পেঁয়াজ-আদা-রসুন ও ব্রয়লার মুরগির মূল্যও চড়া : ক্রেতার কপালে চিন্তার ভাঁজ
স্টাফ রিপোর্টার: আমনের নতুন চাল বাজারে এলেও স্বস্তি নেই। সপ্তাহের ব্যবধানে চাল কেজিপ্রতি ২ থেকে ৫ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোক্তার অস্বস্তি বাড়ছে। পাশাপাশি নতুন আলু বাজারে এলেও দাম কমেনি। বরং কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়ে সর্বোচ্চ ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সঙ্গে নতুন করে বেড়েছে পেঁয়াজ, আদা-রসুনের দাম। পাশাপাশি ব্রয়লার মুরগি কিনতে ক্রেতার কেজিপ্রতি ১০ টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে। বৃহস্পতিবার একাধিক খুচরা বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বাজারে পণ্যের দাম এখনো অসহনীয়। কিছু পণ্যের দাম নিয়ে ক্রেতার চিন্তা বেড়েছে। দেখা যাচ্ছে মরসুমেও আলুর দাম হু হু করে বাড়ছে। নতুন পেঁয়াজ বাজারে এলেও ক্রেতারা কিনতে বেশি টাকা খরচ করছেন। এমনভাবে চলতে থাকলে অসাধুরা ভোক্তার পকেট কাটতে আরও বেশি সুযোগ পাবে। তিনি বলেন, বাজারে তদারকি সংস্থাগুলো নামমাত্র অভিযান পরিচালনা করছে। এতে ক্রেতার লাভের লাভ কিছু হচ্ছে না। তাই সামনে নতুন বছর। ফলে এখন থেকেই বাজার ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজাতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের নামের তালিকা প্রকাশ করে তাদের অনিয়মের জন্য কঠোর শাস্তি দিতে হবে। এতে একটু হলেও ক্রেতা সাধারণের স্বস্তি ফিরবে।
এদিকে জুন থেকেই হিমাগার মালিকদের কারসাজিতে অস্থির আলুর বাজার। সে সময় প্রতি কেজি আলু খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ৫৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। পরে তদারকি জোরদার করলে কেজি ৩৫ টাকায় নেমে আসে। তবে তদারকি শিথিল করা হলে আগস্ট শেষে ফের বাড়তে থাকে দাম। আগস্টের শুরুতে কেজি ৪০ টাকা বিক্রি হলেও শেষে ৫০ টাকা বিক্রি হয়। সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ ৬৫ টাকায় বিক্রি হলে ১৪ সেপ্টেম্বর প্রতি কেজি খুচরা মূল্য ৩৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তারপরও দাম না কমলে অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট না ভাঙতে পেরে আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। আমদানি করা আলু দেশে এলেও দাম কমেনি। এছাড়া নতুন আলু বাজারে এলেও এখনো বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৭৫-৮০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগেও ৬০ টাকা ছিল।
অন্যদিকে সবাই তাকিয়ে ছিল আমনের দিকে। ধারণা ছিল আমন উঠলেই ধান-চালের দাম কমবে। কিন্তু না। বরং সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ২-৫ টাকা বেড়েছে। ফলে ক্রেতার বাড়তি দরেই চাল কিনে খেতে হচ্ছে। খুচরা বাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা। যা ৭ দিন আগেও ৭০ টাকা ছিল। পাশাপাশি মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকা। যা ৭ দিন আগেও ৪৮-৫০ টাকা ছিল।
বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা হাবিবউল্লাহ বলেন, বাজারে ক্রেতার কখনও স্বস্তি নেই। বিক্রেতারা কয়েকদিন পরপর একটি একটি করে পণ্যের দাম বাড়ায়। ভরা মরসুমে আলুর দাম ৮০ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে। সঙ্গে চালের দামও বাড়তে শুরু করেছে। সঙ্গে পেঁয়াজের পর আদা-রসুনের দামও বাড়ছে হু হু করে। কিন্তু এগুলো যে দেখবে তারা যেন নিশ্চুপ। তদারকি সংস্থা লোক দেখানো তদারকির জন্য আমরা ক্রেতারা অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে ঠকছি।
বাজারের বিক্রেতা মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, নতুন আলু বাজারে ভরপুর। সঙ্গে পুরাতন আলুও বাজারে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু দাম বেশি। বিক্রেতা হয়েও আমি এমনটা আমি কখনও দেখিনি। তিনি বলেন, আলু আমদানি বন্ধ করায় হিমাগার মালিকরা ফের কারসাজি শুরু করেছে। দাম বাড়িয়ে গুদাম থেকে কম করে আলু সরবরাহ হচ্ছে। যে কারণে পাইকারি ও খুচরা বাজারে আলুর দাম বেশি।
আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এখন ভরা আমন মরসুম। নতুন ধানের চালও বাজারে আসতে শুরু করেছে। কিন্তু যেখানে দাম কমার কথা উলটো মিলারদের কারসাজিতে মূল্য বাড়ছে। মিল পর্যায় থেকে দাম বাড়ানোর কারণে পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়েছে। ফলে ক্রেতার বাড়তি দরেই কিনতে হচ্ছে।
খুচরা বাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা। যা ৭দিন আগেও ১৪০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকা। যা ৭ দিন আগে ২৪০ টাকা ছিল। কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৬০ ও আমদানি করা রসুন ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, রাজধানীতে চারটি টিম বাজার তদারকি করেছে। সঙ্গে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অনিয়ম পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। অভিযান চলমান থাকবে।