মেহেরপুর অফিস: চলতি মরসুমে মেহেরপুরে সরকারিভাবে গম ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। কৃষক সরকারি মূল্যের চেয়ে খোলা বাজারে গমের দাম বেশি পাওয়ায় সরকারি খাদ্যগুদামে গম দেননি তারা। এ বছরের গম ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো দুই হাজার ৮৮২ মেট্রিকটন। অপরদিকে ধান ও চাল সংগ্রহ ব্যহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সময় মতো শস্য ক্রয় না করায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে।
জানা গেছে, সরকারিভাবে সদর উপজেলা ও মুজিবনগরের গম ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও গাংনী উপজেলায় গম ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো এক হাজার ৮৪৭ মেট্রিকটন। কিন্তু গাংনী উপজেলা ক্রয় কমিটি ৮৪৭ মেট্রিকটন গম ক্রয় করে বাকি এক হাজার মেট্রিকটন গম ক্রয়ের টাকা ফেরত দিয়েছে। বাইরের বাজার দর বেশি হওয়ায় লটারিতে নির্বাচিত কৃষকরা গম সরবরাহ করেননি সরকারি খাদ্যগুদামে। গম মাড়াই করার পরপরই যদি সরকারিভাবে গম ক্রয় করতো তাহলে আমরা খাদ্যগুদামে গম দিতে পারতাম বলে জানান গম চাষিরা। অপরদিকে বোরো ধান ও চাল সংগ্রহে নেমেছে উপজেলা ক্রয় কমিটি। ইতোমধ্যে জেলার ধান চাষিদের তালিকা থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে লটারির মাধ্যমে বোরো ধান সরবরাহকারী চাষিদের নামের তালিকা সম্পন্ন করা হয়েছে। জেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার কৃষকের মধ্যে বাছাই করে ধান, গম ক্রয় করা হয়।
জেলায় এবার বোরো ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা তিন হাজার ১৩০ মেট্রিকটন। প্রতি কৃষক সরকারি মূল্যে সর্বোচ্চ তিন মেট্রিকটন ধান বিক্রি করতে পারবেন। বাইরের বাজারে বোরো ধানের দাম বেশি পাওয়ার কারণে সরকারি খাদ্যগুদামে ধান দিবে কি না সে বিষয়েও অশঙ্কা রয়েছে। তবে ক্রয়ের সময়সীমা থাকার কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হবেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
মুজিবনগর উপজেলা মানিকনগর গ্রামের শেখ শফি জানান, এ বছর গমের ফলন ভালো হয়েছে। মাঠ থেকে গম সংগ্রহের পর ঘরে রেখেও সরকারিভাবে গম ক্রয়ের কোনো উদ্যোগ ছিলো না। তাই গমের বাজার দর ভালো পেয়ে বাজারে বিক্রি করেছি। একই কথা জানান সদর উপজেলার চকশ্যামনগরের রফিকুল ইসলাম।
সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মরসুমে জেলার তিনটি উপজেলার জন্য সরকারিভাবে লটারির মাধ্যমে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি মণ ধান এক হাজার ৪০ টাকা মূল্যে ক্রয়ের জন্য তিন হাজার ১৩০ মেট্রিকটন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। কিন্তু চলতি বোরো মরসুমে করোনা ভাইরাসের কারণে বাজারগুলোতে ধানের সরবরাহ কম থাকার জন্য ধানের দাম ভালো পাচ্ছেন কৃষকরা। তাই অধিকাংশ গুদামগুলোতে নেই ধান বিক্রি ব্যস্ততা। জেলার সদর উপজেলা খাদ্যগুদামে শুধুই উদ্বোধনের জন্য ৯২ মেট্রিকটন ধান ক্রয় করা হয়েছে।
গাংনী উপজেলার কসবা গ্রামের ধান চাষি লাল্টু মিয়া জানান, কিছু শর্ত মেনে সরকারি খাদ্যগুদামগুলোতে ধান দিতে হয়। যে শর্তগুলো অধিকাংশ কৃষকরা পূরণ করতে পারে না বলে গুদামে ধান দিতে গেলে সমস্যায় পড়তে হয়। তাই খাদ্যগুদামে ধান দিতে আগ্রহী নন কৃষকরা। একই কথা জানালেন ধান চাষি মুকুল হোসেন। তিনি আরও জানান, বোরো ধান বিক্রি প্রায় শেষ আবারও নতুন ধান ওঠার সময় হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু গাংনীতে সরকারি খাদ্যগুদাম ধান ক্রয় শুরু হয়নি। তাহলে আমরা কতোদিন ধান ঘরে রাখবো?
এদিকে জেলার তিন উপজেলার ১৯টি চালকল মালিক সরকারি খাদ্যগুদামে এক হাজার ৪৩৮ মেট্রিকটন চাল সরবরাহ করার কথা থাকলেও এখনো চাল সংগৃহিত হয়নি। চালের দাম বাজার মূল্যের চেয়ে সরকারি মূল্য কম হওয়ায় মিল মালিকরা চাল সরবরাহ করতে নারাজ।
গাংনী উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আব্বাস আলী জানান, সরকারিভাবে চালের দাম ৩৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু বাজারে একই চালের মূল্য ৪১ টাকা। আমার জন্য বরাদ্দকৃত চাল যদি সরকারিগুদামে সরবরাহ করি তাহলে আমি প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। যদি চাল সরবরাহ না করি তাহলে চালের মূল্যের জামানত দেয়া ২ শতাংশ টাকা অর্থাৎ ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার যদি মূল্যবৃদ্ধি করে তাহলে মিল মালিকরা চাল সরবরাহ করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ বিশ্বাস বলেন, সরকারি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার লক্ষ্যে প্রতিটি উপজেলায় তালিকাভুক্ত কৃষকদের মধ্যে থেকে লটারির মাধ্যমে গম ও ধান ক্রয় করা হচ্ছে। ধান ও চাল সংগ্রহের সময়সীমা রয়েছে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। তবে চালের দাম খোলা বাজারে বেশি আছে। নতুন ধান উঠে যদি চালের দাম কমে তাহলে আমরা লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হবো। তবে মিলার যদি চাল সরবরাহ না করে তাহলে তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।
জেলা প্রশাসক আতাউল গণি বলেন, গাংনী উপজেলায় আভ্যন্তরীণ ক্রয় কমিটি গম ক্রয় করতে পারেনি তাই এক হাজার মেট্রিকটন গমের ঘাটতি রয়ে গেছে। তবে ধান সংগ্রহ অভিযান শতভাগ অর্জন হবে। চালের বাজার দর হিসেব করে যদি চালকল মালিকরা চাল সরবরাহ না করে তাহলে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।