আগামী মার্চ-এপ্রিলে শুরু হচ্ছে দেশব্যাপী ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচন। ধাপে ধাপে এ ভোট করার চিন্তা করছে নির্বাচন কমিশন। ভোট গ্রহণের জন্য ৪০/৩৭ দিন হাতে রেখেই এ র্নির্বাচনের তফসিল দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে ছোট পরিসরে হলেও ২১ মার্চের মধ্যে এ নির্বাচন শুরু করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২১ মার্চের মধ্যে ৭৫২ ইউপি, ৩০ মার্চের মধ্যে ৭১০, ২২ এপ্রিলের মধ্যে ৭১১, ৬ মের মধ্যে ৭২৮, ২৭ মের মধ্যে ৭১৪ এবং ৩ জুনের মধ্যে ৬৬০টি ইউপির মেয়াদ শেষ হবে। তবে মামলা ও সীমানা জটিলতার কারণে এই সংখ্যা কিছুটা বাড়তে-কমতে পারে। ইসি চাইলে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে যে কোনো দিন এ নির্বাচন করতে পারবে। এক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারিতে পৌরসভা নির্বাচন থাকায় ইসি মার্চের প্রথম দিকেই এ নির্বাচন শুরু করবে। আবার পৌরসভা নির্বাচনের পাশাপাশিও চলতে পারে ইউপি নির্বাচন। তবে চলতি মাসেই এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, যখন যে ইউপির মেয়াদ শেষ হবে, তখন সেই ইউপিতে ভোট হবে। প্রথম ধাপের ভোট মার্চের শুরুতে বা মাঝামাঝিতে, দ্বিতীয় ধাপের ভোট মার্চের শেষ এবং এপ্রিলে তৃতীয় ধাপের ভোট হতে পারে। এজন্য জানুয়ারির শেষ বা ফেব্রুয়ারির শুরুতে তফসিল ঘোষণা করবে কমিশন। তবে এবারে দলীয় প্রতীকে ব্যালট পেপারের পাশাপাশি উপজেলা সদরের ইউপিগুলোতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে। আইন অনুযায়ী আগামী বছরের ২১ মার্চের মধ্যে প্রথম ধাপের নির্বাচন করতে হবে কমিশনকে। স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইনে পরিষদের মেয়াদের বিষয়ে বলা হয়েছে- ‘কোন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ, …সংশ্লিষ্ট পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠানের তারিখ হতে পাঁচ বছর সময়ের জন্য উক্ত পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন।’ পরিষদের নির্বাচনের বিষয়ে বলা হয়েছে- ‘পরিষদ গঠনের জন্য কোন সাধারণ নির্বাচন ঐ পরিষদের জন্য অনুষ্ঠিত পূর্ববর্তী সাধারণ নির্বাচনের তারিখ হতে পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।’ আইনে উল্লেখ রয়েছে- ‘দৈব-দুর্বিপাকজনিত বা অন্যবিধ কোন কারণে নির্ধারিত ৫ বছর মেয়াদের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে, সরকার লিখিত আদেশ দ্বারা, নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত কিংবা অনধিক ৯০ দিন পর্যন্ত, যা আগে ঘটবে, সংশ্লিষ্ট পরিষদকে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ক্ষমতা দিতে পারে।’
এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে পৌরসভাসহ যেসব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ শেষ হবে, সেসব প্রতিষ্ঠানে সময়মতো ভোট হবে। সিইসি বলেন, পৌরসভায় ভোট নেয়া হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। তবে ইউনিয়ন বা উপজেলা পরিষদের সব নির্বাচন ইভিএমে করা সম্ভব হবে না। কিছু সংখ্যক নির্বাচন হয়তো ইভিএমে হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, নভেম্বর-ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে যখন যে নির্বাচন আসবে তা যথাসময়ে করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে মোট ৬ ধাপে ৪ হাজার ২৭৯ ইউনিয়নে ভোট আয়োজন করে কমিশন। প্রথম ধাপে ৭৫২ ইউপির ভোট হয় ২২ মার্চ। এরপর ৩১ মার্চ ৭১০টি ইউপি, ২৩ এপ্রিল ৭১১, ৭ মে ৭২৮, ২৮ মে ৭১৪ এবং ৪ জুন ৬৬০টি ইউপিতে ভোট হয়। তবে এবারে ইউপি সংখ্যাও কিছু বেড়েছে। ইসি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে দেশে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। তবে ২০০ ইউপিতে মামলা জটিলতার কারণে নির্বাচন আটকে আছে। এ ছাড়া বছরের অন্যান্য সময়ও কিছু ইউপিতে সাধারণ নির্বাচন হওয়ায় ৪ হাজার ১০০ ইউপিতে ধাপে ধাপে করতে হবে। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে কমিশন। এবারে ৪ হাজার ১০০ ইউপির নির্বাচন হবে ধাপে ধাপে। আগামী বছরের জানুয়ারির শেষে বা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তফসিল দেওয়া শুরু হবে। নির্বাচন চলবে বছরজুড়েই। জানা গেছে, গতবারের মতো আসন্ন ইউপির ভোটও হবে দলীয় প্রতীকে। চেয়ারম্যান বা মেম্বার প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক নয়।