স্টাফ রিপোর্টার: আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রাজনৈতিক যোগ্যতা, দলীয় আনুগত্য, জনপ্রিয়তা, সক্ষমতা এবং ভালো ইমেজের প্রার্থীদেরই মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ। বিতর্কিত, অনুপ্রবেশকারী, দুর্নীতি কিংবা অপকর্মের সঙ্গে জড়িতরা স্থানীয় সরকারসহ কোনো পর্যায়ের নির্বাচনেই দলীয় মনোনয়ন পাবেন না। এছাড়া অতীতের বিদ্রোহীরা জনপ্রিয় হলেও তাদের মনোনয়ন দেয়া হবে না। আর দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তাকে বিজয়ী করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। গতকাল শুক্রবার গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের মুলতবি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী দলের এমন সিদ্ধান্তের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। বৈঠক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে শিক্ষাগত যোগ্যতাও আমলে নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বৃত্তান্তে শিক্ষাগত যোগ্যতা কতটুকু আছে সেটা খতিয়ে দেখছে দলটির সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ড। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে আওয়ামী লীগ সাধারণত রাজনৈতিক যোগ্যতা, দলীয় আনুগত্য, জনপ্রিয়তা, সক্ষমতা, অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ আছে কি না এসব গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে। তবে এবার শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। দ্বিতীয় ধাপের ৮৪৮টি পৌরসভার চেয়ারম্যান পদে দলের একক প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে শুক্রবারও দীর্ঘ বৈঠক করেছে আওয়ামী লীগের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ড। বিকাল ৪টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে মনোনয়ন বোর্ডের মুলতবি সভা শুরু হয়ে চলে রাত পৌনে ১১টা পর্যন্ত। দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে আরো তিনটি বিভাগের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হয়। এতে কোনো ইউনিয়ন পরিষদেই চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা মনোনয়ন পাননি। ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে আজ শনিবার বিকাল ৪টায় পুনরায় মুলতবি বৈঠকে বসবে। এরপর পাঁচ বিভাগের দলের চূড়ান্ত প্রার্থিতা তালিকা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবে আওয়ামী লীগ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মনোনয়ন বোর্ডের মুলতবি বৈঠকে বোর্ডের সদস্য আমির হোসেন আমু, শেখ আবুল হাসনাত আব্দুল, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, বোর্ডের সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত এবং মাঠ জরিপের জনপ্রিয়তা মিলিয়ে এগিয়ে থাকা প্রার্থীদের ভাগ্যে জুটছে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন। দ্বিতীয় দিনের বৈঠকেও নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের নারী নেত্রীরা দলের মনোনয়ন পেয়েছেন।
জানা গেছে, আগের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে থাকলে তাকে মনোনয়ন না দেয়ার যে নীতিগত অবস্থান আওয়ামী লীগের রয়েছে, গত দুই দিনের বৈঠকে প্রার্থী চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে তা কঠোরভাবে দেখা হয়েছে। গত দুই দিনে অতীতে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া একজনকেও আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয়নি। ভবিষ্যতেও দেয়া হবে না বলেও বৈঠকে বোর্ডের সদস্যরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন।
দ্বিতীয় ধাপের ৮৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ৪ হাজার ৪৫৮ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। মনোনয়ন বোর্ডের প্রথম দিনের বৈঠকে সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের পাশাপাশি দুটি উপজেলা পরিষদ, ১০ পৌরসভা এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ইউনিয়ন পরিষদের দলের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে তা প্রকাশ করা হয়।