চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত
স্টাফ রিপোর্টার: ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলায় নারী-শিশুসহ নিহত ও আহত ফিলিস্তিনিদের জন্য রাজধানীসহ সারা দেশের মসজিদগুলোতে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার মসজিদে-মসজিদে জুমার নামাজ শেষে এ দোয়ার আয়োজন করা হয়। মোনাজাতে ইসরাইলের বর্বর সেনাদের হাতে নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের জন্য আল্লাহর রহমত কামনা করা হয়। সেই সঙ্গে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও আহতদের দ্রুত সুস্থতার জন্য দোয়া করা হয়। এদিকে, গতকাল শুক্রবার স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনের ওপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
গাজায় ইসরাইলের হামলায় শুক্রবার পর্যন্ত চার হাজার ১৩৭ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে শিশুই হলো ১ হাজার ৬৬১ জন। এদিকে ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বাহিনীর হামলা ও ফিলিস্তিনি নাগরিক হতাহতের ঘটনায় শনিবার ১ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গাজাসহ ফিলিস্তিনজুড়ে ইসরাইলি বাহিনীর সাম্প্রতিক বর্বরোচিত হামলায় ফিলিস্তিনি নাগরিকদের মৃত্যুতে এ রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হবে। শনিবার দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব ভবন এবং বিদেশের বাংলাদেশ মিশনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে বলেও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়। রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে বাদ জুমা ফিলিস্তিনিদের জন্য বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ রুহুল আমিন। মোনাজাতে গাজাসহ ফিলিস্তিনের অন্যান্য স্থানে নিহত নাগরিকদের রুহের মাগফিরাত কামনা করা হয়। এ সময় খতিবসহ মসজিদের মুসলি¬রা কান্নায় ভেঙে পড়েন। সবাই চোখের পানিতে নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের জন্য আল্লাহর রহমত কামনা করেন। যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে বাইতুল আমান (চানবানু) জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি আজিজুল ইসলাম কাসেমী জুমার খুতবার আগে সবাইকে রাতে দুই রাকাত নামাজ পড়ে ফিলিস্তিনিদের জন্য দোয়া করার অনুরোধ জানান। জুমার ফরজ নামাজ শেষে মোনাজাতে তিনি ফিলিস্তিনিদের জন্য দোয়া করেন। এ সময় খতিবসহ মসজিদের মুসলি¬রা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপর থেকে গাজায় নির্বিচারে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। এতে প্রাণ হারিয়েছেন নারী-শিশুসহ কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি। ইসরাইলি বিমান হামলা থেকে হাসপাতালও রক্ষা পাচ্ছে না।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, গাজাসহ ফিলিস্তিনে মুর্হুর মূহু হামলা চালিয়ে নির্বিচারে মুসলিমদের হত্যা করার প্রতিবাদে ও যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিয়ে জীবননগরে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে। বিক্ষোভ মিছিল শেষে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবাদ সমাবেশ হতে বিক্ষোভকারী ফিলিস্তিনের পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্তসহ দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন। অবিলম্বে নিরিহ ফিলিস্তিনে হত্যা বন্ধ করা না হলে ইসরাইলের নাম নিশানা পৃথিবী থেকে মুছে ফেলা হবে। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা এ বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। জুম্মার নাম শেষে জীবননগর হাইস্কুলপাড়া জামে মসজিদ হতে এ বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এসময় বাজার বড় মসজিদ, জীবননগর বাসস্ট্যান্ড মসজিদ, হাসপাতাল মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদের মুসল্লীরা বিক্ষোভ সহকারে যোগ দেন। আহমদুল হক তুহিন, সাংবাদিক মাজেদুর রহমান লিটন, ওয়াহেদুল ইসলাম খোকন, নূর আলম ও শফিকুল ইসলাম শফির নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি শহর প্রদক্ষিণ করে। বিক্ষোভ মিছিল শেষে বাসস্ট্যান্ডে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদের খতিব হাসাদাহ কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাও. মো. আক্তারুজ্জামান, বড় মসজিদের খতিব মাও. আবুজর গিফারী, মাও. ফিরোজ হোসেন, মাও. জসিম উদ্দিন ও মাও. ইয়াছির আরাফাত প্রমূখ।
দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উপর ইজরায়েলীদের বর্বরোচিত হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে ধর্মপ্রান মুসলিম তৌহিদী জনতা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। গতকাল শুক্রবার বাদ জুম্মা দামুড়হুদায় এ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে হাজারো তৌহিদী মুসলিম জনতা অংশগ্রহণ করেন। দামুড়হুদা উপজেলা ওলামা পরিষদ ও সম্বলিত তৌহিদী জনতার আয়োজনে দামুড়হুদা উপজেলা শহরের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ মিছিল শেষে দামুড়হুদা উপজেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌরাস্তার মোড়ে সমাবেশে বক্তারা বলেন, অনতিবিলম্বে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের উপর যুদ্ধ বন্ধ ঘোষণা করা, বাংলাদেশে সকল ইসরায়েলি পণ্য বর্জন করা, বাংলাদেশের সাথে ইসরায়েলি সকল কূটনীতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা, বাংলাদেশ থেকে সৈন্য প্রেরণ করে ফিলিস্তিনির পক্ষে যুদ্ধ করার পরিবেশ তৈরী করা, বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে ফিলিস্তানে খাদ্য ও ওষুধসহ সকল প্রকার প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া মুসলমানদের প্রথম কেবলা ‘বায়তুল মুকাদ্দাস/মসজিদুল আকসা’ রক্ষায় দেশের সকল মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তারা।
আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নিরীহ ফিলিস্তিনী মুসলমানদের ওপর ইসরাইলের বর্বরাচিত মানবতা বিরোধী সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বাদ জুম্মা ওলামা পরিষদ আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়ন শাখার উদ্যোগে স্থানীয় বাজারের দোয়েল চত্বরে এ প্রতিবাদ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। জুম্মার নামাজের পর বিভিন্ন মসজিদ থেকে খন্ড খন্ড মিছিল সমাবেশ স্থল এসে যোগ দেয়। এখানে থেকে আগ্রাসী ইসরাইল বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল বাজারের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে দোয়েল চত্বরে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়ন ওলামা পরিষদের সভাপতি মাও. জুবায়ের খানের সভাপতিত্বে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে কোরআন তেলাওয়াত করেন ওলামা পরিষদের ইউনিয়ন কমিটির প্রচার সম্পাদক ক্বারী আব্দুল হাই। বক্তব্য রাখেন আন্দুলবাড়িয়া আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মাও. সাইফুজ্জামান, বাজার জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. আবু মুসা, ওলামা পরিষদ আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়ন শাখার কোষাধ্যক্ষ মাও. আব্দুল্লাহ, মাও. খন্দকার মনিরুজ্জামান, ডা. রফিকুল ইসলাম, মোল্লা মোতাহারুল ইসলাম চঞ্চল ও ইউপি সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ওলামা পরিষদ আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়ন শাখার সাধারণ সম্পাদক মাও. তরিকুল ইসলাম। বিক্ষোভ-সমাবেশ শেষে মুসলিম উম্মার কল্যাণ কামনায় দোয়া ও মোনাজত পরিচালনা করেন আন্দুলবাড়িয়া বাইতুল মানার জামে মসজিদের খতিব সোলাইমান নদভী। সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ ও ইসরাইলের পণ্য বয়কট করার আহ্বান জানান।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর বর্বরোচিত বোমা হামলায় নিহত নারী ও শিশু ফিলিস্তিনিদের আত্মার শান্তি ও আহতদের সুস্থতা কামনা করে মেহেরপুরের মসজিদে মসজিদে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন মসজিদে বাদ জুম্মায় এ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। মেহেরপুর জেলার দেশের বিভিন্ন মসজিদে মোনাজাতে ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মুসলমানদের জন্য দোয়া করেন মুসল্লিরা। মোনাজাতে ইসরায়েলের হাতে নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের জন্য আল্লাহর রহমত কামনা করা হয়। এসময় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও আহতদের দ্রুত সুস্থতার জন্যও দোয়া করেন মুসল্লিরা। এদিকে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এমপি মেহেরপুর জেলা মডেল মসজিদে পবিত্র জুম্মার নামাজ শেষে দোয়া অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তিনি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন ও হামলার নিন্দা জানান।
গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নিরীহ ফিলিস্তিনীদের উপর ইসরাইল কর্তৃক বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। শুক্রবার বাদ জুম্মা মেহেরপুরের গাংনীতে নাগরিক সমাজের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। জুম্মার নামাজের শেষে গাংনীর শহীদ রেজাউল চত্বরে মানব বন্ধন করা হয়। গাংনী বাজার মসজিদের ঈমাম রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন এমপি সাহিদুজ্জামান খোকন, উপজেলা চেয়ারম্যান এমএ খালেক, হাজি মহসিন আলীসহ বিভিন্ন মসজিদের ঈমামগণ। একইভাবে মুজিবনগরেও মিছিল ও মানববন্ধন করা হয়েছে। এ সময় ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে স্লোগানে দেয়া হয়। বক্তারা ইজরাইলি পণ্য বর্জনের আহ্বান জানান। পরে সেখানে ফিলিস্তিনে নিহত শহীদদের আত্মার মাগফেরাতে দোয়া পরিচালনা করা হয়। কর্মসূচিতে বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করে।