স্টাফ রিপোর্টার: আজ সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ-বিএনপি। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানো এবং যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফা দাবিতে ইউনিয়নে গণপদযাত্রা করবে বিএনপি। দলটির বিভিন্ন সংগঠনের কেন্দ্রীয়, মহানগর, জেলা-উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডের সর্বস্তরের নেতাকর্মী-সমর্থকরা এই পদযাত্রায় অংশ নেবেন। সরকারবিরোধী দল ও জোটগুলো যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কর্মসূচি পালন করবে। অন্যদিকে শান্তি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা দাবি করেছেন-আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নিয়মিত কর্মসূচির অংশ হিসেবেই শান্তি সমাবেশ করবেন তারা। একইদিনে দেশের বৃহত্তম দুটি দলের কর্মসূচি ঘিরে জনমনে নানা আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ও শোডাউন ঘিরে তৃণমূলে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন অনেকে। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, তাদের কর্মসূচি পূর্বঘোষিত। বিএনপি’র কর্মসূচিকে বানচাল করতে আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছে। নেতাকর্মীরা পদযাত্রায় যেন অংশ নিতে না পারে সেজন্য পুলিশি অভিযান চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে বিএনপি’র নেতাকর্মী গ্রেপ্তার ও পদযাত্রায় অংশ না নিতে হুমকি-ধমকি দেয়ার অভিযোগ করেন শীর্ষ নেতারা। এর আগে জেলা, ও বিভাগীয় পর্যায়ে যুগপৎ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। সেসব কর্মসূচির বিপরীতে আওয়ামী লীগও পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে সরব ছিল। এবার বিএনপি ইউনিয়ন পর্যায়ে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিলে আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এটি বিএনপি’র কর্মসূচির পাল্টা কোনো কর্মসূচি নয়। নিয়মিত কর্মসূচির অংশ হিসেবেই এই কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। গত ৪ঠা ফেব্রুয়ারি রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশ থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর পরেই আওয়ামী লীগ একইদিনে ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসাবে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা আজ। তৃণমূলে এ কর্মসূচির মধ্য দিয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হচ্ছে বলে নেতারা জানিয়েছেন। এ লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোটগুলো। হাইকমান্ডের নির্দেশে নিজ নিজ এলাকায় উপস্থিত থেকে পদযাত্রায় অংশ নেবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। কর্মসূচি সফল করতে কেন্দ্র থেকে নানা দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। অতীতের মতো শান্তিপূর্ণভাবে পদযাত্রা করার বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি মূল ব্যানারে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ছাড়া অন্য কারও ছবি ব্যবহার করা যাবে না। তৃণমূলে পাঠানো এক আদেশে বিষয়টি জরুরিভাবে উল্লেখ করে বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে বলা হয়েছে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
‘গ্যাস, বিদ্যুৎ, চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা বাস্তবায়নের’ দাবিতে হবে এই পদযাত্রা। কর্মসূচিকে ঘিরে নেতাকর্মীদের নতুন করে গ্রেফতার শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতারা। দলটির দাবি, গত তিন দিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় তৃণমূলে নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে গ্রেফতার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘১০ দফা ও জনগণের জীবিকার বিভিন্ন সমস্যা এবং সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট, জনদুর্ভোগের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা গণআন্দোলন নস্যাৎ করতে সরকার দমনপীড়ন অব্যাহত রেখেছে। নেতাকর্মীদের গ্রেফতার-হয়রানি করে আন্দোলনের কর্মসূচি বানচাল করতে চায় সরকার। শনিবার (আজ) দেশব্যাপী ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা ও রোববার (আগামীকাল) ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির পদযাত্রার কর্মসূচিকে প- করতে নতুন করে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার শুরু করেছে। তবে হামলা-মামলা-গ্রেফতার করে আন্দোলন দমানো যাবে না।’
একাধিক নেতা জানান, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপেদষ্টা, সম্পাদক, সহসম্পাদক ও নির্বাহী কমিটির সদস্যদের নিজ নিজ এলাকায় উপস্থিত থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রায় অংশ নিতে বলা হয়েছে। যাতে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তাদের পেয়ে আরও উজ্জীবিত হন। এজন্য অধিকাংশ নেতা ইতোমধ্যে নিজ এলাকায় অবস্থান করছেন। এছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশের নামে পালটা কর্মসূচি দিয়েছে। এজন্য বিএনপি নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার পাশাপাশি কোনো ধরনের বিবাদে না গিয়ে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি সফল করতে বলা হয়েছে। সব ইউনিয়নে পদযাত্রা হয়েছে কিনা কেন্দ্রীয় দপ্তর তা পর্যবেক্ষণ করবে। এদিকে দপ্তর সূত্র জানায়, বিএনপির নির্বাহী কমিটি, সাবেক সংসদ সদস্য, সংসদ সদস্য প্রার্থী, জেলা ও মহানগর নেতাদেরও কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে তাদের নিজ নিজ এলাকায় উপস্থিত থেকে কর্মসূচিতে অংশ নিতে বলা হয়েছে।
এদিকে পদযাত্রা কর্মসূচি সফলে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে তৃণমূল নেতারা। লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ‘প্রতিটি ইউনিয়নে একযোগে একই সময়ে পদযাত্রা করার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। খুব শান্তিপূর্ণভাবে ব্যাপক সমাগমের মধ্য দিয়েই এ কর্মসূচি পালিত হবে। আমার বিশ্বাস এই কর্মসূচিতে জনগণ ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত হবে। কারণ এ আন্দোলন এখন বিএনপির আন্দোলন নয়। জনগণের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। গণমানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, ‘ইউনিয়ন পর্যায়ের এ কর্মসূচি নিয়ে প্রান্তিক নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। এটিই আনুষ্ঠানিকভাবে সরকার পতনের লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি। এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন, গ্রাম পর্যায়ের নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন পর একটা সাংগঠনিক কর্মকা- পেয়েছে। এতে তারা উল্লসিত। আশা করা যায়, এ কর্মসূচিতে সর্বাধিক নেতাকর্মীর অংশগ্রহণ থাকবে।’
জানা গেছে, আগামীকাল রোববার পূর্বঘোষিত ঢাকা মহানগর উত্তরের পদযাত্রা থেকে আবারও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা রয়েছে। সেক্ষেত্রে উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে আবারও পদযাত্রা কর্মসূচি দেয়া হতে পারে।
এদিকে সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ বিভিন্ন দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা দল ও জোটের আজকের কর্মসূচি অনেকটা ঢাকামুখী। কারণ হিসাবে নেতারা জানান, বিএনপির মতো তাদের ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মসূচি করার মতো সাংগঠনিক অবস্থা নেই। তাই তারা রাজধানীতে কর্মসূচি পালন করবেন। কেউ কেউ আজ পালন না করে আগামীকাল রাজধানীতে পদযাত্রা পালনেরও ঘোষণা দিয়েছে।
জানা গেছে, যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে মতিঝিল শাপলা চত্বর পর্যন্ত পদযাত্রা করবে সাতদলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। বিকাল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর নতুনবাজারের (বাঁশতলা) প্রধান সড়ক থেকে পদযাত্রা বের করবে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি। পদযাত্রাটি বাড্ডা লিংক রোড মোড়ে গিয়ে শেষ হবে। এছাড়া ১২ দলের জাতীয়তাবাদী সমমনা কয়েকটি জেলার ইউনিয়নে পদযাত্রা করবে। এ জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, সিলেট, নড়াইল, নোয়াখালীসহ জোটের শীর্ষ নেতাদের নিজ এলাকার ইউনিয়নে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করা হবে। গণফোরাম ও পিপলস পার্টি, চার দলের বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য ও ১৫ সংগঠনের সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোটের পদযাত্রা কর্মসূচি পালনের কথা রয়েছে। এদিকে আজ না করে আগামীকাল বিকাল ৩টায় বিজয়নগর থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাব পর্যন্ত পদযাত্রা করবে ১২ দলীয় জোট।
ফের যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াত: গত বছরের ডিসেম্বরে সরকার পতনের লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোট। প্রথম কর্মসূচি গণমিছিল যুগপৎভাবে পালন করে জামায়াতে ইসলামীও। পরে দলটির আমিরকে গ্রেফতার ও গণমিছিলে হামলা ও গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়ে কোনো মন্তব্য না করার কারণে বিএনপির সঙ্গে মনোমালিন্য হয় জামায়াতের। এরপর গণঅবস্থান, বিক্ষোভ সমাবেশসহ কয়েকটি কর্মসূচিতে জামায়াতকে মাঠে দেখা যায়নি। তবে আজ দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে দলটি। ‘শিক্ষা কারিকুলাম থেকে ইসলামবিরোধী অধ্যায় প্রত্যাহার, বিদ্যুতের বর্ধিত মূল্য কমানো এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে’ এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এর অংশ হিসাবে রাজধানীতে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটসহ আরও এক স্থান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করার কথা রয়েছে। একইদিন এ কর্মসূচি পালন যুগপৎ আন্দোলনেরই অংশ বলে জানা গেছে।
‘বিশৃঙ্খলার চেষ্টা প্রতিহত করে শান্তি বজায় রাখতে’ ইউনিয়ন পর্যায়ে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ আজ। এতে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগ দেবেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও। ইতোমধ্যে জেলা ভাগ করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সমাবেশে অংশ নেওয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দেশের ৪০ জেলায় দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে ৫৩ কেন্দ্রীয় নেতাকে। যেসব জেলায় কেন্দ্রীয় নেতারা যাবেন না সেখানে জেলা নেতাদের পাশাপাশি স্থানীয় সংসদ-সদস্যদের অংশগ্রহণে ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে রাজধানী ঢাকায় প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডে সতর্ক অবস্থানে থাকবেন ক্ষমতাসীন দল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ‘বিএনপি-জামায়াত ফাঁকা মাঠ পেলে আবারও নৈরাজ্য ও সহিংসতা করতে পারে। ফলে জনগণের শান্তি এবং জানমালের নিরাপত্তায় তারা মাঠে থাকবেন। এ ধরনের কর্মসূচি নির্বাচন পর্যন্ত চলবে। তবে এগুলো তাদের পালটাপালটি কর্মসূচি নয় বলেও দাবি আওয়ামী লীগ নেতাদের।
শুক্রবার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথসভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকব। ভালোর জন্য প্রস্তুতি নেব, খারাপের জন্য সতর্ক থাকব। বিএনপির সঙ্গে পালটাপালটি নয়, আমাদের নিজস্ব কর্মসূচি আছে। তিনি বলেন, বিএনপি এক বছর ধরে প্রকাশ্যে মাঠে এসেছে, বিশেষ করে ডিসেম্বর থেকে, তারা অনেক বড় বড় কথা বলেছে। আমরা সন্ত্রাসের আশঙ্কায় শান্তি সমাবেশ করছি। যতক্ষণ বিএনপি আন্দোলন করবে, আমরা শান্তি সমাবেশ কর্মসূচি পালন করব।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার মানুষের জন্য কী করেছে এবং বিএনপি-জামায়াত রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকতে মানুষের সঙ্গে কী আচরণ করেছে সেগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরবো। পাশাপাশি আন্দোলনের নামে কেউ যেনো সহিংসতা করতে না পারে, জনগণের যানমালের ক্ষতি করতে না পারে, দেশে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক থাকব। তিনি আরও বলেন, আমরা কারও কর্মসূচিতে বাধা দেব না। কাউকে আঘাত করব না। কিন্তু কেউ যদি জনগণের উপর আঘাত করে, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সেটা প্রতিহতের চেষ্টা করব।
শুক্রবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের বছরব্যাপী সাংগঠনিক কর্মসূচির অংশ হিসাবে শনিবার ‘বিএনপি-জামায়াত অশুভ শক্তির সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও ষড়যন্ত্রমূলক অপরাজনীতির বিরুদ্ধে’ সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে ‘শান্তি সমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হবে। দলের কেন্দ্রীয়, জেলা, মহানগর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা এবং জনপ্রতিনিধিরা এ সমাবেশে অংশগ্রহণ করবেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক ও দেশবাসীকে শান্তি সমাবেশে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে এ উপলক্ষ্যে আজ দেশের ৪০ জেলায় যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের ৫৩ কেন্দ্রীয় নেতা।
ইউনিয়ন পর্যায়ে সমাবেশ ঘিরে জেলায় জেলায় আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। প্রতিটি থানা-ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট কেএম হোসেন আলী হাসান বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সিরাজগঞ্জের ৮২টি ইউনিয়নেও বিএনপি-জামায়াতের দেশব্যাপী নৈরাজ্য-সন্ত্রাসের প্রতিবাদে আমরা শান্তি সমাবেশ করব। এ জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনের এমপিরা নিজ নিজ এলাকায় শান্তি সমাবেশ করবেন। জেলার সাবেক নেতৃবৃন্দকে বিভিন্ন থানার ইউনিয়নে দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়া হয়েছে। শহরে মূল সমাবেশে ১৫টি ওয়ার্ডের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, আমরা শান্তি সমাবেশ করব, কিন্তু বিএনপি-জামায়াত যদি কোনো ধরনের নৈরাজ্য করে তাহলে প্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি প্রতিহত করা হবে। কোনো ধরনের সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সহ্য করা হবে না।’
জেলা নেতাদের পাশাপাশি দলীয় সংসদ-সদস্যরাও নিজ নিজ এলাকায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার সংসদ অধিবেশন শেষ হওয়ার পরই অনেকে এলাকায় চলে গেছেন। কেউ কেউ শুক্রবারও গেছেন। এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি ও শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জগলুল হায়দার বলেন, আমার নির্বাচনি এলাকায় ২০টি ইউনিয়ন রয়েছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক শান্তি সমাবেশ সফল করতে প্রতিটি ইউনিয়নে ব্যাপকভাবে গণসংযোগ করেছেন স্থানীয় নেতারা। প্রতিটি ইউনিয়নে ব্যাপক সমাগম হবে। প্রতিটি ইউনিয়নে নেতাকর্মীরা রাজপথ দখলে রাখবে। গত ১৪ বছরে আওয়ামী লীগের আমলে যে উন্নয়ন হয়েছে, সেজন্য এলাকাবাসী বঙ্গবন্ধুকন্যার প্রতি কৃতজ্ঞ। আজকের উপস্থিতির মধ্যে দিয়ে শ্যামনগর-কালিগঞ্জের মানুষ আবারও প্রমাণ করবে, তারা জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নে বিশ্বাসী, শান্তিতে বিশ্বাসী।
এদিকে সারা দেশের মতো আজ রাজধানীতেও সতর্ক অবস্থানে থাকবে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, প্রতিটি থানা ওয়ার্ডে আমাদের নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থানে থাকবেন। অন্যদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ জানান, শনিবার বিকেল ৩টায় খিলগাঁও জোরপুকুড় মাঠে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।