স্টাফ রিপোর্টার: শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। তাই অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে ফল ও ইফতার পণ্য কিনতে বাজারে ভিড় করেছেন ভোক্তারা। কিন্তু কোথাও যেন স্বস্তির নিশ্বাস নেই। সরবরাহ ঠিক থাকলেও রোজা ঘিরে দুই মাস আগেই ছোলা, মসুর ডাল, চিনি, ভোজ্যতেল, মাছ-মাংসসহ একাধিক নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। ইতোমধ্যে বাজারে সব ধরনের ফল ও ইফতার পণ্য বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু আয় বাড়েনি বেশিরভাগ সাধারণ ক্রেতার। ফলে বাজারে গিয়ে তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। উচ্চমূল্যের বাজারে যারা ফল কিনতে পারছেন না তাদের দীর্ঘশ্বাস ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই।
এদিকে, পবিত্র রমজান মাসে পণ্যে ভেজাল রোধ, মান ও দাম নিয়ন্ত্রণে পাশাপাশি সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত চলানো হবে। জাতীয় মান নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবে। বন্ধের দিনও চলবে এ কার্যক্রম। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বুধবার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা এবং বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক আব্দুস সাত্তার প্রমুখ। তিনি বলেন, রমজানে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ এবং পণ্যের ওজন ও পরিমাপে কারচুপি রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম আরও জোরদার করা হচ্ছে। এছাড়া জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবে বিএসটিআই। একই সঙ্গে র্যাব ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। এছাড়াও মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন মিডিয়ায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশসহ লিফলেট বিতরণ করা হবে। এসব কার্যক্রম পরিচালনার সময় অনৈতিকভাবে ব্যবসায়ীরা যাতে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে না পারেন, তা মনিটরিং করবে বিএসটিআই।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলার সংকট, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্কারোপের কারণে এমনিতেই ফলের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। এর মধ্যে রোজা ঘিরে বাড়তি মুনাফা করার ছক তৈরি করছে ফল বিক্রেতা সিন্ডিকেট। এতে পরিবারের জন্য যারা নিয়মিত ফল কিনতেন, তারাও বাজারের তালিকা থেকে পুষ্টিকর পণ্যটি বাদ দিচ্ছেন। সঙ্গে ইফতার তৈরির সব ধরনের সামগ্রীর দামও বাড়ানো হয়েছে। যার কারণে এবার ইফতারেও ভোক্তার ব্যয় সামলাতে হিমশিম খেতে হবে।
পণ্য কিনতে আসা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, যেভাবে পণ্যের দাম বেড়েছে তাতে দোকান থেকে ইফতারের ভাজাপোড়া কিনতে পারবো না। তাই বাসায় তৈরির জন্য উপকরণ কিনতে এসে দেখি এগুলোর দামও হু হু করে বেড়ে গেছে। অথচ দোকানে পণ্যের কোনো সংকট নেই। কিন্তু বিক্রেতারা বাড়তি মুনাফা করতে ইচ্ছে করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। অথচ অন্যান্য দেশে এসব পণ্যের দাম ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়েছে। অথচ আমরা কোন দেশে আছি। যেখানে এসবের বালাই নেই। আসলে দেখার যেন কেউ নেই।
জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বাজারে এক প্রকারের বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। বিশ্ব পরিস্থিতির জন্য বাজারে এমনিতেই সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তি। এর মধ্যে অসাধু বিক্রেতাদের কারসাজিতে পণ্যের দাম আরও বেড়েছে। কিন্তু দৃষ্টান্তমূলক কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। তাই নিত্যপণ্যের বাজারসহ ফল ও ইফতার সামগ্রীর মূল্য সহনীয় করতে এই সেক্টরেও তদারকির আওতায় আনতে হবে।