আগামী নির্বাচন দল পুনর্গঠন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ নানা ইস্যুতে আসবে পরামর্শ
স্টাফ রিপোর্টার: নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে আন্দোলনের বিকল্প ভাবছে না বিএনপি। নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনকে সামনে রেখে এ আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে চায় দলটির হাইকমান্ড। নিরপেক্ষ ইসি গঠনে সোচ্চার হবে দলটি। তবে তাদের মূল টার্গেট নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন। এ আন্দোলনের কৌশল চূড়ান্তে নানা উদ্যোগ নিয়েছে হাইকমান্ড। এরই অংশ হিসাবে আজ থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠকে বসছেন বিএনপি।
দলটির কয়েকজন নীতিনির্ধারক প্রায় একই ধরনের তথ্য দিয়ে বলেন, আজকের বৈঠকের মূল এজেন্ডা আন্দোলন। একটি কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলার কর্মকৌশল নিয়ে নেতাদের মত নেয়া হবে। এর পাশাপাশি আগামী নির্বাচন, দল পুনর্গঠন, আগামী জাতীয় কাউন্সিল, চেয়ারপারসনের মুক্তি, জোটের রাজনীতি, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলাসহ সাম্প্রতিক নানা ইস্যুও উঠে আসবে বৈঠকে। এরপর নির্বাহী কমিটির সদস্য, ৮১টি সাংগঠনিক জেলার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও হবে বৈঠক। নেতাদের মতামত নিয়ে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার একটি খসড়া তৈরি করা হবে। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের সঙ্গেও একই প্রক্রিয়ায় বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সবার মতামতের পরই চূড়ান্ত করা হবে আন্দোলনের কৌশল।
এদিকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের দাবিতে এখন থেকেই সোচ্চার হচ্ছে বিএনপি। সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে সবাইকে একই সুরে কথা বলার জন্য ইতোমধ্যে নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এ দাবিতে জোরালো বক্তব্য রাখছেন।
শনিবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। আজ মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে তিনটায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে শুরু হবে এ সভা। চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। আজ চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক হবে। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ৭৩ ও ভাইস চেয়ারম্যান রয়েছেন ৩৫ জন। এদের মধ্যে কয়েকজন মারা গেছেন ও দলও ছেড়েছেন। বর্তমানে বেশ কয়েকজন অসুস্থ। এসব কারণে আজকের বৈঠকে ৭০ জনের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও। তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন।
এদিকে আজকের সভা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সোমবার বিকালে প্রাক-প্রস্তুতি বৈঠক করেছে বিএনপি। চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন ও বেলাল আহমেদ। আজকের সভায় কে কোথায় বসবেন, বৈঠক কতক্ষণ চলবে, কারা কী দায়িত্ব পালন করবেন তা চূড়ান্ত করা হয় ওই বৈঠকে। গুরুত্বপূর্ণ এ সভা যাতে সফলভাবে শেষ হয় সেজন্য সবার সহযোগিতা চান বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপি সূত্র জানায়, আজকের বৈঠককে কেন্দ্র করে শঙ্কায় রয়েছে দলটির নেতারা। শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে সভা করা যাবে কিনা-তা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করছেন। এক ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, সরকার আজকের সভায় বাগড়া দিতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে সভা বানচালের উদ্দেশ্যে নেতাদের হয়রানি করা হতে পারে। তবে দলের আরেক নেতা বলেন, এমন আশঙ্কা থেকেই আমরা কোনো হোটেল বা অন্য কোথাও এ সভার আয়োজন করিনি। চেয়ারপারসনের দলীয় কার্যালয়ে সভা করার সিদ্ধান্ত নিই।
জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, দলের হাইকমান্ড তিন দিনব্যাপী ধারাবাহিক সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমাদের সব প্রস্তুতি শেষ। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। অসুস্থতার কারণে কয়েকজন আসতে পারবেন না। আশা করি সরকার আমাদের দলীয় সভা বানচালের চেষ্টা করবে না।
স্থায়ী কমিটির গত কয়েকটি বৈঠকে সব নেতাই একমত হন, দেশে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন প্রমাণ করে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। এই অবস্থায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে করণীয় ঠিক করতে হবে। সেজন্য দলের সবার মতামত নেওয়ার প্রয়োজন। সবার মতের ভিত্তিতে কর্মকৌশল চূড়ান্ত করলে তারাও উৎসাহ পাবে।
আজকের বৈঠকের এজেন্ডা প্রসঙ্গে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে নেতারা মত দেবেন। তবে আমাদের মূল এজেন্ডা আন্দোলন। নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের দাবি আদায় করাকেই আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। কারণ নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ না হলে আমরা ভোটের জন্য যতই প্রস্তুতি নিই তাতে লাভ হবে না। তাছাড়া নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ হলেও দলীয় সরকারের অধীনে ভোট হলে সেটা সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন নয়-এটাই এখন আমাদের মূল দাবি। সেই দাবি সরকার আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করবে সেটা মনে করি না। এজন্য প্রয়োজন আন্দোলন। আমরা এখন সেই পথেই হাঁটছি।
তিনি বলেন, সভায় আন্দোলন কৌশল ছাড়াও আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি, দল পুনর্গঠন, চেয়ারপারসনের মুক্তি, জোটের রাজনীতিসহ নানা বিষয়ে নেতাদের মত আসবে। হাইকমান্ড সবার মত গুরুত্বের সঙ্গে নেবেন বলে আশা করি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া বলেন, আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। শুধু আমরা নয়, দেশের বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ এমনকি সাধারণ ভোটারদের প্রত্যাশাও তাই। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এটা সবাই বিশ্বাস করে। জনগণ ভোটের মাধ্যমে পছন্দের প্রার্থীকে জনপ্রতিনিধি করতে উন্মুখ হয়ে আছে। গণতান্ত্রিক দল হিসাবে জনগণের সেই প্রত্যাশা পূরণ করা বিএনপির দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
তিনি বলেন, সবকিছু ঠিক করে আন্দোলনে নামা যায় না। আন্দোলন শুরু হলে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। দল পুনর্গঠন শেষ করে আন্দোলনে নামতে হবে এটার কোনো মানে নেই। আন্দোলনের পাশাপাশি পুনর্গঠনও চলবে। আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হলে জনগণও আমাদের সঙ্গে রাজপথে আসবে বলে বিশ্বাস করি। তাই আন্দোলনের সূত্রপাতটা বিএনপিকেই করতে হবে। সরকারের কর্মকা-ে অনেকেই ক্ষুব্ধ। আমরা নামলে অন্যরা যার যার অবস্থান থেকে রাজপথে নামবে। সবার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনেই এ সরকারকে বিদায় করা সম্ভব।