স্টাফ রিপোর্টার: সারাদেশে করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে জ্বরসর্দি, ঠাণ্ডা, গলাব্যথ্যা ও করোনার নানা উপসর্গ নিয়ে আসছেন রোগীরা। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে করোনা শনাক্তদের চিহ্নিত করতে চায় সংস্থাটি। কারা করোনায় আক্রান্ত, আর কারা সাধারণ রোগে-এটি নির্ধারণে করোনা টেস্ট বিনামূল্যে শুরুর চিন্তা করছে সরকার। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
এদিকে জুলাইয়ের ২২ তারিখের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো করোনা আপডেট অনুযায়ী দেশে করোনা আক্রান্ত সন্দেহভাজন রোগীর সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী ৪৯ হাজার ৬৬১ জন কোয়ারেন্টাইনে এবং ৩১ হাজার ৭৩২ জন আইসোলেশনে রয়েছেন। অপর এক হিসাবে দেখা যায়, এ পর্যন্ত মোট করোনা শনাক্ত হয়েছেন ২০ লাখ ৮৯৯ জন এবং সুস্থ হয়েছেন মোট ১৯ লাখ ৩৩ হাজার ২৫৯ জন। আর মারা গেছেন ২৯ হাজার ২৫৮ জন। মোট শনাক্ত থেকে মোট সুস্থ ও মোট মৃত্যু বাদ দিলে শনাক্ত রোগীর পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৮ হাজার ৩৮২ জন। অধিদপ্তরের করোনা আপডেট অনুযায়ী বেশির ভাগই করোনা আক্রান্ত রোগী ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের বলে জানা গেছে।
বর্তমানে দেশের এমন কোনো জেলা নেই যেখানে করোনার রোগী নেই। ধীরে ধীরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। প্রতি জেলায় কোভিড হাসপাতালে শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে। চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্য সেবাকর্মীও বাড়ানো হয়েছে। তবে যে পরিমাণ উপসর্গসহ রোগী আসছেন সেই পরিমাণ করোনা পরীক্ষা হচ্ছে না কিংবা রোগী ধরাও পড়ছে না। করোনা পরীক্ষা করাতে অনীহা অধিকাংশ মানুষের। যেখানে টিকা ফ্রি তে দেওয়া হচ্ছে, সেখানে কেন টাকা দিয়ে করোনা পরীক্ষা করতে হবে- এমন মন্তব্য রোগীদের বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক।
রাজধানীর মুগদা হাসপাতালের পরিচালক ডা. নিয়াতুজ্জামান বলেন, আমাদের এখানে সব কিছু প্রস্তুত আছে। রোগী বাড়লেই চিকিৎসা দেওয়া যাবে। সবচেয়ে বড় সমস্যা টেস্ট করাতে মানুষের অনীহা। টাকা দিয়ে টেস্ট কেন করতে হবে এমন প্রশ্ন রয়েছে অনেকের। আবার যারা উপসর্গ নিয়ে টেস্ট করছেন তাদের বেশির ভাগই নেগেটিভ আসছে। তারপরও শনাক্ত হওয়া জরুরি। যারা টেস্ট করছেন না তারা ভাইরাস বহনকরী হতে পারেন। এই অবস্থায় সবারই উচিত করোনা টেস্ট করা। ধরা না পড়লে তো আর সমস্যা হওয়ার কথা না।
করোনা টেস্ট ফ্রি করে দেওয়া উচিত কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে সবার উচিত উপসর্গ থাকলে আইসোলেশন করা। এর সঙ্গে টেস্ট করা। যাতে বোঝা যায় করোনা কি পরিমাণ ছড়িয়েছে। কিন্তু এত কম টেস্ট করা হলে, করোনা কি পরিমাণ ছড়িয়েছে তা বোঝা যাবে না।
দেশের বেশ কয়েকটি জেলার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘করোনা বেড়েছে কিনা বলা যাচ্ছে না। তবে উপসর্গসহ রোগীরা হাসপাতালে আসছেন। প্রাথমিকভাবে আমরা অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ওষুধ দিচ্ছি। অবস্থার অবনতি বা উন্নতির ওপর নির্ভর করে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। সমস্যা দেখা দিয়েছে করোনা টেস্ট করাতে আগ্রহ নেই মানুষের মধ্যে। কেউ করোনা টেস্ট করতে চান না।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন, ঢাকার বাইরে জ্বর-সর্দি, গলাব্যথা, ঠান্ডাসহ করোনার উপসর্গ আছে এমন রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার করোনা এই মুহূর্তে ঊর্ধ্বমুখী। এই অবস্থায় প্রচুর মানুষ ঢাকার বাইরে ঈদ করে ফিরেছেন। গত কয়েক দিনে ঢাকার বাইরে করোনা রোগী কিছুটা বৃদ্ধিও পেয়েছে বলেও শোনা যাচ্ছে। এত মানুষ একসঙ্গে যাতায়াত করা ও উৎসব পালন করলে করোনা তো বাড়তেই পারে। কিন্তু এখনো আমরা নিশ্চিত না যে সবাই করোনা রোগী। তারা সাধারণ ফ্লুতেও আক্রান্ত হতে পারে। গরমের সময় ঠা-া-জ্বর এমনিতেই হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, মানুষের মধ্যে করোনা টেস্ট করার আগ্রহ কিছুটা কম বলে শোনা গেছে। এটা বৃদ্ধি করতে হবে। যত বেশি করোনা টেস্ট হবে, তত ভালো বোঝা যাবে করোনা পরিস্থিতি। এই জন্য ইতোমধ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলছে। করোনা টেস্ট যাতে মানুষ করে সেটাই চেষ্টা করছি আমরা।
করোনা টেস্ট বিনামূল্যে করা হবে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যের মহাপরিচালক বলেন, এই বিষয়ে একার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলে এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি করোনা টেস্ট বৃদ্ধি করতে হয় তাহলে এটা ফ্রি করে দিতে হবে। আমরাও তেমন ধারণাই করছি। যদি আরো বৃদ্ধি পায় তাহলে এটা করা হতে পারে। এখন কম টেস্ট করা হচ্ছে বেশি ধরা পড়ছে। যদি অনেক টেস্ট করা হতো তাহলে ধরা কম পড়ত। আসল পরিস্থিতি কি সেটা জানতে হলে অবশ্যই করোনা টেস্ট আরো বাড়াতে হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, এতদিনেও করোনা টেস্ট ফ্রি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এখন তো ধীরে ধীরে করোনা আক্রান্ত কমছে মৃত্যু বাড়ছে। আরো আগেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন ছিল। কিছুটা করোনা নিয়ন্ত্রণে আসার পর আমরা যেভাবে প্রচার করেছি তা ঠিক হয়নি। করোনা টেস্ট ফ্রি করলে সংখ্যার দিক থেকে অনেক বেশি হবে আক্রান্তের হার। তাই দ্রুত এই সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। প্রকৃত করোনা রোগীর সংখ্যা বের করা খুব দরকার। এখন দেশ যেভাবে চলছে, তাতে করোনা বাড়লে দেশের সমস্যা হবে।
তিনি আরও বলেন, এখন যে পরিস্থিতি তাতে লকডাউন বা ওই ধরনের কোনো চিন্তাই করা যাবে না। তাই সবাইকে সতর্ক হতে হবে। করোনা টেস্ট ফ্রি করে দিলে মানুষ দ্রুত টেস্ট করাবে। রোগীর প্রকৃত সংখ্যা এর মাধ্যমেই জানা যাবে। তখন রোগীদের আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন করতে পারলেই হবে। আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষই ভ্যাকসিন নিয়েছেন। তাই বেশি চিন্তার কিছু নেই।