স্টাফ রিপোর্টার: দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো রাজধানী ঢাকা ও খুলনায়। গতকাল মঙ্গলবার সেখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে দেশের অধিকাংশ অঞ্চলের ওপর দিয়ে যে মৃদু তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা অপরিবর্তিত থাকবে। একই সঙ্গে সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গতকাল মঙ্গলবার কুষ্টিয়ার কুমারখালী বৃষ্টির সময় বজ্রপাতে এক স্কুলছাত্র ও দামুড়হুদার জয়রামপুরে ও কার্পাসডাঙ্গায় বজ্রপাতে দুটি গরুর মৃত্যু হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ঢাকাতে মঙ্গলবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো। চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলেসিয়াস। সর্বনি¤œ ছিলো ২৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ফেনী, মাদারীপুর, চাঁদপুর, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, পটুয়াখালী ও সাতক্ষীরা অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়েও মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। মঙ্গলবার দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ঢাকা ও খুলনায় ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে, ৪১ মিলিমিটার। মঙ্গলবার দেশের অধিকাংশ জায়গায় বৃষ্টিপাত হয়নি। বুধবার (১০ জুন) সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। রাজধানীতে বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১৫ কিলোমিটার।
আবহাওয়াবিদ মো. রুহুল কুদ্দুস জানান, তাপপ্রবাহ অব্যহত থাকতে পারে। তবে আগামী সপ্তাহে বৃষ্টিপাত বাড়বে। সে সময় বর্ষা দেশের মধ্যভাগে ওঠে আসবে। তাপপ্রবাহের সঙ্গে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে। তিনি আরও জানান, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি ঘণীভূত হতে পারে। এই অবস্থায় পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। অন্যদিকে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু (বর্ষা) কক্সবাজার উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু আরও অগ্রসর হওয়ার জন্য আবহাওয়াগত অবস্থা অনুকূলে রয়েছে।
দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরসমূহের জন্য সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। নদ নদী সংক্রান্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়খালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে পশ্চিম/উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কি.মি. বেগে বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরকে ১ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস সূত্র মতে, মৌসুমী বায়ুর কারণে আজ বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে বিক্ষিপ্তভাবে মাঝারী ধরণের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
দামুড়হুদা অফিস জানিয়েছে, দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর মাঠপাড়ায় ও কার্পাসডাঙ্গায় পৃথক দুটি গরুর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে একজন গরুর মালিক। মঙ্গলবার বিকালে এই ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জয়রামপুর মাঠপাড়ার মৃত পিয়ার আলীর ছেলে বাবুল (৫০) গ্রামের গেটের মাঠে গরু চরাচ্ছিল। বিকেল ৪টার দিকে হালকা বৃষ্টির সাথে বজ্রপাত ঘটলে বাবুলের একটি গাভী গরুর মৃত্যু হয় ও বাবুল আহত হয়। এসময় মাঠে থাকা লোকজন তাকে উদ্ধার করে রেল স্টেশন একলায় এক চিকিৎসকের নিকট প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ী পাঠায়। অপরদিকে কার্পাসডাঙ্গা ভূমিহীন পাড়ার শ্রী সাধনের একটি গাভী গরু কার্পাসডাঙ্গা গালর্স স্কুলের গেটের নিকটের একটি আম গাছে বাঁধা ছিলো বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পাশের একটি কাঠাল গাছে বজ্রবাত ঘটলে শ্রী সাধনের একটি গাভী গরু মারা যায়। গরু দু’টির আনুমানিক মূল্য প্রায় দুই লক্ষ টাকা।
কার্পাসডাঙ্গা/ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা গ্রামে বজ্রপাতে কৃষকের একটি গরু মারা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানান, কার্পাসডাঙ্গা গ্রামের পূর্বপাড়ার মৃত শ্রী শুশাধরের ছেলে স্বাধীনের একটি গরু কার্পাসডাঙ্গা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ভেতর বটগাছের নিচে বাঁধা ছিলো। এসময় বটগাছের ওপর বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই মারা যায় গরুটি। গরুটির আনুমানিক মূল্য প্রায় ৯০ হাজার টাকা হবে বলে জানান স্থানীয়রা। বজ্রপাতে গরুটির মৃত্যু হবার কারণে এই করোনা ভাইরাসের সময় অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে কৃষক স্বাধীন।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় বজ্রপাতে সোহাগ (১২) নামের এক স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার (৯ জুন) বিকাল ৪ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সোহাগ উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের বাঁশআড়া গ্রামের মকছেদ আলী লস্করের ছেলে। সে বাঁশআড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ছিলো। কুমারখালী থানার পুলিশ ও নন্দলালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নওশের আলী বিশ্বাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পুলিশ জানায়, স্কুলছাত্র সোহাগ বিকেলে নিজ গ্রামের মাঠে ঘুড়ি উড়াচ্ছিলো। এসময় হঠাৎ ঝড়ো হাওয়ার সাথে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টির এক পর্যায়ে প্রচ- শব্দে বজ্রপাত ঘটে। এসময় সে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। কুমারখালী থানার ওসি মুজিবর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বজ্রপাতে নিহত সোহাগের মরদেহ উদ্ধারের পর তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরআগে গত ৪ জুন কুমারখালীর চর সাদীপুর ইউনিয়নের ঘোষপাড়া গ্রামের কৃষক ফারুক ম-ল ও নন্দলালপুর ইউনিয়নের সদরপুর মধ্যপাড়া গ্রামের কৃষক শফি বিশ্বাস বজ্রপাতের ঘটনায় নিহত হন।