স্টাফ রিপোর্টার: করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ উপেক্ষিত হচ্ছে সড়ক ও বাজারে। গণপরিবহণ ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল ছিলো প্রায় স্বাভাবিক হয়েছে। যানজটও তৈরি হচ্ছে কোথাও কোথাও। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের চেকপোস্টেও ঢিলেঢালা তল্লাশি চালাতে দেখা গেছে। গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় বিভিন্ন জিনিসপত্রের দোকান ও কাঁচাবাজারে ছিলো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। শপিংমল এবং মার্কেটগুলোতেও ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। শপিংমলগুলোতে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানুষদের কেনাকাটা করতে দেখা গেলেও মার্কেটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধির বালাই ছিলো না।
বেলা ১১টার দিকে দেখা যায়, চুয়াডাঙ্গা শহরের শহীদ হাসান চত্বরে অটো, ভ্যানসহ ছোট যানবাহনের বেশ চাপ। কথা হয় ব্যবসায়ী ওয়াহিদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, দেশে লকডাউন চলছে-এটা সরকার বলছে, মানুষ বলছে। কিন্তু কাজকর্মে কিন্তু তা বোঝা যাচ্ছে না। ‘সীমিত’ বলেন আর ‘বৃহৎ’ বলেন, অফিস বাদে সব কিছুই এখন খোলা। বিশেষ করে রমজান মাস হওয়ায় মানুষ এসব বিধিনিষেধ মানতে নারাজ। এদিন বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায় একই চিত্র।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দোকানপাট ও শপিংমল খোলা থাকবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে বেচাকেনা করতে হবে। শুক্রবার বিভিন্ন শপিংমল ঘুরে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বেচাকেনা হয়েছে। সকালের দিকে ক্রেতাদের উপস্থিতি একটু কম দেখা গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। বিশেষ করে দুপুর পর থেকে মানুষের ভিড় ছিলো চোখে পড়ার মতো। মানুষের ভিড়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সামনে এগুনো কঠিন। ফুটপাত থেকে শুরু করে মার্কেটের ভেতরের অলিগলিতেও ছিলো উপচেপড়া ভিড়। দোকানিরা ক্রেতাদের সামাল দিতে হিমশিম খান। কোনও দোকানেই হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি পালন করতে দেখা যায়নি।
ব্যবসায়ীরা জানান, সামনে ঈদ। তাই একটু বেশি ভিড়। ব্যবসাও ভালো হচ্ছে। অনেকেই মাস্ক ব্যবহার না করেই আসছেন। তাদের কিছু বলতেও পারছি না। মার্কেটে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে পুলিশ প্রশাসনের একটু কড়াকড়ি দরকার ছিলো বলে জানান এই ব্যবসায়ী।
এদিকে ছুটির দিনে সকালের দিকে কাঁচাবাজারে ছিলো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। সেখানে অনেককেই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে বাজার করতে দেখা গেছে। আবার অনেক দোকানিকেও মাস্ক পরতে দেখা যায়নি। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা শহরের নিচের কাচাবাজার সরেজমিন দেখা গেছে, মাছ-মাংস ও সবজির দোকানের সামনে উপচে পড়া ভিড়। এমনকি রাস্তার দুপাশেও পসরা সাজিয়ে সবজি ও ফল বিক্রি করা হয়েছে। সেখানেও স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই ছিলো না।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে গত ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন দিয়ে তেমন সুফল পাওয়া যায়নি। এরপর ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত দেয়া হয় ‘সর্বাত্মক লকডাউন’। এক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে তা ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। তারপর আবার তা ৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এর মধ্যে লকডাউনের কার্যকারিতাও হ্রাস পেয়েছে। এর আগে করোনা সংক্রমণ রোধে ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ১৮ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়। যদিও মাঠপর্যায়ে এসব নির্দেশনার বেশির ভাগই বাস্তবায়ন হয়নি।
এদিকে লকডাউন বা কঠোর বিধিনিষেধ শিথিলের পথ খোঁজার কথাও বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন সব বন্ধ রেখে মানুষকে ঘরে আটকে রাখা যাবে না। আবার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বিকল্প উপায় বের না করে সব খুলে দিলে যে ঝুঁকি বাড়বে, ভারতের পরিস্থিতি দেখে তাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন তারা।
জনস্বাস্থ্যবিদদের অনেকেই বলছেন, সার্বিক পরিস্থিতিতে শতভাগ মাস্ক পরা, গণপরিবহণে চলাচলে বিশেষ পদক্ষেপ, দোকানপাট ও বিপণীবিতান পালা করে চালু, সংক্রমণ বেশি ছড়ায় এমন আবদ্ধ জায়গা বিধি-নিষেধের আওতায় রাখা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে কম ঝুঁকিপূর্ণ স্থান স্বাভাবিক করে দেয়া যেতে পারে।
কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডক্টর নজরুল ইসলাম বলেছেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে মাস্ক পরার ক্ষেত্রে সরকারকে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। যে ভ্যারিয়েন্টগুলো বের হচ্ছে, সেটা ভ্যাকসিনকে পর্যন্ত পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। কিন্তু মাস্ককে কেউ পাশ কাটিয়ে চলে যেতে পারবে না। ১০০ ভাগ মানুষ যদি মাস্ক পরে, ৯৯ ভাগ না; ১০০ ভাগই। তাহলে যার মধ্যে ভাইরাসটা আছে, তার মাস্ক ভেদ করে অন্য কারও মাস্ক ভেদ করে ভাইরাসটাকে যেতে হবে, সেটা তো ভাইরাস পারবে না। সেক্ষেত্রে আমরা একটা ভালো ফল পাবো।