স্টাফ রিপোর্টার: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, আমরা রাজনীতির মধ্যে ঢুকতে চাই না। আইন, কানুন ও বিধি-বিধান নিয়েই থাকবো। আমরা ফ্রি, ফেয়ার গেম (নির্বাচন) উপহার দিতে চাই, যেখানে সকল প্লেয়ার (রাজনৈতিক দল) অবাধে খেলতে পারে। আমরা এজন্য একটি মাঠ তৈরি করতে চাই। প্রধান উপদেষ্টার দেয়া টাইমফ্রেমের মধ্যে আমরা (নির্বাচনের) প্রস্তুতি নিচ্ছি। গতকাল রোববার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি এ কথা বলেন। আগামী জুন-জুলাইয়ের মধ্যে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল নির্বাচন দাবি করেছে। ঐ দাবির বিষয়ে ইসির ভাবনা জানতে চাইলে সিইসি এ মন্তব্য করেন। এর আগে সিইসি জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি-ইউএনডিপির সহায়তা হিসেবে ল্যাপটপ, স্ক্যানার, ক্যামেরাসহ অন্যান্য উপকরণ গ্রহণ করেন। ঐ অনুষ্ঠানে ইউএনডিপির আবাসিক প্রধান স্টিফেন লিলার সিইসির কাছে ১৭৫টি ল্যাপটপ, ২০০টি স্ক্যানার, ৪ হাজার ৩০০টি ব্যাগ হস্তান্তর করেন। এসব জিনিসপত্র ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে ব্যবহার করার কথা রয়েছে। সেখানে স্টিফেন লিলার বলেন, এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে। জাতীয় নির্বাচনেও ইউএনডিপি সহায়তা দেবে। নির্বাচন কমিশনকে ইউএনডিপির সহায়তার বিষয়ে সিইসি বলেন, ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার ইউএনডিপি। তারা গত ডিসেম্বর মাসে আমার সঙ্গে দেখা করলে ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় সহায়তার জন্য বলেছিলাম। এত দ্রুত তারা উপকরণ দিয়ে সহায়তা করায় আমি অভিভূত। ল্যাপটপ, স্ক্যানার, ক্যামেরা দিয়ে তারা সহায়তা করল, যা আজ শুরু হলো। আশাকরি, সামনের জাতীয় নির্বাচনেও তাদের সহায়তা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ ২০ তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে। তাই কয়েক শ ল্যাপটপ, স্ক্যানার, ক্যামেরা দিচ্ছে। ভবিষ্যতে এগুলো আরো আসতেই থাকবে ইনশাআল্লাহ। পুরো নিবন্ধন কার্যক্রমে আশাকরি তারা সহায়তা দেবে। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনে সহায়তার জন্য তাদের নিড এসেসমেন্ট টিম আসছে। সেটা থেকে আমরা বুঝতে পারছি, তারা একটা সহায়তা দেবে। এ অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনারগণ ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানান, সংস্কার আংশিক হলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। আর সংস্কার পুরোদমে হলে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেন তিনি। যদিও বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। আজ থেকে বাড়ি বাড়ি ভোটার তালিকা হালনাগাদ : তিন বছর পর বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ শুরু করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ সোমবার এ কার্যক্রম আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। এবার যাদের জন্ম ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে তাদের তথ্যসংগ্রহ করা হবে। ইসির নির্বাচন সহায়তা শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মো. নাসির উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হলে ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু ছবি তুলে নিবন্ধন সম্পন্ন করার কাজ। ১১ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ করা। পুরো কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত থাকবে ৬৫ হাজার লোকবল। তারা এক দশমিক ৫২ শতাংশ নাগরিককে ভোটার তালিকায় যুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করবেন। এদিকে ২০২২ সালে নেয়া তিন বছরের তথ্যের শেষ ধাপের হালনাগাদ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এতে ১৮ লাখের মতো ভোটার মার্চে যোগ হতে পারে। সর্বশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী, দেশে ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন। নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ৪০ থেকে ৪৫ লাখ ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। তালিকায় দ্বৈত ভোটার যেন না থাকে, মৃত ভোটার যেন বাদ যায় এবং নতুনদের অন্তর্ভুক্ত করে নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়নের জন্যই বাড়ি বাড়ি তথ্য হালনাগাদ করছি। ২০০৭-২০০৮ সালে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর এর আগে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে ছয় বার। ২০০৯-২০১০ সাল, ২০১২-২০১৩ সাল, ২০১৫-২০১৬ সাল, ২০১৭-২০১৮ সাল, ২০১৯-২০২০ ও ২০২২-২০২৩ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে ইসি। ভোটার তালিকা হালনাগাদে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য যেসব কাগজপত্র তথ্য সংগ্রহকারীদের দিতে হবে: ক) ১৭ ডিজিটের অনলাইন জন্মসনদের কপি খ) জাতীয়তা/নাগরিকত্ব সনদের কপি গ) নিকট আত্মীয়ের এনআইডির ফটোকপি (বাবা-মা, ভাই-বোন প্রভৃতি) ঘ) এসএসসি/দাখিল/সমমান, অষ্টম শ্রেণি পাশের সনদের কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ঙ) ইউটিলিটি বিলের কপি (বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি/চৌকিদারি রশিদের ফটোকপি)। ভোটার হওয়ার সময় যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে: ক) নিজের নাম, বাবা-মায়ের নাম, জন্ম নিবন্ধন বা শিক্ষা সনদের সাথে হুবহু মিলিয়ে লিখতে হবে খ) জন্ম তারিখ অবশ্যই জন্ম নিবন্ধন বা শিক্ষা সনদ অনুযায়ী হতে হবে গ) স্থায়ী ঠিকানা লেখার ক্ষেত্রে অবশ্যই ভোটারের প্রকৃত স্থায়ী ঠিকানা লিখতে হবে ঘ) কোনো অবস্থাতেই দ্বৈত বা দুই বার ভোটার হওয়া যাবে না।