায্য না-পেলে এ কয়েকটা দিন না-খেয়ে থাকতে হবে।
মধ্যবয়সি রিকশাচালক আরমান আলী বলেন, দিন আনি, দিন খাই। যেদিন কামাই নাই, সেদিন খাওয়াও নাই-ঠিক এমনই অবস্থা। রিকশাও যদি না-চালাতে পারি, তাহলে সহায়তা না-পেলে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। বাসায় আমি ছাড়াও আরও চারজন আছে। তাদের খাওয়াবে কে? সরকার যদি মানুষকে ঘর থেকে বের করতে না-চায়, তাহলে আমার মতো গরিব মানুষকে খাবারের নিশ্চয়তা আগে দিতে হবে।
বেসরকারি একটি কোম্পানিতে কাজ করেন আমিনুর রহমান। তার কষ্টটাও অনেকটা একই। সাতদিন কাজ না-করলে বেতন কাটা যাবে। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে তারও অনেক কষ্টে দিন কাটাতে হবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তো আর কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হলো আমাদের মতো বেসরকারি লোকজনের। যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়।
ফল ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম বলেন, এমনিতেই ব্যবসায়ের অবস্থা তেমন ভালো না। এরপর সামনে রমজান ও ঈদ। এখনও যদি ব্যবসা না-করতে পারি, তাহলে পরিবার নিয়ে যাব কোথায়? খাব কী?
টং চায়ের দোকানি আলী হোসেনের যেন মাথায় হাত। দুশ্চিন্তায় তার ঘুম হারাম হয়ে গেছে। দোকান না-চললে রাজধানীতে পরিবার নিয়ে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা তার নেই। তাই তিনি ত্রাণের আশায় আছেন। তিনি বলেন, ত্রাণ কপালে জুটলে খাওয়া জুটবে। নয়তো কোনোমতো অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হবে।
দিনমজুরের কাজ করা মোহাম্মদ আলী বলেন, লকডাউনে খুব কষ্টে থাকতে হয়। এর আগের লকডাউনেও অনেক কষ্টে কেটেছে। কোনো কোনো দিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে যা পেয়েছি, তাই দিয়েই চলতে হয়েছে। যদিও ঘর থেকে বের হতে মানা করা হচ্ছে; কিন্তু বের হতে না-পারলে খাব কী? ঘরে অসুস্থ মা। প্রতিদিনই ওষুধের জন্য অনেক টাকা লাগে। কাজ না-করলে কোনো উপায় নেই।
এদিকে লকডাউনের কথা শুনেই অনেকেই শহর ছেড়েছেন। রামপুরা এলাকার একটি বস্তিতে দুই সন্তানসহ থাকতেন রতন মিয়া দম্পতি। রতন পেশায় রঙমিস্ত্রি। নতুন বিল্ডিংয়ে রং লাগানোর কাজ করেন তিনি। লকডাউনের কথা শুনে রোববারই তিনি পরিবারসহ গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন বলে জানান তার প্রতিবেশী আমেনা বেগম। তিনি বলেন, অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করি। এখন অনেকেই আর কাজে রাখে না। তাই আগের মতো ইনকামও হয় না। বাসাবাড়িতে কাজ করতে না-পারলে ত্রাণের আশায় পথে পথে দিন কাটাতে হবে। এতিম ছোট্ট মেয়েটিকে নিয়ে এ শহরে বড়ই অসহায় হয়ে পড়ব।
কথা হয় ভ্রাম্যমাণ বিভিন্ন পণ্যের দোকানিদের সঙ্গে। তারাও হতাশা আর শঙ্কার কথা জানান। ঝালমুড়ি বিক্রেতা বলেন, আগে স্কুল-কলেজের সামনে ঝালমুড়ি বানিয়ে বিক্রি করতাম। এখন স্কুল-কলেজ বন্ধ হওয়ায় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বিক্রি করি। এ কাজের ওপর নির্ভর করে বাসায় থাকা বৃদ্ধ মা-বাবাসহ চারজনের জীবন। মানুষজন ঘর থেকে বের না-হলে বিক্রি হবে না। বড়ই কষ্টে থাকতে হবে আমার। ভ্রাম্যমাণ পান-বিড়ি দোকানি রমিজ উদ্দিনেরও কষ্ট একই রকম। রাস্তায় বের না-হলে খাবে কী, তাই নিয়ে তিনি চিন্তিত। লকডাউনে সরকারের পক্ষ থেকে কিংবা ধনী লোকের পক্ষ থেকে ত্রাণ না-পেলে যে দুর্ভোগ হবে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।