স্টাফ রিপোর্টার: পানি নিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় অল্প বৃষ্টিতে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে পাড়া মহল্লার মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে জনদুর্ভোগ বেড়ে গেছে কয়েকগুন। জলাবদ্ধতা নিরসনে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ নিতে ভুক্তভোগীরা দাবি জানিয়েছে। এদিকে মরসুমী বায়ুর কারণে বাংলাদেশে আগামী আরো পাঁচদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতরের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। পূর্বাভাস বলা হয়, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এছাড়া আজকের ঢাকার আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়, আকাশ আংশিক মেঘলা থেকে মেঘলা থাকতে পারে। বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে (১০-১৫) কি.মি/ঘণ্টা বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তীত থাকতে পারে। নদীবন্দর সমূহকে পূর্বাভাসে বলা হয়, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্রগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কি.মি. বেগে বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ১ নম্বর সর্তকতা সংকেত (পুনঃ) ১ নম্বর সর্তকতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
দামুড়হুদা অফিস জানিয়েছে, দামুড়হুদা উপজেলা সদরের দু’মহল্লায় আষাড়ের বৃষ্টির পানি জমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকার কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দামুড়হুদা উপজেলা সদরের ট-বাজার-বাজারপাড়া মহল্লাবাসীদের। এ সমস্যা প্রতি বর্ষা মরসুমের। কিন্তু সমস্যা সমাধানে কার্যকর তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষই। ছিটেফোঁটা বৃষ্টি হলেই হাটু পানি জমে যায় এ দু মহল্লায়। যা থেকে যায় কয়েকদিন। পুরো বর্ষা মরসুমটা পোহাতে হয় এই দুর্ভোগ দু-মহল্লাবাসীদের। বিশেষ করে দামুড়হুদা চৌরাস্তার মোড় হতে সদর ইউনিয়ন সংলগ্ন রাস্তার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ড্রেনটি দীর্ঘদিন সংস্কার না করার ফলে ড্রেনের উপরদিয়ে পানি গড়িয়ে এসে এ মহল্লায় জমাট বাঁধে। আর সেই পানি থেকে শুরু হয় জনদুর্ভোগ।
দামুড়হুদা ট-বাজার মহল্লার বাসিন্দা রাজু আহম্মেদ জানান, আমাদের এ মহল্লায় প্রায় ছোট-বড় ২০টি পরিবার বসবাস করে। আর এই বর্ষা মরসুমে আমাদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ করে স্কুল কলেজ চলাকালীন সময়ে আমাদের ছেলে মেয়েরা হাটু পানি মাড়িয়ে স্কুল-কলেজে যেতে চাই না। এছাড়াও বর্ষা মরসুম জুড়েই জমে থাকা পানি মাড়িয়েই প্রতিনিয়ত আমাদের বাজার সদায় সহ যাবতীয় কাজ কর্ম করতে হয়। সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষরা যদি গ্রামীণ টাওয়ারের পাশ দিয়ে ট-বাজারমুখী কাঁচা রাস্তাটি মাটি দিয়ে উচুঁ করে বেঁধে দিতো তাহলে হয়তো কিছুটা হলেও আমরা পরিত্যাণ পেতাম।
দামুড়হুদা ট-বাজার মহল্লার আর এক বাসিন্দা হায়দার আলী জানান, বর্ষা মরসুমে আমাদের প্রায় পানি বন্দি জীবনযাপন করতে হয়। বিশেষ করে ২-৩দিন পর পর বৃষ্টি হলে আমার বাড়িসহ প্রতিবেশীদের বাড়িতে পানি বেঁধে যায়। ছেলে-মেয়েরা স্কুল-কলেজে যেতে চাই না। এছাড়াও এ মহল্লাটি স্থানীয় কাঁচা বাজার সংলগ্ন হওয়ায় প্রায় দশমী গ্রামের হাজারখানের মানুষ পানি জমাট বাঁধার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়ে গেছে।
দামুড়হুদা বাজারপাড়ার বাসিন্দা প্রবীণ সাংবাদিক দ্বীন মোহাম্মদ জানান, আমার বাড়ির সামনে বৃষ্টির পানি জমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে প্রায় গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে বেশ কিছু পরিবার। প্রতি বর্ষা মরসুমেই এই দুর্ভোগ পোহাতে হয় এ মহল্লাবাসীদের।
দামুড়হুদা সদর ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক শরিফুল আলম মিল্টন বলেন, এই বর্ষা মরসুমে দামুড়হুদার বেশ কিছু পাড়া মহল্লায় বৃষ্টির পানি জমে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। আর পানি নিষ্কাশনে আমরা সদর ইউনিয়নের পক্ষ থেকে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকি। দ্রুত পানি নিষ্কাশনে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণসহ দামুড়হুদা সদর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন ড্রেনটি সংষ্কার করা হবে।
কার্পাসডাঙ্গা/ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, পানি নিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় অল্প বৃষ্টিতে দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা কাস্টমমোড়ের ডা. আবুল কাশেম সড়কে পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। জলাবন্ধতার কারণে এই রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলাচল করতে পারছে না মহল্লাবাসী। সামান্য বৃষ্টিতেই অন্যতম এই ব্যস্ত রাস্তায় বৃষ্টির পানিতে ভেসে যায়। তাই এই বর্ষা মরসুমে জলাবন্ধতায় দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে মহল্লাবাসীর জীবন। জলাবদ্ধতার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার দাবি তুলেছে এখানকার মানুষজন। এবিষয়ে ভুক্তভোগী সাইদুর রহমান জানান, অনেক দিনের সমস্যা এই জলাবদ্ধতা। সামান্য বৃষ্টি হলেই এখানে পানি আটকে থাকে দীর্ঘদিন। বৃষ্টি বেশি হলে পানি বাড়ির ভেতর উঠে পড়ে। এসময় পুরুষরা যেনতেন ভাবে চলাচল করলেও মা বোনেরা বাড়ি থেকে বের হতে পারে না। শুধু বর্ষা বলে না অন্য সময়ও বৃষ্টি হলে এখানে পানি দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকে। এবিষয়ে আবু সাঈদ জানান, বৃষ্টির পানি রাস্তায় জমে দুর্গন্ধের সৃষ্টি এবং মশার জন্ম হয়। উপায় না পেয়ে মহল্লাবাসীকে হাঁটুপানি পেরিয়েই যাতায়াত করতে হয়। একটু বেশি বৃষ্টি হলেই সড়ক পেরিয়ে দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানি বাসাবাড়িতে উঠে যায়। বিশেষ করে ছাত্রীরা স্কুল কলেজের যাবার সময় তাদের পোষাকও ভিজে যায়। স্থানীয়রা আরো জানান, রাস্তার পাশে বড় একটি গর্ত আছে এখানে পানি সবসময় আটকে থাকে। পুকুরের মালিকদের উদাসীনতার কারণে গর্ত ভরাট করে না। দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যা থাকলেও নিরসনের উদ্যোগ নেই।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, গত কয়েক দিনের মুসলধারের বৃষ্টিতে জীবননগর উপজেলা জুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে জীবননগর পৌর শহরের অবস্থা আরও নাজুক। নিচু এলাকায় বসবাসরত মানুষ জলাবদ্ধতার কারণে একপ্রকার প্রায় গৃহবন্দী। সহসা এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের কোনো আশ^াসও মেলেনি জনপ্রতিনিধিদের নিকট থেকে। ফলে আষাঢ় জুড়ে জলাবদ্ধতরা মধ্যেই বসবাস করতে হবে পৌরসভার নাগরিকদের।
সূত্র জানায়, গত কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে এ উপজেলায়। বিশেষ করে মঙ্গলবার গভীর রাতের ভারী বর্ষণের কারণে উপজেলা জুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জীবননগর পৌর শহরের অবস্থা আরও নাজুক। প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের নিচু এলাকা হাঁটু পানির নিচে। অনেকের বাড়ির ভেতরে পানি উঠে গেছে। ড্রেনগুলো উপচে পড়েছে। পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে। স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে মানুষ একপ্রকার গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে। জনদুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। সহসা এ অবস্থা থেকেই মুক্তিও মিলছে না।
জীবননগর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওয়াসিম রাজা জানান, পৌরসভার পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য সম্প্রতি নগর উন্নয়ন প্রকল্পের একটি টেন্ডার হয়ে গেছে। বর্ষার কারণে কাজ শুরু করতে পারছে না ঠিকাদার। কাজ শুরু হলেও পৌরসভার বেশকিছু এলাকায় ড্রেন নির্মিত হবে। তাতে কিছু এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন হবে। কাউন্সিলর ওয়াসিম রাজা জানান, তেঁতুলিয়াতে অবস্থিত বিজিবি ক্যাম্পের মিনি পুকুরের উভয় পাশে বাধ দেওয়া রয়েছে। যার কারণে পানি নিস্কাশিত হতে না পারায় ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ডের কৃষি জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে বিনষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তিনি ধান রক্ষার্থে অবিলম্বে বিজিবি ক্যাম্পের ওই মিনি পুকুরের দু পাশের নেট অপাসারণ করে পানি নিস্কাশনের দাবি জানান। এ ব্যাপারে পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে পৌরসভার ১৮ জন সুইপারের বেশীর ভাগই আসছে না। গতকাল মাত্র ১ জন এসেছে। সুইপার না আশার কারণে ড্রেন পরিস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমরা বিকল্প ব্যাবস্থা গ্রহণ করছি। পৌরসভার পক্ষ হতে জলাবদ্ধতা নিরোসনে দ্রুত পয়ঃনিষ্কাশনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।