স্টাফ রিপোর্টার: আজ তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লির ঢল এখন টঙ্গীর তুরাগ তীরে। তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ শুরায়ি নেজামের ছয় দিনব্যাপী ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা আজ শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলার আম বয়ানের মাধ্যমে ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হলেও শুক্রবার বাদ ফজর থেকে ইজতেমার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে। দুই ধাপে ছয় দিনব্যাপি বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব ২ ও ৫ ফেব্রুয়ারি পৃথকভাবে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। ইতিমধ্যে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দল বেধে জামাতভুক্ত মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে আসছেন। তারা ইজতেমা ময়দানের বিশাল প্যান্ডেলের জেলাওয়ারি বিভিন্ন খিত্তায় অবস্থান নিয়ে বয়ান শুনছেন। প্রসঙ্গত, মাওলানা সাদ অনুসারীদের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব আগামী ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি একই স্থানে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম পর্বের প্রথম ধাপে ৪১ জেলা: ৩১ জানুয়ারি শুরু হওয়া ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম ধাপে অংশগ্রহণ করছেন ৪১টি জেলার মুসল্লিরা। জেলাগুলো হলো: গাজীপুর, গাইবান্ধা, নাটোর, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, নড়াইল, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, নবাবগঞ্জ, নীলফামারী, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, যশোর, মাগুরা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, নেত্রকোনা, শেরপুর, ফরিদপুর, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বি. বাড়িয়া, খুলনা, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পিরোজপুর, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড় ও রাজবাড়ী জেলা। এছাড়া এ পর্বে ঢাকার একাংশ অংশ নিচ্ছেন। আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এ পর্ব শেষ হবে ২ ফেব্রুয়ারি। ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের সুবিধার্থে এবারও গাজীপুর জেলা প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস, জেলা সিভিল সার্জন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, ডেসকো, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সমন্বয় করে ইজতেমা ময়দানের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এছাড়া ইজতেমায় অংশগ্রহণকারী মুসল্লিদের ওজু, গোসলের জন্য সুপেয় খাবারের পানি সরবরাহ, রান্নার জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করে দেয়া হয়েছে। মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগও নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছ। টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া ইজতেমা ময়দানের পাশে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও সেবা সংস্থা বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার জন্য অর্ধশতাধিক ক্যাম্প স্থাপন করেছে। ইজতেমার প্রথম পর্বের মিডিয়া সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, বুধবার থেকে দেশি-বিদেশি মুসল্লিরা ময়দানে এসে ইজতেমায় যোগ দেয়া শুরু করেন। বিদেশি মেহমানরা ইজতেমা ময়দানের উত্তর-পশ্চিম পাশে তাঁবুতে এসে অবস্থান নিচ্ছেন। ইজতেমা ময়দানের পশ্চিম পাশে মুসল্লিদের পারাপারের জন্য তুরাগ নদের ওপর পাঁচটি স্থানে পন্টুন ব্রিজ স্থাপন করেছে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড এবং একটি পন্টুন ব্রিজ নির্মাণ করেছে বিআইডাব্লিউটিএ। আজ বৃহত্তম জুমার নামাজ : আজ দেশের সর্ববৃহৎ জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে ইজতেমা ময়দানে। এতে কয়েক লাখ মুসল্লি এক জামাতে শরিক হয়ে জুমার নামাজ আদায় করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন উপজেলা এবং আশপাশের জেলা থেকে বিপুলসংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসল্লি এ বৃহৎ জুমার নামাজে শরিক হবেন। বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদের ইমাম মাওলানা জুবায়ের জুমার নামাজের ইমামতি করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বয়ান করবেন যারা: বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব ভারতের হযরত মাওলানা ইব্রাহিম দেওলার আম বয়ানের মাধ্যমে ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়। শুক্রবার বাদ ফজর থেকে ইজতেমার বয়ান মঞ্চ থেকে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে বয়ান শুরু হবে। এতে বাদ ফজর বয়ান করবেন পাকিস্তানের হযরত মাওলানা জিয়াউল হক। এছাড়া সকাল ১০টায় বিভিন্ন খিত্তায় খিত্তায় তালিমের বয়ান হবে।
নিরাপত্তায় ৭ হাজার সদস্য ও ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী : গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান জানান, ইজতেমার নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকছে প্রায় ৭ হাজার পুলিশ ও র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। কয়েকটি স্তরের এ নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে ইজতেমা ঢেকে রাখা হবে। পুলিশ ও র্যাবের কন্ট্রোল রুম থেকে নিরাপত্তার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাও ব্যবহার করা হচ্ছে। নিরাপদ যাতায়াত ও সুষ্ঠুভাবে যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে প্রতিদিন ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া তাবলিগ জামায়াতের পক্ষ থেকে তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ দিয়েছে। এসব স্বেচ্ছাসেবীদের পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়েছে।
র্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে নিরাপত্তা জনিত কোনো ঝুঁকি নেই। দুই পক্ষের অন্তর্কোন্দল ছাড়া আপাতত অন্য কোনো ঝুঁকি আমরা দেখছি না। বৃহস্পতিবার দুপুরে টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দান পরিদর্শন শেষে র্যাবের কন্ট্রোল রুমে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন। র্যাব মহাপরিচালক আরো বলেন, ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তায় র্যাবের ফুট পেট্রোল, গাড়ি টহল, মোটরসাইকেল টহল, স্ট্রাইকিং ফোর্স, রিজার্ভ ফোর্স, ড্রোন পর্যবেক্ষক দল, ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় ১২৩ সিসি টিভি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে। এছাড়া নদী পথে র্যাবের স্পিডবোডের মাধ্যমে নৌ-টহল রয়েছে।