কালীগঞ্জ প্রতিনিধি: যশোর শিশু হাসপাতালে আট দিনের এক শিশু চুরি হয়েছে। স্বজনদের সঙ্গে খোশগল্পে ভাব জমিয়ে রোববার দুপুরে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে শিশুটি নিয়ে পালিয়ে যায় বোরকা পরিহিত এক নারী চোর। শিশুকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা ও তার স্বজনরা। এ ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শিশুটির মা আসমা খাতুন ও বাবা মেহেদী হাসান জনি ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ পৌর শহরের বাসিন্দা।
জানা যায়, এক বছর আগে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌর শহরের একটি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের দপ্তরি মেহেদী হাসান জনির সঙ্গে কোটচাঁদপুরের গাংনা এলাকার আসমা খাতুনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের সংসারে সিজারের মাধ্যমে প্রথম সন্তান প্রসব হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কালীগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। জন্মের পর থেকেই ছেলে নবজাতকটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে ওই রাতেই স্থানীয় ক্লিনিকের চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর শিশু হাসপাতালে রেফার্ড করেন। শিশু হাসপাতালে ৭দিন চিকিৎসা শেষে রোববার বেলা ১১টার দিকে চিকিৎসক নবজাতকটিকে সুস্থ ঘোষণা করে রিলিজ করে দেন।
একপর্যায়ে শিশুটির বাবা তাদের সবাইকে বাড়িতে নেয়ার জন্য গাড়ি আনতে হাসপাতালের বাইরে যান। এ সময় শিশুটির মা ও নানির কাছে বোরকা পরিহিত ৪০ বছর বয়সী একটি নারী গল্প করতে থাকেন। এ সময় তাদের মধ্যে ভাব জমে যায়।
একপর্যায়ে ওই নারী শিশুটির দেখাশোনা করবেন জানিয়ে শিশুটির মা ও নানিকে বাড়ি যাওয়ার জন্য গুছিয়ে নিতে ওয়াশরুমে যাওয়ার কথা বলেন। পরে শিশুটির মা ও নানি উভয়েই ফিরে এসে দেখেন ওই নারী ও শিশুটি নেই। পরে তারা ওই নারীকে পুরো হাসপাতাল ও আশপাশের এলাকায় খোঁজাখুঁজি করেন। না পেয়ে পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান।
সদ্য জন্ম দেয়া একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে বারবার হাসপাতাল বেডে মূর্ছা যাচ্ছেন মা আসমা খাতুন। হাসপাতালে চিৎকার করতে করতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, সংসারে প্রথম সন্তান হয়েছে; তাও ছেলেসন্তান। আমার শ্বশুরবাড়ি ও স্বামীর বাড়িতে আনন্দের বন্যা বইছে। সন্তান হওয়ার পর ছেলেটা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই দ্রুত যশোর শিশু হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখানে ৭দিন চিকিৎসা শেষে আজ দুপুরে বাড়ি নেয়ার কথা ছিলো। তার আগেই আমার সোনার মানিকরে চুরি করে নিয়ে গেছে। আমি এখন কাকে নিয়ে বাঁচবো। আমার শ্বশুরবাড়িতে কী জবাব দেবো। আপনারা সবাই আমার বুকের ধনরে খুঁজে বের করে দেন।
শিশুটির বাবা মেহেদী হাসান জনি বলেন, সকালে হাসপাতালের চিকিৎসক রাউন্ড শেষে আমার ছেলেকে রিলিজ দিয়ে দেয়। তারপর ছেলে ও তার মারে বাড়ি নেয়ার জন্য একটা ইজিবাইক আনতে গেছিলাম। নিচে ইজিবাইক দাঁড় করে এসে শুনি আমার ছেলেরে কে যেনো চুরি করে নিয়ে গেছে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও আমার ছেলেটার খোঁজ পায়নি।
শিশু হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সৈয়দ নূর-ই হামিম বলেন, শিশুটি চুরি যাওয়ার ঘটনাটি জানতে পেরে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়েছি। আমরা পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছি। এখানে আমাদের কোনো নিরাপত্তার ঘাটতি ছিলো না।
যশোর ডিবির ওসি রুপন কুমার সরকার সাংবাদিকদের জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানিয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজও সংগ্রহ করা হয়েছে।