মামলা হলেই গ্রেফতার নয় : আইজিপি

স্টাফ রিপোর্টার: পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, পুলিশ এখনো ‘স্বতন্ত্র পুলিশ কমিশন’ গঠনের বিষয়ে অপেক্ষায় আছে। আমরা আশা করছি এটি গঠন করা হবে। সরকারকে আমরা আমাদের কথাগুলো জানাচ্ছি। এ ছাড়া নিরীহ কাউকে যেন গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা না হয়, সেই নির্দেশনা পুলিশের সব স্তরে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, মামলা হলেই গ্রেপ্তার করা যাবে না। তদন্তে যার বিরুদ্ধে দায়ভার পাওয়া যাবে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে গতকাল বিকালে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে আইজিপি এসব কথা বলেন। বাহারুল আলম বলেন, ‘আমরা খুব আশান্বিত ছিলাম, যেহেতু পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম পুলিশের জন্য জনগুরুত্বপূর্ণ কিছু সুপারিশ তারা দেবেন। পুলিশের পক্ষ থেকে আমরাও কিছু সাজেশন দিয়েছিলাম- একটি স্বতন্ত্র পুলিশ কমিশন গঠন করা, সরাসরি নির্বাহী নিয়ন্ত্রণে না রেখে পুলিশকে কিছু অটোনমি বা স্বায়ত্তশাসন দেওয়া ইত্যাদি। পুলিশের এই পরামর্শের ভিত্তিতে নীতিগতভাবে একমত হলেও পুলিশ সংস্কার কমিশন সেটা এলাবরেট করেনি, কোনো কাঠামো দেয়নি। পুলিশ সংস্কার কমিশন যেসব সুপারিশ করেছে সেগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করবে বলে মত দিয়েছে।’ আইজিপি বলেন, ‘কিন্তু আমাদের প্রধান পরামর্শ ছিল স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করা। যাতে করে পুলিশের স্বাতন্ত্র্য বজায় থাকে, কর্তৃপক্ষের চাপের মুখোমুখি হতে না হয়। এই জায়গায় পুলিশ অপেক্ষা করে আছে। আমরা আশা করছি এটা অ্যাড্রেস করা হবে। আমরা সরকারকে আমাদের কথাগুলো জানাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে বলেন এই সরকারের আমলে না হলে আর কখনো হবে না। সেজন্যই আমরা এখনই এগুলো করতে চাচ্ছি।’ মামলা দিয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রানির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, ‘মামলা মিথ্যা না, মামলা সত্যই। তবে আসামির সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া এই জায়গাটা আমরা বন্ধ করতে পারছি না। আইনেও এই সীমাবদ্ধতা আমাদের রয়েছে। ৫ আগস্টের পর দেখা গেছে, অপরাধ হয়তো করেছেন পাঁচজন কি দশজন, কিন্তু অসৎ উদ্দেশ্যে, অর্থ আদায়ের জন্য, হয়রানি করার জন্য, ভয় দেখিয়ে ৩০০ লোকের নামে মামলা দিয়ে দিয়েছে।’ পুলিশ প্রধান বলেন, ‘আমরা মামলা দিয়ে কাউকে হয়রানির জায়গাটা বন্ধ করতে চাই। এজন্য আমিও অনেক সময় থানায় ফোন দিয়ে কথা বলছি।’ আসামি করে হয়রানি করা হলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর অনুরোধ করেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, ‘দেশে টোটালি কোনো জঙ্গি নেই, এ রকম নিশ্চয়তা তো কেউ দিতে পারে না। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য দেশে অনেকগুলো অর্গানাইজেশন আছে। এর আগে অনেকেই জঙ্গিবাদের অভিযোগে অন্তরিন হয়েছেন, অনেকে কারাভোগ করেছেন। ২০০৫ এর দিকের জেএমবির ইতিহাস তো আমরা জানি। আমরা সজাগ আছি, যারা যারা এ ধরনের কর্মকা-ে যুক্ত। অন্তত এ নেটওয়ার্ক মোকাবিলা করার সক্ষমতা আমাদের আছে, এটা আমরা বলতে পারি। বর্তমানে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে দেশে কোনো ঝুঁকি নেই। বাংলাদেশ শান্তিপ্রিয় দেশ। এটি সব সময় বজায় থাকবে বলে মনে করি।’ এবারের পুলিশ সপ্তাহ সম্পর্কে আইজিপি বলেন, ‘অন্যান্য বছরের মতো এবারের পুলিশ সপ্তাহে আড়ম্বর বা আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না। এ বছর আমরা কার্যকর পুলিশ সপ্তাহ পালন করতে চাই। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পরিকল্পনা শুনে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। এ ছাড়া এবারের পুলিশ সপ্তাহে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা তাদের অভিমত জানাবেন।’ আইজিপি বলেন, আমরা সমগ্র দেশবাসীর মনে এই ভাবনাটা সঞ্চারিত করতে চাই। তারা যেন বলতে পারে বৈষম্যহীন বাংলাদেশের পুলিশ তাদের নিজেদের পুুলিশ। তিনি জানান, পুলিশ সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধান, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, পুলিশ সুপার এবং সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেবেন। আলোচনায় থাকবে আগামী দিনে আরও উন্নত পুলিশি সেবা নিশ্চিত করা, আসন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কৌশল এবং মাঠপর্যায়ের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সরাসরি পরিকল্পনা ও কর্মপন্থা শোনা হবে। আইজিপি বলেন, ‘দেশবাসীকে অনুরোধ, আমাদের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেন। তবে আমাদের কাছে যেন কোনো অন্যায় আবদার করা না হয়।’ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, সহকারী প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার ও পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর।