স্টাফ রিপোর্টার: এবার বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। নানা জটিলতার কারণে আগামী বছরের শুরুতে বই দেয়া নিয়ে এ শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বই ছাপানোর দায়িত্ব পালন করা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)-এর। একজন কর্মকর্তা বলেন, নভেম্বরে বইয়ের হিসাব রাখতে ব্যস্ত থাকি আমরা। কোন বই কতোটা হলো কোন এলাকায় গেল। কিন্তু এখনো বইয়ের তালিকার শিটই দেখি নাই। বই উৎসবের বাকি মাত্র ৯ সপ্তাহ। এখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বই ছাপানোই শুরু করেনি প্রেসগুলো। সাধারণত নভেম্বর মাসে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রথম স্পটের বই চলে যায়। কিন্তু এ বছরে প্রেসের কাজই শেষ হয়নি। নানা কারণে দেরি হচ্ছে বই ছাপার কাজ। প্রথমত, পা-ুলিপি পৌঁছুতে দেরি ও পা-ুলিপিতে ভুল। বিদ্যুৎ সংকট। কাগজ সংকট ও টেন্ডার প্রদানে দেরি। ২০২৩ সালের প্রথম দিনে প্রাথমিক থেকে শুরু করে মাধ্যমিক পর্যন্ত ৩৫ কোটি বই বিনামূল্যে দেয়ার কথা সরকারের। প্রতি বছরের আগস্ট মাসে শুরু হয় বই ছাপার কাজ। কিন্তু এনসিটিবি দুই মাস পরে কার্যাদেশ দেয়ার কারণে অক্টোবরে শুরু হয় বই ছাপার কাজ। আবার নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে ২০২৩ সাল থেকে শুরু হতে যাওয়া প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বইয়ে ব্যাপক পরিমাণ ভুল থাকায় তা সংশোধন করার জন্য ফিরিয়ে নেয়া হয়।
মুদ্রণ সমিতির একজন কর্মকর্তা বলেন, এবারের বই উৎসব করতে হবে কয়েকটি করে বই দিয়ে। একসঙ্গে পুরো বইয়ের সেট কোনো ভাবেই দেয়া সম্ভব না। তিনি বলেন, কাজ পেতে জটিলতার পাশাপাশি দুটো কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে বই ছাপানোর কাজ। আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণ কাগজ পাচ্ছি না। যেখানে আমাদের তিন টন কাগজের প্রয়োজন সেখানে আমরা পেয়েছি এক থেকে দেড় টন। আগে এক টন কাগজের মূল্য ছিল ৯০ থেকে ৯৫ হাজার টাকা। এখন মূল্য এক লাখ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা।
আগামী বছরের জন্য প্রায় ৩৪ কোটি ৬১ লাখ ৬৩ হাজার পাঠ্যবই ছাপানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এগুলোর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক স্তরের ৯ কোটি ৯ লাখ ৫৩ হাজার এবং মাধ্যমিক স্তরের জন্য মোট ২৪ কোটি ৬৩ লাখ ১০ হাজার পাঠ্যবই ছাপানো হবে। প্রেস মালিক আমিনুর রহমান বলেন, বইয়ের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে আমরা অনেক প্রেসকে কাজ দিতে পারছি না। কাগজে পাঁচ শতাংশ উজ্জ্বলতা আনার জন্য ১০০ শতাংশ পাল্প দিতে হয়। এই উজ্জ্বলতা শূন্যতে নামিয়ে আনা হলে ৬০ জিএসএম’র কাগজে কাজ করার মৌখিক প্রস্তাব এনসিটিবিতে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটি গ্রহণ না হওয়ায় আমরা অনেক প্রেসে কাজ করাতে পারছি না। আব্দুর রহিম নামে একজন মুদ্রাকর বলেন, বই ছাপানোর মেশিনে এক ধরনের আঠা প্রয়োজন হয়। আগে এক বক্স আঠার দাম ছিল ১৮০০ টাকা। কিন্তু এখন লাগছে ২৫০০ থেকে ২৮০০ টাকা। তবুও মিলছে না পর্যাপ্ত পরিমাণ।
বই উৎসবের বিষয়ে জানতে চাইলে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বিপণন সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির নতুন বই হচ্ছে। এ বইগুলোতে অসংখ্য ভুল ছিল। সে কারণে নতুন করে আসতে সময় লেগেছে। এনসিটিবি দরপত্রের কাজটিই এ বছর অনেক দেরিতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে বিশ্বব্যাপী কাগজের সংকটও তীব্র হয়েছে। আবার আছে লোডশেডিং সমস্যা। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে বছরের শুরুতে সব বই দেয়ার মতো আশার আলো দেখছি না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, যত সংকটই হোক না কেন আমরা শিক্ষার্থীদের হাতে প্রথম দিনে বই তুলে দেবোই। তিনি আরও বলেন, আমরা সাধারণত আগস্ট মাসে বই ছাপানোর কাজ শুরু করি। এর পরের বছর থেকে জানুয়ারি মাসেই বই ছাপানোর পরিকল্পনা করছি।
বই উৎসব সময়মতো করার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গত সপ্তাহে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমরা আশা করি, ইনশাআল্লাহ ১ তারিখের মধ্যে নতুন বই দিতে পারবো। সেটা প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থীদের জন্য দিতে পারবো। মন্ত্রী বলেন, আমাদের একটা বড় চ্যালেঞ্জ আছে কাগজের। বর্তমানে বিশ্ববাজারে কাগজের দাম বেড়েছে। এ ছাড়াও নানান কিছু রয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া যেটা, সেটাও নানান কারণে বিলম্বিত হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে এখন বিদ্যুতেরও সমস্যা, আমরা আশা করছি সামনে লোডশেডিং কমে যাবে। গত দুই বছরে করোনার মধ্যেও আমরা যথাসময়ে বই দিয়েছি। এবারো সময়মতো নতুন বই দিতে পারবো ইনশাআল্লাহ।