পছন্দের আসন আছে মাত্র ৯০ হাজার : এমবিবিএসে ভর্তির আবেদন শুরু ২৮ ফেব্রুয়ারি
স্টাফ রিপোর্টার: এইচএসসি পাশের পরই শুরু বিশেষায়িত শিক্ষার স্তর। কেউ হতে চান চিকিৎসক, কেউ বা প্রকৌশলী। আবার বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় লেখাপড়া করে হতে চান বিজ্ঞানী। এর পাশাপাশি ইংরেজি, অর্থনীতি, আইনসহ কলা ও সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় আছে লেখাপড়ার সুযোগ। বড় মাওলানা হওয়ার জন্যও আলিম পাশের পর বিশেষায়িত শাখা বেছে নিতে হয়। এসবের জন্য স্নাতকে ভর্তি হতে যেতে হয় বিশ্ববিদ্যালয় বা উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। যেখানে এসএসসি ও এইচএসসিতে ভালো ফল করা শিক্ষার্থীরাই ভর্তির সুযোগ পায়। এই দুই স্তরে সর্বোচ্চ সাফল্য হিসাবে বিবেচিত হয় জিপিএ-৫। এবার এই জিপিএ-৫ পাওয়া লক্ষাধিক শিক্ষার্থীই পাবে না কাক্সিক্ষত বিষয়ে প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ। আর মধ্যম মানের শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করলে জিপিএ-৫ পেয়েও বাদ পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বাড়বে। ভর্তিযোগ্য আসন আর শিক্ষার্থীর পরিসংখ্যান থেকে এই তথ্য মিলেছে। ১৩ ফেব্রুয়ারি এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা গেছে, এইচএসসি, আলিম এবং এইচএসসিতে (ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা) জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন। তাদের মধ্যে এইচএসসিতে আছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৫২২ জন, আলিমে ৪ হাজার ৮৭২ এবং কারিগরিতে ৫ হাজার ৭৭৫ জন। আর জিপিএ-৫ এর নিচে কিন্তু ৩.৫ এর মধ্যে থাকা শিক্ষার্থীরা মধ্যম মানের হিসাবে বিবেচিত। এইচএসসি পাস করা এ ধরনের শিক্ষার্থী আছে ৮ লাখ ৯৯ হাজার ৬৫১ জন। অন্যদিকে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীরা সাধারণত প্রতিযোগিতা করে হলেও ভর্তি হতে চায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় প্রথমেই আসে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি মেডিকেল কলেজ এবং হাতেগোনা বড় ও পুরোনো আলিয়া মাদরাসা।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও এ ধরনের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে থাকে সরকারি ৩৯ বিশ্ববিদ্যালয়। এসব প্রতিষ্ঠানে সর্বমোট আসন আছে ৪৯ হাজার ২৫৫টি। দেশে ৯৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চালু থাকলেও হাতেগোনা ১০-১২টি প্রতিষ্ঠান ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে আকর্ষণীয়। যদিও এসব প্রতিষ্ঠানে সবার ভর্তির আর্থিক সঙ্গতি নেই, তবু এ ধরনের প্রতিষ্ঠান বিবেচনা করলে ২০ হাজার আসন যোগ করা যায়। এছাড়া মেডিকেল ও ডেন্টালে আসন আছে ১২ হাজার ও দুটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে (গাজীপুরের আইইউটি ও চট্টগ্রামে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন) ৪৪০টি। শিক্ষার্থীদের অনেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর বিশেষায়িত কারিগরি শিক্ষায় ভিড়ে যায়। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ৭২০, ছয়টি টেক্সটাইল কলেজে ৭২০, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি প্রতিষ্ঠানে ৫ হাজার ৬শ এবং ১৪টি মেরিন অ্যান্ড অ্যারোনটিকাল কলেজে ৬৫৪টি আসন আছে। যারা ইসলামি বিশেষজ্ঞ হতে চায় তাদের জন্য ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্সে ভর্তির জন্য প্রায় ৬ হাজার আসন আছে। সবমিলে আসন সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৯০ হাজার। যদি ধরে নেওয়া হয় যে, ভর্তি পরীক্ষায় সবগুলোতে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরাই সুযোগ পাবে। তাহলেও প্রায় ১ লাখই বাদ পড়বে। আর সাধারণত বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে এসএসসি ও এইচএসসি মিলে জিপিএ সাড়ে ৭ পাওয়া শিক্ষার্থীরাও আবেদনের সুযোগ পায়। জিপিএ-৫ না পাওয়া একটি অংশও ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করে। এই হিসাবটি গণনায় নিলে জিপিএ-৫ পাওয়াদের মধ্যে ভর্তির বাইরে থাকা শিক্ষার্থী আরও বাড়তে পারে।
ইউজিসি সদস্য এবং কুয়েটের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, শুধু জিপিএ-৫ নয়, এর চেয়ে কম গ্রেড পাওয়া শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। যারা জিপিএ-৫ পায় না, তাদের অনেকের বিষয়ভিত্তিক ভালো জ্ঞান থাকে। কেউ কেউ ফলের ঘাটতি পূরণে উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর ভর্তি পরীক্ষার জন্য অনেক লেখাপড়া করে। ফলে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের ছিটকে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তিনি আরও বলেন, যদিও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০ হাজারের মতো আসন আছে, তবে এবার এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
ইউজিসি তথ্য অনুসারে, উচ্চশিক্ষায় ভর্তির সবচেয়ে বড় সুযোগ নিয়ে এগিয়ে আসে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন কলেজে ডিগ্রি পাশ ও স্নাতকে ১০ লাখ ৯৩ লাখ ৮১১টি আসন আছে। এর মধ্যে অনার্সে আসন ৫ লাখ ৮৮ হাজার। তবে এসব কলেজের মধ্যে খুব কমসংখ্যকেরই আকর্ষণ আছে শিক্ষার্থীদের কাছে। তবে ঢাকার ৭ সরকারি কলেজে ২৩ হাজার ৩৩০ আসন আছে-এগুলোতেও অনেকে ভর্তির জন্য ভিড় করে। এছাড়া ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আরও ৩ হাজার এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ২৯০টি আসন আছে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা নির্ধারিত নেই। তবে সর্বশেষ ৭৮ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় গত বছর।
এ প্রসঙ্গে ১৩ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ভর্তির ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসনের কোনো সংকট নেই। সংকট পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, সবাইকে উচ্চশিক্ষা বা অনার্স করতে হবে কেন? পৃথিবীর কোথাও এ ধরনের চর্চা নেই।
মেডিকেলে ভর্তির আবেদন ২৮ ফেব্রুয়ারি : এদিকে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস ও ডেন্টালে ভর্তির আবেদন ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে নেয়া হবে। একটানা ১০ মার্চ পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এসএসসি ও এইচএসসি মিলে জিপিএ-৯ পাওয়া শিক্ষার্থীরা কেবল আবেদন করতে পারবে। আর জীববিদ্যায় পেতে হবে জিপিএ-৩.৫। স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক ডা. একেএম আহসান হাবীব জানান, এবার সরকারি মেডিকেলে ৪ হাজার ৩৫০ আসনে এমবিবিএসে এবং ৫৪৫টি আসনে বিডিএসে ভর্তি করা হবে। আর বেসরকারি মেডিকেলে এমবিবিএসে আসন আছে ৬ হাজার ৩৩৯টি আর বিডিএসে ১৪০৫টি।