রাজধানীতে বাসে আগুন ও নাশকতার ঘটনায় ১৫ মামলায় অর্ধসহস্র আসামি

বেশিরভাগই বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মী : গ্রেফতার ৩৫
স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসে আগুন, নাশকতা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় বিভিন্ন থানায় ১৫টি মামলা হয়েছে। এসব মামলার আসামি অর্ধসহস্রাধিক। এদের মধ্যে বেশিরভাগই বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন এবং ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মী। পল্টন থানার মামলায় আসামিদের মধ্যে আছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। মতিঝিল থানার মামলায় আসামি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার মামলাগুলো দেয়া হয়। এসব মামলায় গ্রেফতার ৩৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ওয়ালিদ হোসেন জানান, মতিঝিলে ২টি, শাহবাগে ২টি, পল্টনে ২টি, উত্তরা পূর্ব থানায় ২টি এবং বংশাল, ভাটারা, এয়ারপোর্ট, তুরাগ, কলাবাগান, সুত্রাপুর ও খিলক্ষেতে একটি করে মামলা হয়েছে। আসামিদের বড় একটি অংশেরই রাজনৈতিক পরিচয় আছে। দেশকে অস্থিতিশীল করতেই বাস পোড়ানো ও এসব নাশকতামূলক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হিরণ বলেন, ১৩ মামলায় মোট ৪৪ জনকে বিভিন্ন আদালতে হাজির করে রিমান্ডের ও কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে একাধিক মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসামিদের মধ্যে ৯ জনকে কারাগারে এবং ৩৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডের আদেশ দেন। আসামিদের মধ্যে কলাবাগান থানার ১ মামলায় ২ আসামির ২ দিন; তুরাগ থানার ১ মামলায় ১ আসামির ৩ দিন; সূত্রাপুর থানার ১ মামলায় ৯ আসামির ৩ দিন; শাহবাগ থানার ২ মামলায় ৬ আসামির ৩ দিন; বংশাল থানার ১ মামলায় ২ আসামির ২ দিন রিমান্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে।
হেমায়েত উদ্দিন খান আরও জানান, কলাবাগান থানার ১ মামলায় ২ আসামির ২ দিন; পল্টন থানার ১ মামলায় ২ আসামির ৩ দিন ও আরেক মামলায় ৭ আসামির ৫ দিন; মতিঝিল থানার এক মামলায় ১ আসামির ২ দিন ও অপর মামলায় ১ আসামির ৩দিন এবং খিলক্ষেত থানার ১ মামলায় ২ আসামির ২ দিন করে রিমান্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া উত্তরা পূর্ব থানার ১ মামলায় ৯ আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, মোট ১২টি বাসে পরিকল্পিতভাবে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। পুড়ে যাওয়া বাসের মধ্যে ৩টি সরকারি। অগ্নিসংযোগে ব্যবহার করা হয়েছে গানপাউডার। যেসব বাস দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে তাতে সর্বনিম্ন ৩ থেকে সর্বোচ্চ ১৮ জন যাত্রী ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে তারা জানতে পেরেছেন। ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচন কেন্দ্র করেই এসব ঘটনা ঘটানো হয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। থামানো বাসে বাইরে থেকে যারা অগ্নিসংযোগ করেছে, তাদেরও ফুটেজ এসেছে পুলিশের হাতে। সেগুলো দেখেও আসামি শনাক্তের চেষ্টা চলছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলেও প্রত্যাশা তাদের।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির মুখপাত্র উপকমিশনার (ডিসি) ওয়ালিদ হোসেন বলেন, বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। কোনোভাবেই শান্ত রাজধানীকে অশান্ত করতে দেয়া হবে না। যেসব স্থানে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে তার আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলোর বিশ্লেষণ চলছে। আশা করছি, যাদের নাম এসেছে তাদের পাশাপাশি আরও যারা জড়িত, তাদেরও খুঁজে বের করা সম্ভব হবে।
মতিঝিল থানায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলাগুলো করা হয়েছে। এসব মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামিও রয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে মামলাগুলো করেছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত ১২টি বাসে আগুন দেয়া হয়। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টার মধ্যে রাজধানীতে একে একে ৯টি বাস পুড়িয়ে দেয়া হয়। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত আরও তিনটি বাসে আগুন দেয়া হয়। পুলিশের তথ্যানুযায়ী, দুপুর ১২টার দিকে নয়াপল্টনে পার্ক করে রাখা একটি সরকারি বাসে প্রথম আগুন দেয়া হয়। বিকেল সাড়ে ৪টায় ভাটারা এলাকায় আরেকটি বাসে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দেয়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে উত্তরার আজমপুরে একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। রাতে এয়ারপোর্ট ও খিলক্ষেত এলাকায় আরও দুটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
এদিকে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে বলে দাবি করেছে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ। অন্যদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই ন্যক্কারজনক ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলক। তিনি দলের পক্ষ থেকে এ ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
আসামি যারা: পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ ৭৬ বিএনপি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। মতিঝিল থানায় বাস পোড়ানোর ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে ৮৭ জনকে। এরমধ্যে আছেন: ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির পরাজিত মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন, ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের সহসভাপতি মনির হোসেন, পাভেল সিকদার, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহেল, মতিঝিল থানা যুবদল সভাপতি ইকবাল হোসেন বাবলু প্রমুখ। শাহবাগ থানায় দুটি মামলায় ৭৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন: কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান মনির প্রমুখ।
কলাবাগান থানায় পুলিশের ওপর হামলা ও নাশকতা মামলায় আসামি করা হয়েছে ৪৯ জনকে। আসামিরা হলেন: কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সভাপতি ফজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম রাকিব, সদস্যসচিব আমানউল্লাহ আমান, যুগ্মআহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।

 

Comments (0)
Add Comment